ভাষা সংস্কৃতি আগ্রাসন ও দখল

লিখেছেন লিখেছেন দারোগা সাহেব ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:৫৭:১১ রাত

ঠান্ডা লাগছিল তাই নামাজ শেষে মসজিদের অদূরে রোঁদে দাঁড়িয়েছিলাম । বছর দশেকের দুইটি ছেলে আর একটি মেয়ে (স্টাফের ছেলেমেয়ে) আমার একেবারে কাছে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল । আমি পুকুরে তেঁলাপিয়া মাছের আধিক্য আর ভেসে ভেসে পানি খাওয়া দেখছিলাম তাই তাদের দিকে এতটা নজর দেইনি । কিন্তু কেন জানি মনে হল পাশের ছেলেমেয়েরা যে ভাষায় কথা বলছে তা বাংলা বা আঞ্চলিক কোন বাংলা নয় । আমি কৌতুহল বশতঃ তাদের আলাপচারিতার দিকে মনযোগী হলাম পরক্ষণেই বোঝতে পারলাম এই শিশুগুলো মূলত হিন্দিতে পরস্পর কথোপোকথন করছে এবং অনর্গল ভাবেই ।

তুরস্কে খাঁটি সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠা এবং অন্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনা থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে চলমান খেলাফত ব্যবস্থার উচ্ছেদকারী তৎকালীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট কামাল পাশা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে জোর করে তুর্কিভাষা থেকে আরবী ও ফার্সি শব্দগুলোকে বিতারন করেন । এমনকি তিনি আরবীতে আযান নিষিদ্ধ করে তুর্কি ভাষায় তা প্রদানের ডিক্রি জারী করেন । এসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল তুর্কি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ইসলাম ও আরবের প্রভাবকে চিরতরে দূরীভুত করা । পরবর্তীতে তুরস্কের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেস এ ডিক্রী বাতিল করলে সংবিধান লংঘনের অভিযোগে সেকুলারিষ্টরা তাকে ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলিয়ে হত্যা করে ।

বছর দেড়েক আগে একটি জাতীয় পত্রিকার উপসম্পাদকীয় মারফত বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবী, ফার্সি ও তুর্কি শব্দগুলোকে অপসারণ করে তদস্থলে সংস্কৃত শব্দ প্রতিস্থাপনে একটি মহলের অপপ্রয়াস সম্পর্কে জানতে পারি ।

হিন্দির অব্যাহত আক্রমনে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় বাংলা বিলুপ্তপ্রায় ভাষায় পরিণত হতে যাচ্ছে ।

এজন্য আকাশ সংস্কৃতির অব্যাহত আক্রমন যেমন দায়ী তেমনি দায়ী হিন্দিকে লিঙ্গুয়া ফ্রাংকোয়া (সার্বজনীন ভাষা) হিসেবে প্রতিষ্ঠায় ওখানকার বুদ্ধীজীবীদের ইচ্ছা । পাশের দেশের বাঙ্গালি বুদ্ধীজীবী মহল বাংলার স্থলে হিন্দিকে প্রতিস্থাপনে এগিয়ে এসেছেন এবং সর্বাত্মক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ছেন মূলতঃ সর্বভারতীয় একতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য থেকে । এক্ষেত্রে বাংলা এবং বাঙ্গালিয়ানা উনাদের পথ আগলে দাঁড়াতে পারেনি । উনারা এইসব আবেগী চিন্তা ও চেতনাকে নিজেদের মধ্য থেকে ঝেঁটে বিদায় করতে উদ্যত হয়েছেন ।

কলিকাতার বুদ্ধীজীবীরা সংস্কৃত শব্দ বহুল ভাষা হিন্দিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন ।

বুদ্ধিজীবীর মুখোশধারী এদেশীয় কংসমামারা আমাদেরকে খাঁটি বাঙ্গালিতে পরিণত করার কসম খেয়ে মাঠে নেমেছেন । আপাত দৃষ্টিতে উনাদের কার্যক্রম নিরেট জাতীয়তাবাদী মনে হলেও এর লক্ষ্য উদ্দশ্য অত্যন্ত সূদুর প্রসারী ।

উনাদের চোখে ৫২, ৫৬, ৬৯ ও ৭১ এ কঠিন কঠিন সব পরীক্ষা দিয়েও আমরা খাঁটি বাঙ্গালি হতে পারিনি । আমাদেরকে খাঁটি বাঙ্গালি করার একাধিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে উনারা এবার আমাদের ভাষা থেকে প্রায় হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত আরবী, ফার্সি ও তুর্কি শব্দগুলোকে উচ্ছেদের মহান ব্রত নিয়েছেন । আর তদস্থলে আর্য ভাষার সংস্কৃত শব্দসমূহকে প্রতিস্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন । কামাল পাশা যদিও গোঁড়া সেকুলারিষ্ট এবং তুর্কি জাতীয়াতাবাদী চিন্তা থেকে আরবী ও ফার্সি শব্দগুলোকে উচ্ছেদ করেছিলেন তথাপি তদস্থলে তিনি প্রাচীন তুর্কি শব্দগুলোকেই স্থাপন করেন অন্য কোন ভাষার শব্দকে নয় । কিন্তু বুদ্ধীজীবীর মুখোশে আবৃত আমাদের কংস মামারা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সংস্কৃত শব্দগুলোকেই বেছে নিয়েছেন প্রাচীন বাংলা শব্দগুলোকে নয় । এসব কংস মামা আর কলিকাতার বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু সমগোত্রীয় । উনারা সকলেই বাঙ্গালিয়ানার আঁড়ালে মূলতঃ আসমুদ্র হিমাচল তত্ত্ব বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন যেখানে বাঙ্গালিত্ব আমাদের সামনে বেঁধে দেয়া একটি চকচকে মুলা মাত্র ।

উনারা উদ্দেশ্য হাসিলের প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ ভাষাগত শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে এদেশে কামাল পাশার পথ অবলম্ভন থেকে বিরত থেকেছেন । যেহেতু জোর জবরদস্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কামাল পাশার সেকুলারিষ্ট ও জাতীয়তাবাদী তুরুষ্ক আজ তার অতীতের দিকে ফিরে যাচ্ছে তাই তারা এদেশে কামালের দেখানো পথে হাটেননি । তারা ভাল করেই জানেন জবরদস্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কোন কিছুই স্থায়ী হয়না । তাই আমাদের সিঙ্গেল ইউনিটের দেশটিতে বিশ্বায়ণের দোহাই দিয়ে আমাদের আকাশকে উন্মোক্ত করে দিয়ে উনারা ভিনদেশী অপ-সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছেন । এর মাধ্যমে প্রথমেই হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠা ইসলামী ও বাংঙ্গালী সাংস্কৃতির সমন্বিত রুপটির শক্তিশালী ভিতকে নড়বরে করে ছেড়েছেন । অবশেষে চূড়ান্ত আঘাতের অংশ হিসেবে বই পুস্তকের ভাষা থেকে আরবী ফার্সি ও তুর্কি শব্দগুলোকে বিতারণে উদ্যোগী হয়েছেন ।

মানুষের মৃত্যু জাতির মৃত্যুর কারন নয় বরং জাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে মৃত্যু বরণ করে ।

কোন দখলদারিত্বই স্থায়ী হয়না কিন্তু মানসিক দখলদারীত্ব স্থায়ী ।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক ।

বিষয়: বিবিধ

১৪২৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305367
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০৯
মায়াবন বিহারিণী হরিণী লিখেছেন : আরবীকে রাস্ট্রভাষা করলে কেমন হয়?
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:২০
247026
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : খুব ভালো হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১১:৩৮
247037
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : @ মায়াবন বিহারিণী হরিণী খেলাঘর বাধঁতে এসেছ,আকবার ,স্বাধীনতা,জুলিয়া,
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তার এত নিক এসেছ,আকবার ,স্বাধীনতা,জুলিয়া,
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তার এত নিক
305376
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সংস্কৃত বহুল যে হিন্দি ভারতে চলছে সেটা নিয়া "থ্রি ইডিয়টস" মুভি টির "বলৎকার পে বলৎকার" অংশটুকু দেখলেই বুঝা যায় তা আসলে কত হাস্যকর। তারই অনুসরনে পরিভাষার নামে বাংলাভাষা কেও ধ্বংস করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকতার নামে ইংরেজি আর টিভি চ্যানেল এর হিন্দির মাধ্যমে ধ্বংস হচ্ছে বাংলা ভাষা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File