‘ওরা’ যৌনতা যেভাবে ছড়ায়
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০২:০২:৪০ দুপুর
একদিন বিবিসি অনুষ্ঠানে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াতকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনার অনেক ছবিতে বেশ কিছু আপত্তিকর দৃশ্য দেখা যায়, যা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখা খুব বিব্রতকর, কেন এমন দৃশ্য ছবিতে নিয়ে আসেন?” উত্তরে সে বলেন, “দেখুন যা বাস্তব, তা আমাকে ফুটিয়ে তুলতেই হবে, নয়ত সত্যকে গোপন করা হয়। এই যেমন, একটা ছবিতে মৌসুমি তার বাচ্ছাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য বুকের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে ব্লাউজ খুলে ব্রেস্টের উপর বাচ্ছার মুখ লাগানোর দৃশ্যটি তুলে ধরেছি, তাতে সত্যটা মানুষ দেখতে পেয়েছে, দুধ কিভাবে খাওয়ায় তা ফুটে উঠেছে”। আমি শুনে মনে মনে বললাম, পারলে দুধ খাওয়ানোর দৃশ্য কেন, স্বামী-স্ত্রীর মিলনের দৃশ্যটাই তুলে ধরতে, যদিও কিছু বাংলা ছবিতে ধর্ষণের ঘটনাটাকে হুবুহু করে দেখানো হত বা হয়।
আজ আমি এমন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব, যা নিয়ে সচরাচর কেও কথা বলেনা, আমার লিখার ভাষা আপনাদের কাছে বাজে শোনালে ক্ষমা করবেন। আসি আসল কথায়-
আপনারা মার্কেটে গেলে দেখতে পাবেন, ছেলে মেয়ে রুপি doll এর গায়ে জামা পরিয়ে পিছন দিক থেকে টেনে খুব টাইট করে সামনের দিকে বুক হাত পা ফুলিয়ে রাখে ডিসপ্লে হিসেবে। প্রথম দেখলে মনে হবেনা, এইসব doll, মানুষ নয়।মেয়েদের ব্রা, ছেলেদের আন্ডারওয়ার, মেয়েদের অন্তর্বাস দোকানে সামনের দিকে ঝুলিয়ে রাখে, বোধ করি ক্রেতার সুবিধার্থে।জামার ডিসপ্লের জন্য কি doll এর গায়ে জামা পরিয়ে যৌন উদ্দীপক করে পরিবেশন করতে হবে? ডিস্পলেতো অন্যভাবেও করা যায়। কাপড় দোকানে ব্রা থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তবু কেন তা নির্লজ্জভাবে সবার চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে? ঐসব দোকানের পাশ দিয়ে গেলে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে।দোকানদারকে বললেই সে ব্রা বের করে দিবে, তবু কেন নির্লজ প্রদর্শনী! ছেলেদের আন্ডারওয়ারের ক্ষেত্রেও একই কথা, কেন তা খুলে রাখতে হবে, তাও মেয়েছেলের শুধু ঐ পোষাকটা পরা অবস্থাই! আপনারা স্বীকার করুন বা নাই করুন, আমাদের লজ্জাহীনতার এগুলোও কারণ।
এইবার আসি ইনটারনেট জগতে। আপনি গুগোলে বাংলা কিছু লিখতে যাবেন তো, সামনে কেউ থাকলে আপনাকে মহা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। দু'চার অক্ষর লিখলেই শত শত বাজে লিখা-কাহিনী আপনার সামনে হাজির হবে। গুগোলে কোন ইমেজ খুজতে গিয়ে চোখ ছানাবড় হয়ে যাবে, অবাক হবেন। আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবিটির পাশাপাশি হাজার রকমের যৌনউদ্দীপক ছবি হাজির। কোন ওয়েবসাইটে ঢুকবেন বিশেষ প্রয়োজনে, উপরে ডানে পাশে বামে নিচে ভেসে উঠবে সুন্দরী ললনা, বয়স মোবাইল নাম্বারসহ সমস্ত বায়োডাটা আপনার অপেক্ষায়! কয়দিন উপেক্ষা করবেন? একটা ক্লিক আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য দুনিয়ায়।নিষিদ্ধ জিনিসে বড় মায়ারে, শুধু টানে চুম্বকের মত!
নিজেকে জানানোর মিশন নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়েছে ব্রাক মার্কা কিছু বই, যাতে নিজেকে জানানো হয় কতইনা সুন্দরবভাবে! দেখুন একটু শারিরিক ও মানুষিক পরিবর্তন অধ্যায়ে লিখা যখন একটি ছেলে বা মেয়ে দশ বারো বছর বয়সে পৌঁছায় তখন তার উচ্চতা বাড়ে, মাসিক শুরু হয়, স্তন বড় হয় , বগলে এবং ……চুল গজায়”’! দৈহিক মিলনের ফলে মেয়েদের পেটে বাচ্ছা আসে, সতী পর্দা কি? প্রথম মিলনে সব মেয়েদের রক্ত পড়ে, বাচ্ছা কিভাবে হয় তার বর্ণনা, কন্ডম বা খাবার বড়ি ব্যবহার কেন? বুঝুন অবস্থা! ছোট থেকেই সব কলাকৌশল শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে নিজেকে জানো ভণ্ডামি শিরোনামে।ব্রাকের কিছু বই পড়ে অভিভাবকদের জিজ্ঞেস করি, এতো প্রাইমারি স্কুল থাকতে আপনারা বাচ্ছাদের ব্রাকে পাঠান কেন? বলে বাবা, ব্রাকে খরচ কম, যত্ন নেয় বেশি, সব খরচ তারাই বহন করে, তাই! মাগনা জিনিসের আদা লাভ। হ্যাঁ, লাভই তো, ছোট্ট বয়সেই ঝোলা ভর্তি যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ে যৌন বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে।
আর মেয়ে শিশুদেরকেও এমনসব পোশাক পরাচ্ছে, যার কারণে ছোটছোট মেয়ে শিশুরাও ধর্ষণের হাত থেকে বাদ যাচ্ছেনা। ‘হোটেলে আটকে শিশু ধর্ষণ’, ‘শিশু ধর্ষনের অভিযোগে ইমাম গ্রেপ্তার’, ‘ঝিকরগাছায় শিশু ধর্ষনের অভিযোগে আটক এক’, বেড়ায় সাত বছরের শিশু ধর্ষন’ এই সব পত্রিকার কিছু শিরোনাম।আপ্নারা জানেন কিছুদিন আগেও শিশুসাহিত্যিক টীপু কিবরিয়া গ্রেফতার হন নয় বছর ধরে পথ শিশুদের নিয়ে ব্লু ফিল তৈরি করার অভিযোগে।এক শ্রেণীর লোক পুরুষের জন্য যৌনতাকে শুধু যুবতি মেয়েদের অর্ধ নগ্ন নগ্ন উপস্থাপনে ক্ষান্ত হয়নি বরং শিশুদেরকেও সে কাতারে টেনে নিয়ে আসলেন। যার কারণে শিশুরাও বাদ যাচ্ছেনা নিষ্ঠুর ধর্ষণের হাত থেকে।শিশুদের আদর করতে গেলেও ভয় হয় যে, ঐ সব কুলাঙ্গারদের জন্য আমাকেও না জানি বাচ্ছার মা সন্দেহের চোখে দেখে!
আপনি যখন এইসবের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তারা আপনাকে বলবে আপনি ব্যাকডেটেড, গেয়ো ভূত! সংকীর্ণমণা! তারা উদার! তাইত মা ছেলে বাবা মেয়ে একসাথে বসে ইংলিশ মুভি টাইটানিকের সেই দৃশ্য, কেট উইন্সলেটের সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে রোমান্টিক পেইন্টিংযে ধরা দেয়া খুব মজা করেই উপভোগ করে থাকে। আপনি আসলেই ব্যাকডেটেড তাদের মত আধুনিক হতে পারেননি। তবে আপনি যা হয়েছেন তারা তা হতে পারেনি। আপনি ভালোকে ভালো আর খারাপকে খারাপ জ্ঞান করতে শিখেছেন। আধুনিকতার নামে মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেননি। যৌনতার ভয়াল থাবা আপনাকে অবাধ যৌনতার কাছে বশ্যতা স্বীকার করাতে পারেনি। আপনার সন্তুষ্টির জায়গাটা এইখানেই। স্রোতের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করানোতেই রয়েছে বীরত্ব, স্রোতের সাথে মিশে যাওয়াতে কোন বীরত্ব নেই, আছে বরং কাপুরুষতা।
স্রোতের বিপরীতে যখন দাঁড়িয়েছেন, দাঁড়িয়েই থাকুন। আপনার সাহসী দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অনেকেই আসবে আপনার পাশে, ‘নিজেকে জানো’, ‘জানতে হবে জানাতে হবে’ নামে যৌনতার সকল ধরণের বিস্তার রোধ করবে। আসুন সচেতন হই, সবকিছুতে অন্যের অনুসরণ করলে ব্যক্তিত্ব বলতে কিছু থাকে? ভারত, পশ্চিমা বিশ্ব, কথিত প্রগতিবাদীরা যেভাবে নাচাবেন আপনারাও সেভাবে নাচলে কেমন করে হবে আপনার খারাপ পোষাক পরা, খারাপভাবে চলার মধ্যে খারাপ উদ্দেশ্য না থাকতে পারে (হতে পারে অন্যের দেখাদেখি আপনি পরছেন অথবা কিছু করছেন) কিন্তু তাদের আছে যারা আপনাদের ধ্বংসের পথে যাবার উপায় উপকরণ সরবরাহ করছে। তাই সুন্দর কোন কিছু দেখলেই গলে যাবেন না। আগে বুঝুন, তা আপনার জন্য ক্ষতিকর কিনা।তারপরেই ব্যবহার করুন। নিজেকে অপসংস্কৃতির গোলামে পরিণত করবেন না!
------সালাউদ্দিন
বিষয়: বিবিধ
৫৪৭৯ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পৃথিবীর অন্য প্রানিগুলির তো কোন স্কুল নাই কিন্তু তারা যেীনতা শিথে নেয় স্বাভাবিক রিফ্লেকস থেকে।
স্রোতের বিপরীতে যখন দাড়িয়েছেন, দাড়িয়েই থাকুন, আপনার সাহসী দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অনেকেই আসবে আপনার পাশে।।
এ দুটি কথা আসলেই অসাধারণ...
অনেক ধন্যবাদ।।
"এক লোক কিছু দিনের জন্য বাড়ির বাইরে যাবে। তাই অন্য একটি লোক নিয়োগ করলো তার বউয়ের পিছে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য। কাজ শেষ করে এসে লোকটিকে বলছে কি দেখলি বল। লোকটি বলল আপনি যাওয়ার পর পরই এক লোক আসলো, ম্যাডাম ওই লোকটার সাথে সারাদিন ঘুরলো ফিরল, রাতে আইসা দুইজনই বেডরুমে ঢুকে লাইট অফ করে দিল। একই কাজ গতকাল পর্যন্ত করছে। লোকটা তো ভীষণ রেগে নিয়োগ দেওয়া লোকটিকে গালা গালি শুরু করে দিল আর বলল ওরে হারামজাদা এগুলা তো আমি আগেও দেখছি, তোরে রাখছি এরপরে কি করে দেখার জন্য।"
তো কাজী সাহেবকে বলি আপনি তো সত্য তুলে ধরেছেন কিন্তু আমরা বা বলতে পারেন আমি বিশ্বাস করিনা শিশুটির পেটে দুধ গেছে কিনা।
সত্য তুলে ধরা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
তবে হবে যেটা তাদের নাম স্মরণে থাকবে পরবর্তীতে এসবের জন্য।
তাহলে তো নায়ক নায়িকারা কিভাবে হিসু পটি করে সেই দৃশ্যও ক্যামেরায় ধারণ করে বড় পর্দায় দেখানো উচিত। আগের দিনের সিনেমায় যেমন চুমোর দৃশ্য আড়াল করতে ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো, তেমনি এই দৃশ্য আড়াল করতে নিউজপেপার বা ফ্ল্যাশ বাটন ইত্যাদি ব্যবহারও করা যেতে পারে।
বস্তুত এগুলোকেই বলে হিপোক্রেসি বা ভন্ডামি। প্রাকৃতিক ভাবে শিশুকে যেমন বলে দিতে হয় না সে কিভাবে তার খাদ্যটা গ্রহন করবে, কিভাবে বর্জ্য ত্যাগ করবে; সেভাবে এটাও বলে দিতে হয় না নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করবে। এমনকি আমাজনের গহীন অরণ্যে বসবাসকারী বস্ত্র অচেতন মানুষগুলোও এ ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত।
যারা এই ধরনের বই রচনা করেছেন, খুব ইচ্ছা তাদের এই প্রশ্ন করতে যে, তাদের মা-নানী-দাদীদের আমলে তো এই বইগুলো ছিলো না। তখনকি তারা এইগুলো সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেন নি? নাকি তারা নিজেরা তাদের অভিভাবকদের এতদসংক্রান্ত দূর্দশা (অনেক কথাই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, শালিনতার দিকে লক্ষ্য রেখে বললাম না) দেখেই এগুলো রচনা ও প্রচারে উদ্যোগী হয়েছেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন