মানুষই সবচেয়ে দূর্বল প্রাণী, তবে এতো বড়াই কিসের!
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৫১:৩৭ দুপুর
শৌচাগারের সামনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত মুখে বলি “ ওয়ার্ডে দুই তিন শত ডাইরিয়া রোগী, অথচ টয়লেট দুইটা! যাদের বেগ পাওয়া মাত্রই কাম সারা, তারা কিনা ধরবে সিরিয়াল, ধরতে ধরতেই কাপড় নষ্ট! সিরিয়ালে এক যুবক বলে,” ভাই, দুইটা নয়, বেড যতটা টয়লেট ততটা, বেগ পাওয়া মাত্রই শুয়ে থেকেই কাজ সেরে ফেলা”। খেয়াল করে দেখি তাইত, সবকটা বেডের মাঝ বরাবর ছিদ্র, নিচে বালতি ফিট করা, কি সুব্যবস্থা
আমি বিস্মিত হয়ে বলি, “ বৃদ্ধ অথবা শিশুরা না হয় এইভাবে সবার সামনে অটোভাবে কাজ সারল, আমাদের মত ইয়াংদের পক্ষে কেমন করে সম্ভব????”। “ভাই, বলেন কি! প্রয়োজন মানুষকে লজ্জা ভুলিয়ে দেয়। দাস্ত বমি বৃদ্ধ, জোয়ান, শিশু সবাইকে এক কাতারে শামিল করে দেয়। গতকয়েকদিন আমার প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর বেগ পেত, তাই শুয়েই বালতিতে প্রয়োজন সেরেছি, আজ বাড়ি যাব, হয়ত গাড়ি নোংরা করে দিতে পারি!”।
রোগী হয়ে হস্পিটালে গিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম, উদ্দেশ্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের( যারা শক্তি বুদ্ধি জ্ঞান গরিমায় শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী) ক্ষমতা নিয়ে আলোকপাত করা।
ক্ষমতার মোহে পেশি শক্তির জোরে মানুষ কত কিছুইনা করে, ধর মার খাও, পেশীর সামনে দাড়াবার সাধ্য কার। পেশুয়ালারা ভুলে যায়, শক্তি শৌর্য বীর্য, বিশালাকার হস্তির ন্যায় শরীর তার নিজের তৈরি নয়, ভুলে যায় শুকনা হাড্ডিসার আর মহা শক্তিধর রুস্তম পালোয়ানের ন্যায় শক্তিধর সবি আল্লাহর তৈরি। ভুলে যায় আল্লাহ চাইলে পেশির জোর সকল ক্রিয়া কলাপ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারেন, নিথর দেহে মশা মাছির সরব পদচারণা দেখেও হাত দিয়ে সরাবার শক্তি কেড়ে নিতে পারেন। এবং করেন ও।
প্রমাণ খোজার জন্য বেশিদুর যাবার দরকার নেই, ডাইরিয়া কলেরা রক্তয়ামাশয় কোন রোগীর কাছে যান বুঝতে পারবেন। একবার ভালমতন দাস্ত বমি হলে অন্যের কাধে চড়ে টয়লেটে আসা যাওয়া করতে হয়, কখনো শৌচাগারে যাবার আগেই কাম সারা। প্রশ্ন হল, ধরাকে সরা জ্ঞান করা, পৃথিবী উলটে দেয়ার মত শক্তির আধার তখন যায় কোথায়? তার শক্তি খর্ব করার জন্য তার মাথার উপর আকাশ চাপিয়ে দেয়া হয়না, জমিন কে উলটে দেয়া হয়না, বরং পাকৃতিক প্রয়োজনটাকে তরল করে ঘন ঘন ছোট ঘরে আসা যাওয়াতে বাধ্য করে দুর্বল শিশুর মত অন্য নির্ভর করে দিয়ে তার সমস্ত শক্তির অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দেন, তবু যদি তার হুশ হয়, কিন্তু হয়না, রোগ মুক্তিতে বেবালুম ভুলে যায়, তারাই বরং শিক্ষা নেয়, যারা বুঝে নেয় মানুষই সবচেয়ে দুর্বল প্রাণী।
পশু পাখির বাচ্ছা জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই তিরিং বিরিং করে দৌড়াতে থাকে, মানুষ একমাত্র প্রাণী, যাদের শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর লেগে যায় হাটতে শিখতে। তবু দুর্বল মানুষকেই দেয়া হয়েছে সকল প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। তাইত মানুষের চাইতে হাজারগুন শক্তিশালি প্রাণী যেমন বাঘ, সিঙ্গহ, হাতিকে পোষ মানিয়ে শিকলে বন্দী করে রাখতে পারে। তবে মানুষের শক্তির রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা, চাইলেও সারাজীবন দাপিয়ে বেড়াতে পারেনা। শিশু কৈশর কাল কাটে দুর্বল হিসেবেই, মাঝখানে যৌবনে সামান্য কিছুকাল শক্তির সর্বোচ্ছ ব্যবহার করতে পারে, পৌর বয়সে কিছুটা পারে, বৃদ্ধ বয়সে আবারো শিশুর ন্যায় অক্ষম হয়ে যায়, তখন শুধু চেষ্টা কর তো মর, হায় আক্ষেপ, কোথায় গেল দুর্দমনীয় শক্তির সম্ভার।
যৌবনের সামান্য কাল ক্ষমতা পেয়েই আল্লাহর ক্ষমতাকে ভুলে যায়, যদি সারাজীবনের জন্য শক্তি অক্ষত থাকত, তবে মানুষ হয়ত প্রত্যেকে নিজেদের খোদার সমতূল্য মনে করত (নাউজুবিল্লাহ)। তাইত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছুকাল শক্তি খমতা প্রভাব প্রপত্তি দিয়ে পরীক্ষা করছেন বান্দা তার দেয়া শক্তি কোন কাজে ব্যায় করছে। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ, তার দেয়া শক্তি ক্ষমতা তার পথে ব্যায় না করে বরং তার বিরুদ্ধারনের পথেই ব্যায় করছে। সময়ের এক ফোর অসময়ের দশ ফোড়। যৌবনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, বৃদ্ধকালে ঠুকাঠোকি অপেক্ষা। তাই যৌবন কে আল্লাহর পথে ব্যায় করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসলেই আমরা কতই না দুর্বল !! তবে সেটা সব সময় বুঝি না সমস্যায় যখন পড়ি তখনই শুধু বুঝতে পারি ।
ব্লগে আসতে না পেরে খুব হা হুতাশ করছিলাম, ইচ্ছে করলে পোস্ট করা যেতো, কিন্তু প্রতি মন্তব্য করতে পারবনা বলেই পোস্ট করিনি আর আপনাদের খুব খুব মিস করেছিলাম। দোয়া করবেন যেন আবারো শুরু করতে পারি। ধন্যবাদ আফরা
মহান রবের কাছে আপনার সহ সকলের সুস্হতা কামনা করি বিনীত ভাবেই.........।
প্রতিটা কর্মেই শেখার থাকে অনেক কিছু,তা আপনার উপস্হাপনায় সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
মহান পরওয়ারদিগার কুদরত বঝার তাওফিক হোক সবার এই ই চাওয়া.....।
মন্তব্য করতে লগইন করুন