আমার জন্য যার অশ্রু ঝরে, তাকে ভুলিব কেমন করে
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১৭ জুলাই, ২০১৪, ০১:০৬:৫৩ রাত
নিজেও কেঁদেছেন, আমাকেও কাঁদিয়েছেন। সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছেন, যতক্ষণ ছিলেন পাশে। মানুষ এতো ভাল হয় কেমন করে। কারাগারে বসে পরীক্ষা দিতে পারবো কি পারবোনা, যখন সে ভাবনায় বুদ হয়ে আছি, তখন তিনি এলেন, সাথে ছিল ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক। চারদিন পরীক্ষা হল, চারদিনই তিনি এলেন।
তিনি আর কেউ নন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার ভবনের কর্মকর্তা। আমার অসহায়ত্ব দেখে বারবার কথার ফাঁকে কেঁদে দিতেন। বলতেন, "বাবা, আমি বুঝি, তোমার মত ছেলে কারাগারে আসার মত অপরাধ কখনই করতে পারনা। মন থেকে দোয়া করি, তাড়াতাড়ি মুক্তি পাও। আর শোন, কারাগারে বসে কিছু কর, যেমন, বই পড়া, লিখালিখি, চাকুরীর পড়াশোনা ইত্যাদি। মন খারাপ করোনা, তোমার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করি। আর হ্যাঁ, তোমার পরীক্ষা দেয়া দেখে আমি খুব খুশি, অনেকে দেখি কারাগারে বসে কিছু লিখতে পারেনা, তুমি খুব ভাল লিখে যাচ্ছ"।
আমার মনে পড়লে হাসি আসে, গল্প করতে করতে হঠাৎ বলে উঠতেন, বাবা, আমি তোমার লেখায় ডিস্টার্ব করছি, আর কথা বলবোনা, তুমি লিখ। হরতালের কারণে দুই দিন ক্লাস শিক্ষক যেতে না পারলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার পরীক্ষা নিতে গেলেন। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, হরতালে কেমন করে আসলেন, মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, "আল্লাহ নিয়ে এসেছেন,আমি না আসলে তুমি পরীক্ষা দিতে পারবেনা, একটা বছর লস হবে, আমি কেমন করে তোমার এই সর্বনাশ করতে পারি"। আমি লা জবাব! শুধুই শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম।
মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল, উনাকে আবেগে আপ্লুত কন্ঠে বিষয়টি বললাম। কারা গেইটে ঢোকার সময় উনাদেরকেও পকেট চেক করে, তবু বললেন, দ্রুত একটা চিরকুট লিখ, তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে বাবা মার কাছে পৌঁছে দিবো। তাই করলাম। সেদিন ভাইয়ের বেদনার্ত চেহারা দেখে অনেক কষ্টে অশ্রু সংবরণ করেছিলাম।
বাবা তূল্য মানুষটির কথা প্রায় মনে পড়ে, তবে আজ বেশিই পড়ল, তাই উনাকে নিয়ে লিখের লোভ সামলাতে পারলাম না। আল্লাহ উনাকে নেক হায়াত দারজ করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৮ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর, ভালবাসাপূর্ণ মন্তব্যদানের জন্য শোকরিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন