নিজ চোখে দেখা 5-6 ই মে শাপলা ট্রাজেডি ও আমি।

লিখেছেন লিখেছেন ওবাইদুল্লাহ ওবাইদ ০৫ মে, ২০১৪, ০২:৪৬:০২ দুপুর

আজ সেই ঐতিহাসিক পাঁচ -ই মে। গত বছর এ দিনে বাংলাদেশের অরাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক, ও সর্বাধীক জন প্রিয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকে ঢাকায় সর্বাত্মক অবরোধ পালন করা হয়। এ দিন রাজধানী ঢাকা পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্তা ও বিশ্বাস পুনস্থাপন, আল্লাহ ও রাসুল (স.) -এর কটূক্তি করিদের সর্বোচ্ছ শাস্তির বিধান রেখে আইন পাশ সহ মোট তের দফা দাবী নিয়ে ঢাকা অবরোধ করে হেফাজতে ইসলাম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যম হেফাজতের ব্যানারে লাখ লাখ ধর্ম প্রাণ নবী প্রেমিকের স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ লাইভ সম্প্রাচার করে। কুত্তালীগের লেলিয়ে দেয়া কুকুর গুলোর শত বাঁধা বিপত্তির পরও হেফাজতের অমন কঠোর অবস্থান তাদেরকে খুব ভাবিয়ে তুলে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নানা ফন্দি আঁটে কুকুর গুলো। এই অভিশপ্ত জানোয়ার গুলোকে কুকুরের সাথে তুলনা করায় হয়তো কুকুরও আমাকে অভিশাপ দিবে। দাবি আদায়ে কিছুটা নমনিয় ভাব দেখায় হাসিনা ও তার ধুসররা। কিন্তু নবী প্রেমের চুড়ান্ত আশেক ও পাগল গুলোকে কি এতে শান্ত করা যায়? এত্তো সহজে? কি করে ভাবলে? তারা চায় নগদ ফলাফল। হাসিনার ভন্ডামী তাদের সুস্পষ্ট জানা। অনড় অবস্থানে থেকে যায় তারা। দিন গড়িয়ে প্রায় সকলে ক্লান্ত শ্রান্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসা মানুষ গুলো তো সারা রাত গাড়িতে কাটিয়েছে। পর দিন সকালে রাজ পথে একে বারে বিকেল পর্যন্ত। তাদের কি ক্লান্ত হতে নেই? তবু তারা ক্লান্ত নয়। প্রতিটি মুহুর্ত তাদের গর্জন, শ্লোগান, আর মিছিলে মুখরিত পুরো ঢাকা শহর। বেলা প্রায় শেষ প্রান্তে। আমিরে হেফাজতের নির্দেশে মতিঝিল শাপলা চত্বর অভিমুখে হেফাজত বাহিনীর যাত্রা। শুরু হয় সমাবেশ। পদে পদে কুকুর গুলো সমাবেশ গামি নিরীহ শান্তি প্রিয় জনতাকে বাঁধা দেয়। রুখে দিতে চেষ্টা করে তাদের। কিন্তু কি পেড়েছে? না... না... না! শহিদ হয়ে হলেও তারা সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছেছে। একে একে চৌদ্দটি শহিদের লাশ মঞ্চে এসে পৌঁছেছে। মাইক থেকে বেশে আসছে অগ্নি ঝরা বয়ান ও জিকির। শুধু কি তাই? আশ পাশ থেকে প্রায় পাঁচ মিনিট পর পর গোলা বারুদের বিকট আওয়াজও কিন্তু বেশে আসছে। এভাবে রাত দুইটা। তারপরের বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। আমি তো সেই হতোভাগা শাপলা চত্বরের একে বারে মধ্যখানে অবস্থানে করেও শহিদি তৃষ্ণা মিটাতে পারিনি। পারিনি ওদের হাত থেকে কোন শহিদি ভাইয়ের লাশ ছিনিয়ে আনতে। দেখেছি তারা কিভাবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দিয়ে শাপলা চত্বর ধোয়ে দিতে। কই সেখানে তো কোন ময়লা ছিল না। সেখানে তো আমরা শুয়েছিলাম। তাহলে কি ধোল তারা? কেনও বা সিটি কর্পোরেশনের ময়লা পরিস্কার কারি গাড়ি গুলোকে দেখতে পেলাম? শেয়ার মার্কেটের সামনে দিয়ে এতো রাত্রে খালি ট্রাক গুলো শাপলার দিকে কেন ধেয়ে আসলো। এসব তো আমি নিজ চোখে দেখেছি। সকাল ছয়টার সময় মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে কাঁচপুর ব্রীজ অভিমুখে রওয়ানা দেই। মাদানি নগর যখন ফের কুত্তালীগের সাথে সংঘর্ষ শুরো হয় তখন মাদানি নগরের আগে কিছু লোক আমাকে আটকে দেয়। সে পথে যেতে নিষেধ করে। আউট সাইডে একটি রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কিছু দূর হাঁটার পর দুটো এ্যাম্ভুলেন্স দেখতে পাই। যা খুব দ্রুত গ্রাম্য রোড দিয় চলে যাচ্ছে। লক্ষ করে দেখলাম দুটো গাড়িই লাশ ভর্তি। গ্লাস দিয়ে এতোটুকু বুঝা গেল যে সবার গায়ে সাদা জামা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে নিয়ে যাচ্ছে কিছু জানি না। তখন আমি একা হাঁটছিলাম। ঢাকাবাসীর ভালোবাসা বর্ণনাতীত। গ্রামের মহিলা গুলো আমাকে নিজ সন্তানের মতো বুকে জড়িয়ে ধরেছিল। কোথাও কোন আঘাত হয়েছে কিনা পকেটে টাকা আছে কিনা সব খবর নিল। চেহারায় টিয়ার সেল পড়ে চামড়া ওঠে গিয়েছিল। সেটার জন্যও তারা ঔষধ এনে দিয়েছে। দুপুরে আমার জন্য বেশ আয়োজন। পেট পুরে খেয়ে আবার রওয়ানা দিলাম আমার গন্তব্যে। প্রায় মাগরিবের সময় এসে মক্কি নগর মাদ্রাসায় এসে পৌঁছি। সাথিরা যেভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো তাতে বেশ অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম তারা নাকি পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলে আমি না ফেরার দেশে চলে গেছি। তাই হঠাত্‍ আমাকে দেখে তাদের এ প্রতিক্রিয়া।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217746
০৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩০
মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। লিখেছেন : ভালো লাগলো
217779
০৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
বেআক্কেল লিখেছেন : আজকের দিনটি অবশ্যই খারাপ দিন। তবে আমনের সাথে কয়েকটি কয়েকটি কথায় একমত হতি পারলুম না। আমনে লিখছেন,

বাংলাদেশের অরাজনৈতিক,
আধ্যাত্মিক, ও
সর্বাধীক জন প্রিয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম........।

অরাজনৈতিক হয়ে রাজনৈতক শক্তির মোকাবেলা করতে যাওয়া ভুল হয়েছ, নতুবা চুপ থাকা উচিত ছিল।

আধ্যাত্মিক হলে, তার জ্ঞানের গভীরতা আরো বেশী হওয়া দরকার ছিল। এই সমাজের প্রয়োজন পুরনের মত আধ্যত্মিকতা ওনার নাই, যতটুকু ছিল তার ছাত্রদের।


217844
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৬
পুস্পিতা লিখেছেন : এসব শাহাদাত বৃথা যাবে না। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা পরাজিত হবেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File