ত্যাগ নয়, সংশোধনে এগিয়ে আসুন
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:৫৪:৫৮ রাত
আরিফ এবং নাদিম। দুই বন্ধু, ছোটবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠা।দারুণ সখ্যতা দুজনার মাঝে।স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে শহরে আসে, নামকরা একটি কলেজে ভর্তি হয়। শহরে আত্মীয় স্বজন না থাকায় দুইজন থাকার মত একটি চিলেকোঠা ভাড়া নেয়। পড়াশোনা, ঘুরাঘুরি, ফান মাস্তি আর আড্ডাতে বেশ চলে যায় দিন। ইদানিং আরিফ কে আলাদা লাগে। হঠাত রেগে যায়, অসিস্নু হয়ে উঠে।নাদিম অবাক বিস্ময়ে ভাবে, এ আগের সুবোদ ছেলে আরিফ নয়! ধমক দিয়ে কথা বলা, ঘনঘন রাগ করে বসা নাদিমের অসহ্য লাগে, প্রথমে কথা কাটাকাটি, মনোমালিন্য, একপর্যায়ে হাতাহাতির উপক্রম হলে নাদিম বাসা ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে দুটি পথ দুই দিকে যায় বেকে।
প্রেম ঘটিত কারণেই আরিফের অদ্ভুত আচরণ। কিছুদিন প্রেম অতঃপর লাপাত্তা! মোবাইল ক্রস কানেকশনে মেয়েলি কন্ঠ শোনেই উতসুক হয়ে “ যদি কিছু মনে না করেন, আপনার পরিচয়টা জানতে পারি”? হুম। কাক্তলীয়ভাবে দুজনের বসবাস একি শহরে! তারপর একটু একটু করে কথা, রাত জাগা, ভাললাগা, প্রেম নিবেদন, সপ্তাহ খানিকের মধ্যে ডেটিং। একদিন মেয়েটি আরিফকে বলে, “চল, আমার কাজিনের অফিস সামনেই, দেখা করে আসি”। পরিচয় করিয়ে দেয়, “ভাইয়া, আমার খুব ভাল বন্ধু”। তারপর আরিফের উদ্দেশ্যে কথিত ভাইয়ার বয়ান শুরু, “আমরা কিছু পন্য সেল করি, যা দৈনন্দিন জীবনে অত্যাবশ্যকীয়। এইখানে সদস্য হতে নামে মাত্র কিছু ফি দিতে হয়, একবার সদস্য হয়ে গেলে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবেনা, যত বেশি পন্য সেল করতে পারবেন, তত টাকা আসতেই থাকবে”। আরিফ কেও জয়েন করতে বলে। পরে জানাবে বলে বের হয়ে আসে।
তারপর ধীরে ধীরে মেয়েটির ব্রেইন ওয়াশের স্বীকার হয়ে রাতারারাতি উক্ত কোম্পানীর মাধ্যমে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন বিভোর হয়ে ১০হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেয়। পরের দিন থেকে মেয়েটির ফোন অফ! উক্ত অফিসে গেলে বলে আমাদের না জানিয়ে তার কাছে টাকা দিলেন, সে রেস্পন্সিবিলিটি আমরা কেন নেব!!!! আরিফ বলে, “সেতো আপনার কাজিন, তাহলে বাসার ঠিকানাটা দিন”। কথিত ভাইয়া জবাবে বলে, সে আমার কাজিন নয়, তার বাসাও আমার জানা নেই”! শহরে এসে শুরুতেই এমন বাঁশ খেলো যে লজ্জায় নাদিমের কাছে বিষয়টি চেপে যায়, তারপর থেকে আচরণে এমন তারতম্য!
নাদিম চলে যাবার পর জীবন কে পুনরায় ঢেলে সাজাতে চেষ্টা করে। এখন সব ঠিক ঠাক, নাদিমের জন্য প্রচন্ড ভালবাসা অনুভব করে, খারাপ আচরণের জন্য অনুতপ্তও।খুব ইচ্ছে করে সরি বলতে। যে ভাল ব্যবহার পায়নি বলে নাদিম চলে যায়, আজ নাদিমের জন্য ভালবাসায় বুক ভরপুর, শুধু ভাল আচরণ নয়, সার্বক্ষণিক ভাল মন্দের খোজ খবর রাখতে দৃর প্রতিজ্ঞ। কিন্তু যাকে দেবার সেই আজ নেই। ভুল বুঝে চলে যায়। আরিফের মুখে আক্ষেপ ঝরে পড়ে, “হায় বন্ধু, কিছুদিন অপেক্ষা করলেই পারতি আজকের দিনটির জন্যো, দেখতি তোর এই বন্ধুটি ভাল মানুষটি হয়ে তোর সামনে বসে আছে!
শিক্ষাঃ কাছের কারো মাঝে আচরণে হঠাত ভিন্নতা দেখলে, যা আপনার কষ্টের কারণ, তবু তাকে ছেড়ে যাবেন না, সংশোধনের চেষ্টা করুন। বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে কাছের মানুষ গুলো দূরে সরে গেলে অবস্থার অবনতির আশংকা থাকে।বাবা সন্তান, মা মেয়ে, বন্ধু, স্বামী স্ত্রী সবার ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। জীবনভর মানুষের আচার ব্যবহার ঠিক একি রকম থাকেনা, খারাপের পরে ভাল, আবার ভালর পরে খারাপ, মোদ্দা কথা দুঃখের পরে সুখ, সুখের পরে দুঃখ বৃত্তাকারে ঘুরতেই থাকে। অতএব উত্তম ব্যবহার পাওয়ার আশায় কিছুদিন অপেক্ষা করলে কিই বা এমন ক্ষতি তাতে!!!!
বিষয়: বিবিধ
১৩১৩ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গল্পোচ্ছলে সুন্দর শিক্ষণীয় বিষয় উপস্হাপন করলে ভাই, অনেক ধন্যবাদ এ জন্যে।
একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বন্ধুর সব কিছু ভাল ভাবে বুঝার চেষ্টা করা উচিত সবার।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন