স্মৃতির ভেলায় ভেসে বেড়াই ( পর্ব-০৭)
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৭:৫১:৩৭ সন্ধ্যা
দুটোই কারাগার, কাশিম পুর মন্দের ভাল। টানা চারদিনের দুঃসহ যাতনায় জীর্ণশীর্ণ দেহে যেন নবপ্রাণের সঞ্চার হল। কখন আসবে প্রিজন ভ্যান, নিয়ে যাবে আমাদের! ঘড়ির কাটা কচ্ছপের গতিতে চলছে, মুড়ি চানাচুর মেখে গল্পে গল্পে সময় কাটানোর চেষ্টা, ঠিক তখনি তিনি এলেন, মোলাকাত মোসাফা করে পিঠে হাত রেখে বললেন, “ আল্লাহর প্রতি ভরসা কর, তিনি তোমাদের নিরাপত্তা বিধান করবেন”। একটি কথায় সবাই মোহাবিস্ট, সম্বিত ফিরে পেয়ে সাহসী বুক হতাশার কালো মেঘ সরিয়ে পুনরায় তেজদ্দীপ্ত হয়ে উঠে। তিনি আর কেউ নন, কোটি মানুষের নয়ন মণি, আলোর দিশারী, প্রাণের সপন্দন, বিশ্ববরেণ্য বক্তা, দায়ী ইলাল্লাহ, ইসলামী আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ একদল লড়াকু সৈনিকের প্রেরণার অন্যতম উৎস আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী! স্ত্রী সন্তানের সান্নিধ্য ছেড়ে দুড়ে অন্ধ প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত অনেকটাই ক্লান্ত করে দিয়েছে, বিবর্ণ চেহারা যার প্রমাণ। ছোটবেলায় অনেক ওয়াজ শোনেছি, প্রিয় মানুষ্টির দূর্লভ সাক্ষাত এইভাবে হবে তা ছিল কল্পনাতীত। শোকরিয়া আল্লাহর দরবারে।
প্রিজন ভ্যান কাশিম পুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রিয় কারাগার গেইটের সামনে। অপরুপ সৌন্দর্যে জুড়িয়ে গেল তারকাটায় ফাক গলে তাকিয়ে থাকা অনুসন্ধানী দুটি চোখ! বাহির টা এতো সুন্দর, ভিতরটা না জানি কত সুন্দর। গেইটের ভিতরে ঢুকিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসানো হল, ভাল লাগার শুরু এখান থেকেই, যা ভেবেছি তাই, কাপড় খুলে জায়গা অজায়গায় হাত দিয়ে চেক করার মত নোংরামী এখানে হয়নি। সকল ফর্মালিটি শেষ করে কারাভ্যন্তরে প্রবেশ করেই চোখ চানাবড়া, চোখের ভ্রম নয়ত? না বাস্তবিকই! সত্যি অভাভবনীয়, কারাগারো এমনি হয়! আধুনিক আবাসিক সিটির আদলে তৈরি কারাভবন গুলোর যৌন্দর্য মুহুর্তেই ভুলিয়ে দেয় এটা কারাগার, বন্দীদের যম! প্রতিটি বিল্ডিং ছয়তলা করে, একি কালার একি কাঠামো, প্রতি বিল্ডিং্যের মাঝ খানের প্রশস্ত খালি জায়গা, বাগান, সরু রাস্তাগুলো এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং্যের আঙ্গিনায় গিয়ে মিশেছে। মাঝ বরাবর ক্যান্টিন, এক পাশে মেডিকেল, এক কথায় অশাধারণ। আরো রয়েছে সবজি ক্ষেত, তরতাজা সবজি যা বন্দীদের পরিবেশন করা হয়। কারারক্ষীদের অমায়িক ব্যাবহার একেবারেই অচিন্তনীয়!
এতো এতো সোউন্দর্যের বাহার, স্বাধীন হয়ে দেখবার সুযোগ নেই, দুঃখ এখানেই। সুযোগ সীমাবদ্ধতা দুটই এখানে ভারসাম্য বজায়ে রাখে। ছোট ছোট রুম, প্রতি রুমের সামনে ১৪ শিকের দরজা, ইয়া বড় তালা, পশাতদিকে মোটা লোহার জানালা, বারান্দাও ১৪ শিক + তালা ঝুলানো। ২৪ ঘন্টাই লকাপে থাকতে হত। দিনের বেলা বারান্দা পর্যন্ত আর রাতে রুমেই তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হত। থাকা খাওয়া ঘুম গোসল এবং পাকৃতিক প্রয়োজন রুমেই, এটাসড বাথরুমের ব্যবস্থা।জোহর আছর সবাই মিলে বারান্দায় জামাত করতাম, বাকী নামাজ রুমেই ছোট ছোট জামাত করতাম বের হওয়ার সুযোগ ছিলনা বলে। প্রতি সপ্তাহ অন্তর অন্তর দারসুল কোরআন ক্লাস হত, হত ওয়াজ নসিহত। তাতেও আপত্তি আসে, বেশি লোক জড়ো হওয়া যাবেনা, তাই ছোট ছোট জমায়েত হয়ে আমাদের দ্বীনি কাজ টুকটাক চলত। মুড়ি চানাচুর মেখে নিয়ন্ত্রিত হাসি ঠাট্টা করে আমাদের যাবতীয় হতাশা গুলো ভুলার চেষ্টা করতাম। বিকেল বেলা আছর নামাজ শেষে বারান্দায় প্রতিযোগিতা করে দৌড়াতাম, যুবক পৌড় বৃদ্ধ সবাই ছেলে মানুষিতে মেতে উঠতাম, ভুলে যেতাম বয়সের ব্যবধান।
সকালে সেবক রা এসে শিকের ফাক দিয়ে ঘুম থকে জাগিয়ে তুলে বলত, এই সালাউদ্দি, কি খাবি বল, পরটা, খাসি ভূনা, তেহারী নেহারী, কলিজা! প্রথম প্রথম মনে করতাম, সত্যো সত্যই এইসব খাওয়ায়, পরে বুঝলাম দুষ্টামি করে, এক পিচ শক্ত আটার রুটি, এক চিমটে গুড়। মাঝে মাঝে খিছুরি দিয়ে যেতো। একজন সেবক এক্ছিল রাজবাড়ির, আমাকে খুব পছন্দ করত, কিছু একটা বলে বলত, “ ভাইস্তে, কি ঠিক বলিনি!” তবে বেজায় রাগ হত, যখন দাঁতে গুল লাগিয়ে হালকা নেশা করত, অনেক বারণ করেছি, বলে না খেয়ে থাকতে পারেনা। দুপুরে শুধু ডাল, ঘন হওয়াতে ডাল দিয়েই দুই প্লেট খাওয়া যেতো। আর রাতে সবজি+সপ্তাহে তিন দিন গরু অথবা খাসির মাংস, পরিমাণে পুটি মাছের আধারের সমান, তবু মাংস বলে কথা! দুইদিন ভাজি করা শোকনা মাছ। তৃপ্তিসহকারে খাবার জন্য এইসব যঠেষ্ট নয়, তাই বাহির থেকে আসা পি সি তথা পার্সোনাল ক্যাশ থেকে টাকার বিনিময়ে ক্যান্টিনে বিশেষভাবে রান্না করা ডিম মাছ সেবকদের দিয়ে নিয়ে এসে খেতাম।এখানে উল্লেখ্য যে টাকা আমাদের হাতে আস্তনা, কিছু কিনলে পি সি থেকে টাকা কেটে নিত।
মাঝে মাঝে টাকা দিয়ে মুরগী কিনে সবাই মিলে মজা করে খেতাম। আমাদের মধ্যে মেল বন্ধন ছিল দারুণ। হাসি খুশি আর ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিতাম। রুমমেইট দুজন ছিল অদ্ভূত রকমের ভাল। একজন সারাক্ষণ মাথায় কাথা মুড়িয়ে নববধুর মত ঘোমটা দিয়ে থাকত। অন্যজন ঝিম ধরে চুপচাপ বসে থাকত, ঘুমালে সারারাত পায়ের মোট্টা ফুটতেই থাক্ত অটোভাবে। আর একটা শখ ছিল কাগজের বিমান বানিয়ে আকাশে ছেড়ে দেয়া।
এই কারাগার আমাদের কিছুনাকিছু প্রতিভার সাক্ষ বহন করে চলেছে। আমার কথাই বলি, জীবনেও এক লাইন কবিতা ছড়া লিখিনি, এইখানে কলম হাতে নেই, লিখা শুরু করি, বেশ কিছু কবিতা, গল্প, গান, উপন্যাসের কিয়দংশ রচনা করতে সক্ষম হই, যদিও লিখার গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবু লিখতে যে পারছি তাতেই হাজারো শোকরিয়া আল্লাহর কাছে। তিনটি গানে সুর করেছি, বলা যায় অসাধ্যকে সাধন করা। আমার লিখা একটি আর অন্যের লিখা বাকী দুইটি। একটি গানের সুর দারুণ হিট করেছে। প্রতিদিন সমবেত কন্ঠে গানটি গাওয়া হত, এমন কি প্রিজন ভ্যানে কোর্টে আসা যাওয়ার সময় উচ্চ আওয়াজে গাওয়া হত। আমি ছাড়াও অনেকে কবিতা গল্প গান রচনা করে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ঘটিয়েছেন। দারস দেয়ার অভিজ্ঞতাও এখানেই প্রথম।
সন্ধায় লকাপে ঢুকিয়ে দিলেও আমাদের আলাদা করতে পারতনা। উচ্চ আওয়াজে গান গেয়ে পরস্পরের উপস্থিতি জানান দিতাম। আমিরুল মৌমিনেনের গান ‘ মা যে দশ মাস দশ দিন, গর্ভে ধরিয়া করেছেন রিনী’ আমার কন্ঠে শোনে অনেকের চোখে পানি চলে আসত, পাশের রুমের একজন সবসময় এই গান টা শোন্তে চাইত। গলায় সমস্যার কারণে গাইতে কষ্ট হত তবু অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারতাম না। খবর শোনা বা জানার জন্য উৎস ছিল রেডিও এবং পত্রিকা, তাও শুধু ইত্তেফাক আর জনকন্ঠ। আমরা টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে রেডিও কিনেছি। রুম ছয়টা, রেডিও দুইটা, তাই দরজায় কান পেতে থাকতাম বিবিসি রেডিও টুডে র সংবাদ শোনার জন্য। প্রতি রবিবার সন্ধায় বিবিসি সংলাপ শোনতাম। ন্যায়ের পক্ষে কোন কথা শোনলেই হুরররে চিতকার দিয়ে উঠতাম। বিশেষ করে ফরহাদ মজহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেনা মুহসিন, সায়েন্স অনুষদের ডিন তাজমেরি এস ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিক মিয়ার যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো আজো স্মৃতিতে অম্লান। শাহবাগ নিয়ে সম্ভবত ব্যারিস্টার রফিক মিয়ার যথাচিত প্রশন, “ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন গণজাগরণ হয়েছে কি যেখানে পুলিশি প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে?” শোনা মাত্রই চিতকার করতালিতে কারাগার সরগরম করে তুলি।
এইভচাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। থার্ড সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ১ মাস আগে গ্রেপ্তার হই। আশাওংকা ছিল পরীক্ষা দিতে পারবনা, মন সেট আপ করে নেই, জুনিয়রদের সাথেই পড়তে হবে। পরীক্ষার ঠিক তিনদিন আগে এক ক্লাস্মেইট + ইসলামী আন্দোলনে সহজাত্রী এসে জানায় কারাগারেই পরীক্ষা দিতে পারব কোর্ট + ডিপার্ট্মেন্টের অনুমতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুতির জন্যো কিছু শীট দিয়ে যায়। আর মাত্র তিন দিন! প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়টায়, কারাগারেও ঠিক নয়টার আগেই আমার একজন কোর্স শিক্ষক এবং রেজিস্টার অফিস কর্মকর্তা এসে হাজির। খুব সাধারণভাবেই হাজির হই, কুশল বিনিময় হয়, তিন ঘন্টার এক্সাম ভালভাবেই শেষ করি। চারটা কোর্স, প্রথম দুইদিন শিক্ষক আস্লেও পরের দুইদিন শুধু রেজিস্টার কর্মকর্তা আসেন। সহকারী জেল সুপার বার বার তাগাদা দেন, আমন কি আমার ভাইকে ডেকে শাশিয়ে দেন, কেন কিছু টাকার বিনিময়ে নকল করার সুযোগ নিচ্ছিনা। আমি সাফ জানিয়ে দেই, প্রস্তুতি আছে, আমার হেল্প লাগবেনা! আমার দৃরতার কাছে পরাস্ত হয়।
নিজেও কেঁদেছেন, আমাকেও কাঁদিয়েছেন। সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছেন, যতক্ষণ ছিলেন পাশে। মানুষ এতো ভাল হয় কেমন করে। কারাগারে বসে পরীক্ষা দিতে পারব কি পারবনা, যখন সে ভাবনায় বুদ হয়ে আছি, তখন তিনি এলেন, সাথে ছিল ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক। চারদিন পরীক্ষা হল, চারদিনই তিনি এলেন। তিনি আর কেও নন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার ভবনের কর্মকর্তা। আমার অসহায়ত্ব দেখে বারবার কথার ফাকে কেঁদে দিতেন। বলতেন, "বাবা, আমি বুঝি, তোমার মত ছেলে কারাগারে আসার মত অপরাধ কখনই করতে পারনা। মন থেকে দোয়া করি, তারাতারি মুক্তি পাও। আর শোন, কারাগারে বসে কিছু কর, যেমন, বই পড়া, লিখালিখি করা, চাকুরীর পড়াশোনা ইত্যাদি। মন খারাপ করনা, তোমার জন্য বিশেষ ভাবে দোয়া করি। আর হা, তোমার পরীক্ষা দেয়া দেখে আমি খুব খুশি, অনেকে দেখি কারাগারে বসে কিছু লিখতে পারেনা, তিন দিন পরে খুব ভাল লিখে যাচ্ছ"।
আমার মনে পড়লে হাসি আসে, গল্প করতে করতে হঠাত বলে উঠতেন, বাবা, আমার তোমার লিখায় ডিস্টার্ব করছি, আর কথা বলবনা, তুমি লিখ। হরতালের কারণে দুই দিন ক্লাস শিক্ষক যেতে না পারলেও জীবনের ঝুকি নিয়ে আমার পরীক্ষা নিতে গেলেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, হরতালে কেমন করে আসলেন, মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, "আল্লাহ নিয়ে এসেছেন,আমি না আসলে তুমি পরীক্ষা দিতে পারবেনা, একটা বছর লস হবে, আমি কেমন করে তোমার এই সর্বনাশ করতে পারি"। আমি লা জবাব! শুধুই শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। মা বাবার কথা খুব মনে পরছিল, উনাকে বললাম আবেগে আপ্লুত কন্ঠে, কারা গেইটে ঢূকার সময় উনাদেরকেও পকেট চেক করে, তবু বললেন, দ্রুত একটা চিরকুট লিখ, তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে বাবা মার কাছে পৌছে দিব। তাই করলাম। সেদিন ভাইয়ের বেদনার্ত চেহারা দেখে অনেক কষ্টে অশ্রু সংবরণ করেছিলাম।
বাবা তূল্য মানুষটির কথা মনে পড়ে, তবে আজ বেশিই পড়ল, তাই উনাকে নিয়ে লিখের লোভ সামলাতে পারলাম না। আল্লাহ উনাকে নেক হায়াত দারজ করুন।
আলহামদুলিল্লাহ, কারাগারে বসে দেয়া পরীক্ষার রেসাল্ট আগের চাইতে অনেক ভাল হয়েছে।
আমারতো মামা খালু নেই, তাই জামিন আশংকা কম ছিলনা। মাঝে মাঝে মনে হত এখানেই পচে মরে মরতে সারাজীবন। সাঙ্গঠিনিক ভাইয়েরা কি পারবে জামীন করিয়ে নিতে!আশা হতাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে ধর পর করে উঠি। নিচ থেকে আওয়াজ আসছে, এই জামিনের নাম শোনেন, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন…… বিশ্বাস হচ্ছিলনা। জিজ্ঞেস করি অন্যদের ঠিক শোনেছেনতো! শরীর কাঁপছে, আনন্দ অশ্রু কপোল বেয়ে টপ টপ করে পড়ছে। আবার আশংকাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, জেল গেইটে পুঃ গ্রেপ্তার হবনাতো! কালস এইটে আমার এক বন্ধু খাতায় লিখে দিল, ‘বিদায় বলা খুব সহজ, হজম করা অত্যাধিক কঠিন’। কি ভেবে বলেছিল জানিনা। কথাটি মিথ্যে নয়। জামিনের দিন সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় ডুকড়ে কেঁদে উঠি, কথা বলতে পারিনি গলা ধরে আসে, কেন জানি তাদের ছেড়ে যেতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল। যখন পাহারাদারের সামনে আসি, আবেগ আরো বেসামাল হয়ে পড়ে, অনেক ক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে রাখে, অত্যাধিক স্নেহ করতেন বলেই আমার বিদায় মানতে পারছিলেন না! প্রাণভরে দোয়া করলেন। অশ্রুসজল নয়নে কাঁপা কাঁপা হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে জেল গেইটের দিকে যাত্রা করি, পিছনে থা কে সাড়ে তিন মাসের নানান স্মৃতি।
একে একে ডেকে নিয়ে যায় জেল সুপারের কক্ষে। বিদ্রুপ কটাক্ষ করে নানাভাবে আমাদের অপমান অপদস্থ করে। আমার উপর যেন একটু বেশি ক্ষেপা ছিল, কি কারণ জানিনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি জানা মাত্রই শুরু তীর্যক বাকবাণ! “ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এইসব করে বেড়াস! জীবনে কিছুই করতে পারবিনা, মাটি কেটে খেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা কখনো জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের সাথে পেরে উঠেনা, বিসিএস, ব্যাংক জব সহ সকল চাকুরীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরাই ভাল করে।“ আমার মখ ফসকে প্রায় বেড়িয়েই যাচ্ছিল, “ স্যার, আপনি মনে হয় অনেক চেষ্টা করেও ঢা বি তে চান্স পান নি!, তাই এতো ক্ষোভ!” বলিনি, ভাবলাম কিছু পরেইত বের হব, দরকার কি ঝামেলা করার। এরি মাঝে হাজির আমি যে থানায় গ্রেপ্তার হই সে থানার এস আই। বুঝতে বাকী রইলনা আসার উদ্দেশ্য কি! বাড়ি আর যাওয়া লাগবেনা। আমাদের রিসিভ করতেই ঢাকা থেকে উনার আগমন। আগেই অনুমিত ছিল পুনঃগ্রেপ্তার হতে পারি, তাই আত্মীয় স্বজন কাওকে ফোন করিনি। সকল ফর্মালিটি সম্পন্ন করা শেষে জেল গেইটের বাহিরে এক পা রাখি, অন্য পা তখনি ভিতরে, দুই পাশ থেকে দুইজন এসে বাহু বন্দী করলেন, মৃদু হেসে বললেন, কষ্ট করে যেতে হবেনা, আমারাই তোকে বাড়ি পৌছে দেই। কি জঘন্যো ঠাট্টা!!! চারপাশে তাকিয়ে পরিচিত কাওকে চোখে পড়েনি।
মুক্তি পাওয়ার সীমাহীন আনন্দ, নবরুপে জীবন পরিচালিত করার স্বপ্ন সেখানেই সমাধিস্থ করে দুঃসহ ভয়ানক স্মৃতি মাখা থানার দিকেই পুনঃযাত্রা করি………
বিষয়: বিবিধ
২০৭২ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু ভাল্লাগছে, আফরার কমেন্ট মানেই বাড়তি কিছু! পিচ্ছিটি!
আর আমি যদি ব্লগে না থাকি আপনাদের কি ভাল লাগবে ।
আমি জানি ছোট বোন দুষ্টামি না করলে বড় ভাইয়াদের ভাল লাগে না তাই ।
সত্যি কথা হল, আফরার ক্ষতি হল কি মঙ্গল হল, তা পরে ভেবে দেখব, তার সরব উপস্থিতি যে আমাদের জন্য আনন্দদায়ক তা অনঃস্বীকার্য।
থাক ধন্যবাদ দিয়ে ছোট মানুষ কে আর ছোট করবনা, অনেক বড় হ, ঠিক আকাশের সমান।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো আছেন?
ইনশাল্লাহ, এইভাবেই দ্বীনের বিজয় আসবে।
আপনি সম্ভবত আমার লিখায় নতুন আগমন করেছেন, আপনাকে স্বাগতম। আশা করি সঙ্গেই থাকবেন।
জেনে খুব ভাল লাগল, আমার লিখায় গুরুত্ব আছে। আল্লাহর কাছে শোকরিয়াহ।
মুমিনের বৈশিষ্ট্য এমন যে একজনের ব্যাথা অন্যজন কে ব্যথিত করে, তাইতো দুগাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে।
তরুণ হয়ে ঠিক মত আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে
ব্যস্ত রাখিনা, দোয়া করবেন যেন সকল কিছুর উর্ধ্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আল্লাহর পথে সবসময় নিয়োজিত রাখতে পারি।
আজ আমার অনেক ভাল লাগছে, হয়ত কথাগুলো আরো গুছিয়ে বলতে পারতাম, কিন্তু আমি অক্ষম, তাই সাধাসিধে ভাবেই বলছি, দূর থেকে স্মরণ করছেন শোনেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি।
আপনিও ভাল থাকবেন। জাজাকাল্লাহু খাইর।
জী ঠিক বলেছেন, তাদের মত বদের দল দেশের খুঁটি হয়ে বসে আছে। আসলেই জেল গেইটে গ্রেপ্তার হওয়ার মত কষ্ট আর হয়না!
যোগ্যতা থাকলে অথবা পড়াশোনা করলে কি আমার প্রতিষ্ঠান নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করতে পারে!
ধন্যবাদ ভাইয়া ইভার গ্রীন। ভাল থাকবেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই শেখের পোলা।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে যুগে যুগে অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা অপবাদ সহ্য করা আল্লাহর পথের সৈনিকদের সহজাত বিষয় যেন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঈমানী এমতেহানে নিয়ে তাদের জন্য ই সাফল্য বরাদ্দ করেন।
সকল মজলোমানের জন্যে শুভ কামনা আল্লাহর কাছে।
জেল খানার রুটি তো এতো ভাল হয় না ভাই!!
আপনার কমেন্ট অনেক ভাল লেগেছে ভাই। জাজাকাল্লাহু খাইর।
আগামী দিনগুলো আপনারও শুভ হোক এই কামনা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
বেশ কিছু বিষয় অজানা ছিল। জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আপনার খারাপ লেগেছে জেনে আমি প্রীত হলাম।
ভাল থাকুন সবসময়। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন