শ্রীঘরে ভাবনায় মা
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ১২:০০:৩৭ দুপুর
[img]http://www.onbangladesh.org/blog/bloggeruploadedimage/GaziSalauddin1/1409464705.gif[/img
মাগো তোমায় পড়লে মনে, অশ্রুতে ভিজে চোখ
তোমার অশ্রুসজল চোখ, মনে করে, কষ্টে ভেঙ্গে যায় বুক
দেখতে তোমায় মাগো , মনটা যে আমার, দিশেহারা হয়ে যায়…
----সালাউদ্দিন
একাকীত্ব, বিচ্ছিন্ন বসবাস ও বন্দী জীবন সবই মেনে নিচ্ছি। দিন যাচ্ছে কেটে একভাবে। কিন্তু নিজেকে সামলাতে পারিনা যখন আপনাকে মনে পড়ে। কপোল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ে। গলা ধরে আসে। খুব ভেঙ্গে পড়ি। খুব জানতে করে, মা, কেমন আছেন? আপনার অশ্রু সিক্ত নয়ন, ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ঝিম ধরে বসে থাকা, ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া, ভাত মুখে নেন কিন্তু গলায় গিয়ে ঠেকে থাকে, অশ্রুর ফোটা পড়ে নোনা জলে ভাত ভিজে যায়, আপনার আর খাওয়া হয়না। আমি ভেবে আকুল হই, কতবেলা না খেয়ে আছেন!
ঘুমাতে গিয়ে এপাশ ওপাশ করেন। তন্দ্রা এসে পরক্ষণেই কেটে যায়। শুয়ে বসে থাকেন। কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করে চোখের জলে কপোল ভিজে যায়। সবাই যখন ঘুমের ঘোরে, আপনার রজনী কাটে বিনিদ্রায়। কলিজার টুকরা, বুকের ধন, সোনামানিক কেমন আছে। কিভাবে আছে। ঠিকমত খাইতে পারছে কিনা। নাকি খুব মেরেছে। ফেলে রেখেছে অনাদর অবহেলায়। এমন হাজারো দুশ্চিন্তা আপনার ঘুমকে হারাম করে দিয়েছে।
আপনার জীর্ণ শীর্ণ শুকিয়ে যাওয়া মুখটার কথা মনে হলেই গা শিউরে উঠে। না খেয়ে না খেয়ে আপনি শুকিয়ে গেছেন অনেক। চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। দুর্বল, ফাংসু মুখে হাসি প্রাণখুলে হাসতে পারেন না। কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। হয়ত শূন্যতার মাঝে আমাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বুক থেকে নেমে দীর্ঘশ্বাস।
বুকে আপনার কতশত দুঃখ-বেদনা, সে আপনিই জানেন। যে সন্তানকে দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছেন। বসলে উঠতে পারতেনা, উঠলে বসতে পারতেননা। মুখে নেই রুচি-স্বাদ, তবু খেয়েছেন ভালোমন্দ পেটের সন্তানের সুস্থতা চিন্তা করে! আমি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় প্রসব বেদনায় জ্ঞান হারিয়েছেন। জ্ঞান
ফেরার পরক্ষণেই সর্বপ্রথম জিজ্ঞেস করেছেন আমার কথা। বলেছেন, 'বাবুকে আমার কোলে দাও'। দাইমা জবাবে বলে, 'তুমি কেমন মা! যার জন্য মরতে বসেছ, চোখ খুলেই তাকে কোলে নেওয়ার আকুতি'! আপনি আমাকে কোলে নিয়ে বললেন- “তোমরা বুঝবানা। সন্তানের মুখখানি দেখে মা হওয়ার নিদারুণ সকল কষ্ট মুহুর্তেই ভুলে গেছি”।
শীত- গ্রীষ্ম-বর্ষা, সর্বদাই ছোট্ট আমাকে আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। আমার সামান্য অসুখ-বিসুখে ছোটাছুটি করেছেন চিকিৎসকের কাছে। অস্থির, পাগলপ্রায় হয়ে থাকতেন আমার অসুখে।শীতের রাতে পেশাব করে শোয়ার জায়গা ভিজিয়ে দিতাম। আমাকে শুকনা জায়গা রেখে ভিজে জায়গাযতেই শুয়ে থাকতেন। পায়খানা করলে সবাই না ছিটকায়, শুধু আপনার নাকে গন্ধ লাগতনা। রান্না, গোসল, ঘর-দরজা পরিস্কার সহ নানা ব্যস্ততার মাঝেও আমার কান্নার ক্ষীণ আওয়াজ আপনার ছুঁয়ে যেত। সব ফেলে দৌঁড়ে আসতেন। বুকের শীতল দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আবার কাজে যেতেন। আমার খাওয়া, ঘুম, পেশাব-পায়খানা নিয়ে ছিল যত দুশ্চিন্তা। পেশাব-পায়খানা কম করলে চিন্তায় পড়ে যেতে, তেমনই বেশি করলেও দুশ্চিন্তার সীমা থাকত না। নিজের চেয়ে আমার সুখকেই সদা অগ্রাধিকার দিতে।
স্কুলে পাঠিয়ে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত চোখ রাখতে রাস্তার দিকে। কখনও আসতে কিছুটা দেরি হলে ঘর আর রাস্তায় অস্থির পায়সারি করতে। আসার পর ব্যাকুল কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে, কেন দেরি হল বাবা? পথে সমস্যা হয়েছি কি। তোমার জন্য মায়ের খুব চিন্তা হয়। তারপর পাশে বসিয়ে পেট ভরিয়ে খাওয়াতে আর বলতে, 'ইস, সারাদিন না খেয়ে মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে'। গরমের দিনে গুরের শরবত বানিয়ে রাখতে।
মাদরাসা থেকে আসলেই খেতে দিতে। খেয়ে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যেত।
মা, অশ্রু সংবরণ করতে পারিনা। একটা চাপা কষ্ট তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। তখনই সকল হাসি, খোশ গল্প সব বিষাদে রুপ নেয়। অনেক ভালবাসি মা অনেক। যখন কাছে ছিলাম, বুঝতে পারিনি আপনার গুরুত্ব। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আপনার চেয়ে আপন আর কেউ হতে পারেনা। আপনার সাথে দুরত্ব আমায় ক্লান্ত করে দিচ্ছে। আপনাকে এক পলক না দেখার, দু'টি কথা বলতে না পারার কি যে কষ্ট, তা আমি ছাড়া আর কে বুঝবে!
আপনি খুব সামান্য পড়াশোনা জানতেন। কিন্তু তাতে কি। আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে সর্বদা সজাগ ছিলে। ভারী কোন কাজ করতে দেননি পড়ায় ক্ষতি হবে বলে। পড়াশোনায় আপনার অনুপ্রেরণা সদা পাশেই ছিল। একজন আদর্শ মা বলতে যাকে বুঝায় আপনি তাই। শুধু মাই ছিলেননা। ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষকও। একটু অবহেলায় আপনার অস্থিরতা ছিল লক্ষ করার মত। এই বুঝি ছেলেটা রেসাল্ট খারাপ করে বসল!
শহরে এসে পড়ার সময় সপ্তাহে একদিন কথা না বললে আপনার কন্ঠে অভিমান ঝরে পড়ত। ভাগ্যের একি নির্মম পরিহাস, দীর্ঘ আড়াই মাস যাবৎ আপনার সাথে কথা হয়না। অভিমান ভরা কন্ঠ শুনতে পাইনা। বারংবার সৎ পথে চলার সদোপদেশ শুনতে পাইনা। অভিমানী কন্ঠে বলেন না, “কেন আমাকে ফোন দিলিনা, তোর চিন্তায় আমি পেরেশান, খুব বড় হয়ে গেছিস, মাকে আর এখন মনে পড়েনা, বড় হয়ে গেলে মা কে প্রয়োজন পড়েনা? “ এখন মায়ের কথা প্রনিয়ত মনে পড়ে। কথা বলার অদম্য ইচ্ছাও আছে। তবুও কথা বলা হয়না, বলতে পারিনা।
আমার ২৪ বছরের জীবনে অনেক মাকে দেখেছি, যারা এক সন্তানকে আদর করে অন্যদেকে করে কম। পরপস্পরের প্রতি বৈষম্য ছিল লক্ষ করার মত। কিন্তু আপনাকে কখনও দেখিনি আমাদের ভাই বোনের মাঝে দুই রকম আচরণ দেখাতে। যদি তা হয় একটি বিস্কুট, তাও সমান ভাগ করে সবাইকে খাওয়াতে।
রাগের মাথায় আমাকে মেরে বসলে যখন কেঁদে দিতাম, এমন একটা দিনও ছিলনা আপনি নিজে কাদেন নি। পরে কাছে ডেকে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতে, “অনেক লেগেছে? আচ্ছা, আর কখনো মারবনা। তোমাকে মারলে মাও অনেক কষ্ট পাই। তুমি লক্ষী ছেলেটি হয়ে থাকবে, মায়ের কথা শুনবে। মার কি স্বাদ আছে তোমাকে মারার"। তোমার ভালর জন্যই মাঝে মাঝে একটু শাসন করি।“
বড় হয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছি আপনাকে, ঝরিয়েছি অশ্রু। যে পথে বারণ করেছেন সে পথেই চলেছি বেশি। আক্ষেপ করে বলতেন, 'সন্তান আমার মনের মত হলনা'!
তবে হাল ছেড়ে দেননি। আমাকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাধ্যের সবটুকুই করেছেন। আদর করেছেন, সাথে শাসনও। যখন যা দরকার হয়েছে। আপনার কথা অমান্য করে বারবার ভুল পথে পা বাড়িয়েছি। শুকরিয়াহ, আপনার মত মা পেয়েছি বলেই ভুলের পথে যেতে ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাইনি। ফিরে এসেছি আপনার কাঙ্ক্ষিত পথে। 'শাসন করা তাকেই সাজে
আদর করে যে,' কথাটির যথার্থতা আপনাকে দেখেই উপলব্দি করেছি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Really, parents are like that banyan tree which shades you from heat, saves you from shower, protects you from storms, feeds you, heals you, and most importantly , you not only find them when you need them, but find them when you needn't also.
Mother is the name of that divine blessing, which even can't be fully expressed in humanly words.
Parent's are gift of Allah, and mother is the best portion of that gift.
Zajakallahu Khair.
Exactly say truth and ur comment also very touchy . thanks a lot
মায়ের মতন আহা,
একটি কথায় এত সুধা মাখা নাই৷
মায়ের মতন এত,
আদর সোহাগ সেতো,
আর কোন খানে কেহ পাবেনাতো ভাই৷
অতি অাপনজন
মা ছাড়া এভুবনে
নেই কেহ অাপন।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন