ভিন্ন স্বাদ এলো ঈদে, একের ভিতর চৌষট্টির গুনে
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:২৭:৫০ রাত
যা ভাবি, তা ঘটেনা, যা ঘটে তা ভাবিনা। বাড়ি ছেড়ে বাহিরে ঈদ কিভাবে সম্ভব! অথচ শুধু সম্ভবই নয় বরং ভিন্ন সাজে ভিন্ন আমেজে আনন্দে যোগ হতে পারে বহুমাত্রিকা। যা অভাবনীয়, অভূতপূর্ব।
গতবার ঢাকায় ঈদ করার অনুরোধ করা হলে লুকিয়ে কেঁদেছি। বাবা, অসুস্থ মা, আদরের ছোট বোন, বড় বোন এবং ভাই সহ সবাইকে রেখে দূরে ঈদ করব! মন মানেনি মানাতে পারিনি, অনুরোধ উপেক্ষা করে বাড়ির পানে ছুটে গিয়েছি। জীবনে প্রথম বারের মত বাড়ির বাহিরে ঈদ উদযাপন করলাম। মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছিল, একদিকে নস্টালজিয়া, নীড়ের অপ্রতিরোধ্য টান, অন্য দিকে নতুন অভিজ্ঞতার আশায় উন্মুখ হয়ে থাকা। এইবার থাকতে হল কর্তব্যের খাতিরে। বাবা মা কে মিস করেছি খুব। তবু সান্ত্বনা, বয়স যদি হয় ২৫ বছর, তাহলে ৫০ টা ঈদ করেছি বাড়িতে, এইবার না হয় বাহিরেই………
শুভাকাংক্ষী, বন্ধু, স্বজনেরা ফোনে তাগাদা দিচ্ছিল, বাড়িতেই যেন ঈদ করি, খুব খারাপ লাগবে বাড়ির বাহিরে। কেও আল্টীমেটাম দিচ্ছে, গ্রামে না আসলে তারাও বেড়াতে আসবেনা! কেও প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে, কেন কেন কেন বাড়ি যাবনা? কেনর উত্তর আছে, ঘুছিয়ে বলতে পারিনা বলেই যত মুশকিল। আপনজনেরা শংকায় আছে বিপদ হবেনাতো! শংকার কারণ দুবছর আগে এই কোরবানীর ঈদেই আমার জীবনে নেমে আসে দূর্যোগ, যার ক্ষত তারা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাই বাহিরে ঈদ করাতে আবার সেই দূর্যোগের ঘনঘটাই যেন শোনতে পাচ্ছেন।
সাময়ীক কিছুটা জটিলতা থাকায় ঢাকায় ঈদ করেছি, পাশাপাশি এও উপলব্দি করার চেষ্টা করেছি, বাহিরে যারা ঈদ করেন তারা কিভাবে করেন, তখন মনে অবস্থা কেমন থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছি কিছু ভাই হলেই ঈদ করতেন, কেওবা বাড়ি দূরে হওয়াতে, কেও সামনে পরীক্ষা থাকাতে, কেও দায়িত্বের কারণে বাবা মা ছেড়ে ঈদ করেন। আমিও এইবার বাহিরে করেছি, ঈদ উদযাপনটা অসম্ভব ভাল হয়েছে। বাড়িতে এক গ্রামের অথবা এক জেলার মানুষ কে নিয়ে ঈদ করতাম, এখানে করেছি ৬৪ জেলার মানুষ কে নিয়ে। আনন্দে বৈচিত্রে অভিনব পরিবেশের অবতারণা হয়েছে। তবে দেহটা ঢাকাতে হলেও মনটা বাবা মার কাছেই পড়েছিল...... মিস ইউ এ লট বাবা, মা, ভাই, ছোট এবং বড় বোন, কিউটি কিউটি ভাগিনা ভাগীনির দল!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বরাবরই আমাদের জন্য অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ, কিছু লোক একসাথে মুভ করাতো দূরের কথা, ক্লাস করতে হয় চোরের মত সামনে পিছ দেখে দেখে। ঢাকায় অবস্থানরত ক্যমপাস শাখার সবাই আজ নামাজ পড়ে এক সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি মুক্ত বিহঙ্গের মত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় মসজিদ প্রাঙ্গন আমাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়, এ যেন একের ভিতর চৌষট্টি। সব জেলার ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে একসাথে ঈদ উদযাপন এনে দিয়েছে ভিন্নতা। আমাদের পরস্পরের মাঝে মেলবন্ধন এতো দৃর যে, বাড়ী যাবার আকুলতা অনেকাংশে মিইয়ে যায়। হাসি ঠাট্টা দুষ্টামি, খোচাখুচি, মেহমান দারীতে মজায় মজায় অতিবাহিত করি দিনটি।
বাড়ি থেকে বাবা মা বোনেরা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, খেয়েছি কিনা, মাংস কি কিনে খাই? তাদের আশস্ত করি, “ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বেশ কিছু গরু জবাই করে, কিছু মানুষের মাঝে বন্টন করে বাকীটা আমরা সব হল ভাগাভাগি করে নেই। কোন চিন্তা করবেন না। আমার খাওয়া দাওয়া সব ঠিকঠাক হচ্ছে।“
সারাদিনের ভাললাগার সাথে বাড়তি মাত্রা যোগ হয় সন্ধায় হলের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে। তাদের ডেকে এনে মাংস বিতরণ করতে গিয়ে আলাপচারিতার কিছু অংশঃ
আম্ রাঃ আমরা হলে যেতে পারিনা, এখনো আমাদের বেশ কিছু ভাই হলে অবস্থান করছে, তারা আপনাদের কাছে আমানত। কোন বিপদ আপদের সম্ভাবনা দেখলে তাদের সতর্ক করে দিবেন এবং আমাদের তাতক্ষণিকভাবে অবহিত করবেন।
কর্মচারীঃ জী মামা অবশ্যই করব। ভাই আপনাদের জন্য দুঃখ হয়, বারবার আপনাদের প্রতি ‘তাদের’ বর্বরতার সাক্ষী হয়েছি! আমাদের অক্ষমতাকে ক্ষমা করবেন! আপনাদের অতি মার্জিত ব্যাবহার বিশেষ করে আমাদের মত নিম্মমানের কর্মচারীদের সাথে, যা কোনদিন ভুলে যাবার নয়। আমরা দেখেছি, অন্য ছাত্রসঙ্গঠন গুলোর নেতারা হল গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের সালাম দেয়া আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল, অথচ আপ্নারা আমাদেরকেই উলটো সালাম এবং মুসাফা করে বের হতেন। কি ভিন্নতা তাদের আর আপনাদের মাঝে! অন্য একজনঃ “ অন্যসব ছাত্রসঙ্গঠোনের প্রোগ্রামে গেলে শুধু অব্যবস্থাপনাই দেখতে পাই, নিয়ম কানুনের কোন বালাই থাকেনা, আপনাদের প্রোগ্রামে গেলে মনটা খুশিতে ভরে যায়, বিশেষ করে বিতরণ অনুষ্ঠানে, কি চমতকার সুসমবন্টন, আর কোথাও দেখা যায়না এমন। অন্য একজনঃ আপনাদের কখনও দেখিনি ক্যান্টিনে ফাও খেতে, ক্যান্টীন বয়কে গালমন্দ করতে, উশৃংখল দাপটে হলকে তটস্থ রাখতে। ভাববেন না, খুশি করার জন্য এইসব বলছি, আসলে আপনারা সত্যি তাই!
দুবছর আগে হল থেকে বের হই। এই লম্বা সময়ে কর্মচারীদের কারো সাথে দেখা হয়নি বললেই চলে। আজ দেখা হতেই কেও চিনতে সময় নেন নি। কেও বলেই দিলেন, “ভাই আপনার মুখে কিন্তু তখন দাঁড়ি ছিলনা”। তাদের সাথে আলাপ করে সুখ দুঃখ শেয়ার করে মোদ্দা কথা দীর্ঘ সময় পরে দেখা হওয়া, বাবা মা কে ছেড়ে দূরে সবাই মিলে ভ্রাত্তিত্ববোধের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পরস্পরের মুখে হাসি ফুটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া, নিকটত্মীয়দের অভাব ভুলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এইবারের ঈদ বলতেই হয় একটূ বেশিই স্পেইশাল হল। আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৯ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চোখে পানি এনে দিলো ভাই। আপনি কোন হলের? কোন বর্ষের?
ফার্স্ট কমেন্ট আপনার, তাই বিশেষ ধন্যবাদ।
ফেরারী ভাই আপনি ডি ইউতে পড়েন? জানালে খুশি হব।
আপনার ভাল লাগা আমাদের প্রেরণা উতসাহ দিয়ে যাবে আশা করি। কম ধন্যবাদ আপনাকে! সব ডাইরেক্ট বলতে হয়না আগরামনি।
নো থ্যাঙ্কস, বেশি বেশি ভাল থাকবেন এবং তাকে তাদেরকে ভাল রাখবেন।
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত করতেই তো পবিত্র ঈদের আগমন, আর যারা ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের আরো বেশী ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। মহান আল্লাহ আপনাদের কে কবুল করুন এই দোয়া আমার।
ভিন্ন আমেজে পালিত ঈদের সুন্দর উপস্হাপনায় অনেক অনেক ধন্যবাদ ও ঈদ মোবারক.......
আপনাকেও অনেক ধন্যোবাদ এবং মোবারকবাদ। ভাল থাকুন সুস্থ রাখুন এই কামনা।
পরিবার ছাড়া ঈদের অভিজ্ঞতা আমারও আছে। আর দেশের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে কিছু না বলাই ভাল।
ঠিক বলেছেন, দেশের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। জানা কথাই আবার জানানো।
ধন্যবাদ ইভার গ্রীন রিদওয়ান কবির ভাই।
আল্লাহ আপনাকে ও আপনার পরিবার পরিজন কে সুস্থ স্বাভাবিক রাখুন। আমিন।
অনেক ধন্যবাদ আপু।
অনেক ধন্যবাদ।
আপনার ভাললাগায় আমারো বেশ ভাল লাগছে আপু! আপনার প্রেরণা পেলেই দুচার লাইন লিখে শেয়ার করতে পারি। দোয়া করবেন আমার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন