অদ্ভূত দায়িত্ববান পুলিশ মহোদয়
লিখেছেন লিখেছেন গাজী সালাউদ্দিন ১২ জুন, ২০১৪, ০২:১৩:৫৯ রাত
কয়েকদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশঃ শাহবাগে রিক্সায় প্রেমিক যুগল আপত্তিকর অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক। আপত্তিকর অবস্থার কথাটি শোনেও অবাক হইনি, বরং অবাক হয়েছি এটা ভেবে যে, রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে কাউকে অপমান-অপদস্থ করা, পরিবারে উক্ত ছেলে বা মেয়েকে দুশ্চরিত্রা হিসেবে উপস্থাপন করা, অত:পর মিডিয়াকে খবর দিয়ে সারাদেশে পাঠক-দর্শকদের আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিনা।
অশ্লীলতা, বেহায়াপনা রোধে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা থাকবে স্বাভাবিক, কিন্তু প্রশ্ন হল তারা সে ভূমিকা কতটুকু পালন করছে? কিছু বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের কাছে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে যাবে-
শাহবাগ থানার পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং রমনা পার্ক। জনবহুল ব্যস্ততম শহরে কাজের ফাঁকে কিছু সময় হাওয়া বাতাস খেয়ে জিরিয়ে নেয়ার পর্যাপ্ত যায়গা কোথায়। যা দু'চারটা উদ্যান আছে, তাতেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।কিন্তু আফসোস, উদ্যান এখন মিনি পতিতালয় হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এখন রুচিশীল মানুষেরা উদ্যানে আসতে
চায়না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যখন প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডলাডলির নিরাপদ স্থানে পরিণত, গ্ল্যামার হারানো পড়ন্ত যৌবনে পদার্পন করা পৌঢ় বয়স্ক পতিতারা যখন খদ্দর খুঁজে ট্রিপ দিয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন নিয়ে এসে এসব নোংরামি দেখে মানুষের লজ্জায় মাথায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। এতো কাছে থেকেও পুলিশ মহোদয়ের কি নজরে পড়ছেনা? আর উদ্যানে ঘটে যাওয়া অশ্লীলতা থামানোর ইচ্ছা যদি নাই থাকে, তাহলে রিক্সায় বসা প্রেমিক যুগলকে কেন হেনস্থা করা? রাস্তা যেমন পাবলিক প্লেস, উদ্যান তেমনি পাবলিক প্লেস। রাস্তায় একশন নেয়া গেলে উদ্যানে নয় কেন?
তারপর রমনা, বলদা গার্ডেন, আহসান মঞ্জিল, শহীদ মিনার, ভিক্টরিয়া পার্ক, স্মৃতিসৌধ, চন্দ্রীমা উদ্যান, মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ধানমন্ডি লেকের পাড়, রবীন্দ্র সরবোরে যারা একবারের জন্য হলেও ঢু মেরেছেন, তারা দেখে থাকবেন কি পরিমাণ অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-বেশ্যাবৃত্তিতে ভরে আছে উদ্যানগুলো।
তবুও পুলিশ নির্বিকার। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান চালাতে দেখা যায়, তবে উদ্দ্যশ্য বেহায়াপনা রোধ নয়, বরং সামান্য বেতনের চাকুরির পাশাপাশি কিছু উপড়ি পাওনার সহজ ব্যবস্থা করা। পকেট থেকে টাকা পয়সা মোবাইল কেড়ে নেয়া, সবার সামনে দেহ ব্যবসায়ীদের কিছু চর থাপ্পর দিয়ে টাকার বিনিময়ে আবার দেহ ব্যাবসায় ছেড়ে দেওয়া, যা থেকে একটা পার্সেন্টেইজ পুলিশও পেয়ে থাকে।
ঢাকা শহরে যে অসংখ্য আবাসিক হোটেল আছে, পুলিশ খুব করেই জানে, সেগুলোতে রমরমা দেহব্যাবসা চলছে।
এখানেও পুলিশ কেন নির্বিকার? কারণ সহজ, এখানেও পুলিশ লাভের একটা বিরাট অংশ পেয়ে থাকে। আর মাঝে মধ্যে মাস্তি করার খায়েশ ওঠলে বিনা পয়সায় পুলিশি ক্ষমতার বলে ললনাদের সাথে সুখ করে আসে। টাকা, নারী, মাদকের কাছে যদি পুলিশ তাদের পবিত্র দায়িত্ব বিসর্জন দিতে পারে, তাহলে রাস্তায় প্রেমিক যুগল কে ধরে সবার সামনে এনে দায়িত্ববান সাজার দরকার কি????
কাজের কাজ করেনা অহেতুক সময় নষ্ট! পুলিশের দায়িত্ব যদি হয় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ, অশ্লীলতা রোধ, তাহলে দু একজন ছেলে মেয়েকে শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে লাভ নেই, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে এমন সকল যায়গায়, যেখানকার মাটি, বায়ু, ইট বালি সিমেন্ট অবৈধ মেলামেশায় ধূষিত হয়ে আছে।
সর্বোপরি আশা করব, পুলিশ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথা সময়ে যথাযথভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি, স্থান, প্রতিষ্ঠানের উপর সমভাবে প্রয়োগ করবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
এসব অপকর্মের মূল গডফাদার যে ক্ষমতাসীনরা :(
হরেক রকম চোরের মেলা বাংলাদেশে। কেউ গরুর হাটে গরু চোর, কেউ পরিবহনের পকেট মার, কেউবা আবার যা পাই তা খাই জাতীয় চোর। এসব চোরদের গায়ে দুর্গন্ধ, বগলে অপরিস্কার লোম আর পরনে ইস্ত্রিবিহীন বস্ত্র। ওদের চোখে দেখা যায়, হাত বাড়ালে ছোয়া যায় এবং চাইলে যখন তখন ব্যক্তি ও সরকারী আইনের আওতায় আনা যায়। এক কথায় ওরা আনওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। চোখের সামনে একদল ক্রিমিনাল অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি করবে আর আমাদের তা হজম করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয় এ জন্যে ক্ষমতায় পাঠানো হয়না? আফটার অল জনগণের দেখভাল করার দায়িত্বটা যে তাদেরই! সে দায়িত্ব ’সাহসিকতার’ সাথে পালনের জন্যেই বোধহয় এসব চোর, ডাকাতদের নেয়া হয় বধ্যভূমিতে, আর রাতের অন্ধকারে চোরের মত হত্যা করে ছড়িয়ে দেয় ভূয়া, মিথ্যা আর বানোয়াট কাহিনী। বাংলাদেশে কে বেশি বড় চোর, একজন পুলিশ না নয়ারহাট রুটের একজন পকেটমার? কে বেশি সন্ত্রাসী, রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা একজন বিপদগামী যুবক, না অস্ত্র হাতে একজন পুলিশ, RAB অথবা সেনাবাহিনী? এখানে কে কাকে মারা উচিৎ ছিল, পুলিশ কর্তৃক একজন ছিনতাইকারীকে, না জনতা কর্তৃক পতিতার আঁচল ছিনতাইকারী একজন পুলিশকে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন