গডফাদারের স্বরূপ

লিখেছেন লিখেছেন ইবনেআদম ০৮ মে, ২০১৪, ০৫:৫৬:৩৮ বিকাল



বর্তমান সময়ে গডফাদার একটি খুবই আলোচিত শব্দ ।আমাদের দেশে গডফাদার বলতে সমাজে যারা সন্ত্রাসীদের হোতা বা যারা সন্ত্রাস পরিচালনা করে তাদেরকেই বুঝানো হয়ে থাকে।এই গডফাদারদের ভয়ে সাধারণ মানুষ সবসময় থাকে আতংকে এবং তাদেরকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। কিন্তু গডফাদারদের কি কাজ বা গডফাদার কি কি কাজ করে এবং তাদের আয়ের উৎস বা কি, গরীবের ঘরের সন্তান হয়েও কিভাবে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় সে ব্যাপারে জানা আমাদের একান্ত জরুরী।

গডফাদার একদিনেই কিন্তু বনে যায় না, সে নিজেকে ধাপে ধাপে তৈরী করে নেয়। আমাদের দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় একজন করে গডফাদার আছে। এরা সব সময় কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকে। গডফাদারের মধ্যে কিছু থাকে শিক্ষিত আবার কিছু থাকে অশিক্ষিত।

একজন গডফাদার মাধ্যমিক স্কুল পাড়ি দিয়ে যখন কলেজে ভর্তি হয় তখন থেকেই সে গডফাদার হবার স্বপ্ন দেখে। তখন সে ধীরে ধীরে ছাত্র রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়ে এবং তার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কলেজ সভাপতি, সম্পাদক হবার বা কলেজের ভিপি হবার জন্য জোর লবিং করে। জোর তদবির চালিয়ে এবং পেশী শক্তি প্রদর্শন করে এক সময় তার কাংখিত পদটি পেয়ে যায়। পদ পাবার পর সে নিজেস্ব একটি ক্যাডার বাহিনী গঠন করে। তখন থেকেই তার দাপট শুরু হয় এবং বিরোধী ছাত্রগ্রুপের নেতা কমীদের উপর শুরু করে নির্যাতন, এক পর্যায়ে তাদেরকে ক্যাম্পাস ত্যাগে বাধ্য করে।শিক্ষকদেরকেও সে মান্য করে না।বিভিন্ন সময় তাদেরকে হুমকি দেয়। কোন প্রতিপক্ষ ছাত্রগ্রুপ না থাকায় সে শুরু করে ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডার বাজী এবং কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দিবস পালন উপলক্ষে নিরীহ ছাত্রদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। নবীন বরন অনুষ্ঠানের নামে কিছু শিল্পী এনে গানবাদ্য পরিবেশন করায় এবং এ উপলক্ষে চাঁদা আদায় করে তার ক্যাডার বাহীনিসহ ভাগ বাটোয়ার করে খায়।এই ভাবে চলে তার কলেজ জীবন, কলেজ জীবন শেষ হলে তখন সে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। বা ভর্ত্তি হলেও নিজ এলাকাতে থাকে, কারণ তার এলাকায় যাতে অন্য কেউ আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।

পুরোপুরি গডফাদার বনে যাওয়ার পর সে এলাকায় তার প্রতিপক্ষ থাকলে তাকে কোনঠাসা করে রাখে। তার দলের কোন প্রতিদ্বন্ধী থাকলে তাকে শেষ করে দেয়।তার পর সে স্বপ্ন দেখে তার দলের সম্পাদক বা সভাপতি হবার। পেশী শক্তি ব্যবহার করে এক সময় সে পদও পেয়ে যায়। তখন সে এলাকা বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ইত্যাদি হবার জন্য তদবীর চালায়। দাপট দেখিয়ে এ পদটিও সে পেয়ে যায়। এ পদগুলো পাবার পর সে এম. পি, মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

পদ পদবী পাবার পর গডফাদারের কাজের পরিধি বেড়ে যায়। তার সাথে সাথে আয় ও বেড়ে যায়।রাতারাতি বনে যায় কোটিপতি। এবার সে বিভিন্ন বাজার থেকে টোল আদায় করে, ট্রাক, বাস, সিএনজি ষ্ট্যান্ড থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায় করে।বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ড থেকে চাঁদা আদায় করে , চাঁদা নেয় বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও। কেউ ঘর বাড়ি নির্মাণ করলে তার থেকেও মোটা অংকের টাকা দাবী করে। চোরাচালানীদের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। জায়গা-জমির শালীস, ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি মীমাংসার নামেও টাকা আয় করে। সবচেয়ে মোটা অংকের আয় আসে টেন্ডার বাজীর মাধ্যমে।

গডফাদারের এই সব কাজে কেউ যদি বাধা দেয় বা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা হলে তাকে অপহরন, গুম আর খুনের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয় ।

গডফাদারের এই সব কাজে কেউ বাধা দেয়ার সাহস করে না। বছরকে বছর সে তার স্বর্গরাজ্য চালিয়ে যায় অনায়াসে। যেহেতু দলের প্রয়োজনে সে বড় বড় কেন্দ্রীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে তাই সে থানা পুলিশকেও কেয়ার করে না।আবার থানাকেও ম্যানেজ করে নেয় এই দুষ্ট গডফাদার।

আসুন আমরা সবাই এই গডফাদারদের সরূপ উম্মোচন করি আর তাদেরকে ঘৃণা করি। কারন তাদেরকে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার মতো ক্ষমতা জনসাধারনের নাই।আজ যদি আমাদের দেশে আইনের শাসন থাকতো তাহলে এই সব গডফাদার জন্মগ্রহন করতো না।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

219114
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৪
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আমাদের দেশ এখন আজ গডফাদারের জন্য। তাই সবাই গড় ফাদার হতে তৈরী হচ্ছে।
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
166964
ইবনেআদম লিখেছেন : আসুন আমরা সবাই গডফাদারদের ঘৃণা করি।
219121
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
বুঝিনা লিখেছেন : প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আমাদের দেশ এখন আজ গডফাদারের জন্য। তাই সবাই গড় ফাদার হতে তৈরী হচ্ছে।
219126
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
সাদাচোখে লিখেছেন : বাংলাদেশে কোন গডফাদার নেই। বলতে পারেন বড়জোর গডচাইল্ড ও গডগ্রান্ডচাইল্ড আছে। আপনি যাদের গডফাদার বলছেন - তারা মূলতঃ গডমাদারের পাইকপেয়াদা, কুলি মজুর শ্রেনীর গডচাইল্ড ও গডগ্রান্ডচাইল্ড - বই অন্য কিছুই নয়।

বাংলাদেশীদের নাফরমানীর জন্য, আকন্ঠ পাপাচারে লিপ্ত হবার জন্য - আল্লাহ এ দেশবাসীর কপালে ক্লিয়ার হারাম রূপী গডমাদারকে নিয়তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন যিনি গণভবনে থাকেন এবং সাতটা জলজ্যান্ত ব্যাক্তিকে র‍্যাব তুলে নেওয়ার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গডচাইল্ডের মারফত অবগত হতে পারেন। এবং এই গডমাদারের চেহারা উন্মোচনের মাধ্যমে আল্লাহ বাংলাদেশের ভাল লোকগুলোকে খারাপলোকগুলো হতে পার্থক্য করছেন - সো আপনি দেখবেন যাকে আপাতঃ ভাল লোক মনে হচ্ছে - পরীক্ষার সন্মুখীন হয়ে তিনি খারাপ বনে যাচ্ছেন। আল্লাহ আপনাকে আমাকে আমাদের সকলকে এই ফ্যতনা রূপী গডমাদারের কবল হতে রক্ষা করুন।

219128
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : সুন্দর করে গডফাদারদের নতুন করে জানলাম।

আমি ভাই ছিঁচকে চোর
গডফাদারকে কেম্নে রাখি খবর
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
166967
ইবনেআদম লিখেছেন : ছিঁচকে চোর থেকেই তো পুকুর চোর হয়ে যায়....আর ছিঁচকে চোর তো গডফাদারের আন্ডারে .....
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৫
166973
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : Tongue Tongue হাতুড়ি পেটা করমু আপনারে Time Out Time Out Time Out
219143
০৮ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
গ্রাম থেকে লিখেছেন : এই গডফাদারদের আবার একজন গুডমাদার আছে।
219812
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৪১
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক লিখেছেন : গডফাদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হ্ওয়া প্রয়োজন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File