রঙ্গের দুনিয়া
লিখেছেন লিখেছেন দারোগা সাহেব ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:৩৯:৩৪ রাত
গত দু'দিন ব্যাপী হরতালের প্রথম দিন । তখনো কুয়াশার চাদরে অচ্ছাদিত চারদিক । হরতাল, অবরুধ এবং কনকনে শীতের কারনে দিনমজুর আর অল্প কিছু সাধারন মানুষ ব্যতীত সকালের রাস্তাঘাট বলতে গেলে একেবারেই ফাঁকা । দু একটা রিকশা ছাড়া মোটরগাড়ি বলতে মাঝে মধ্যে সাঁই করে পাশদিয়ে ছুটে চলা সিএনজি চালিত বেবেটেক্সি । সাথে ঝিরিঝিরি বাতাসের চলাচল, যেন এক মোহময় পরিবেশ।
মনে হল এমন এক মূহর্তে উষ্ঞ চায়ের পেয়ালায় কয়েকটা চুমুক মন্দ হয়না ! যেই ভাবা সেই কাজ । ডিউটি পোষ্ট থেকে ঈষত দূরে চা স্টলের বেঞ্চে বসে স্বচ্ছ গ্লাস ভর্তি করে গরম লাল চায়ের স্বাধ নিচ্ছিলাম ।
পাশের মক্তব থেকে ছোটছোট বাচ্ছাদের কিচিরমির সুরে কালেমা শিখার কোরাস ধ্বনি বারবার কানের পর্দায় এসে ঠেকছিল । আর চোখ ছিল সামনের সেমিপাঁকা দোকানঘরের ঘুলঘুলিতে চুড়ুই দম্পতির খুনুসুটির দিকে । মাঝে মধ্যে রাস্তার পাশে কড়ই গাছের ডালে বসা কুয়াশায় ভিজা জবুথবু দাঁড় কাকটিকে দেখছিলাম ।
এরুপ মনোহর পরিবেশের প্রভাবে কখন যে গ্রাম্য জীবনের স্মৃতিতে হারিয়ে গেছি বুঝতেও পারিনি ।
গ্রামের মক্তব, হুজুরের বেত, কোরাসের সাথে কোরআন তেলাওয়াত অথবা আরবি হরফগুলোর মাখরাজ শিক্ষা, মক্তবের কার্নিশে চুড়ুই পাখির বাসা ! আরো কত কি ?
এ এক মধুর স্মৃতি ।
ভাই ডিউটি করতে কষ্ট হয়না !
কেউ একজন পেছন থেকে জানতে চাইল ।
(মনে মনে বললাম শালা আর টাইম পেলিনা !)
একরাশ বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলাম কষ্ট হবে কেন ?
পুলিশের আবার কষ্ট আছে নাকি ?
কি বলেন ভাই ! আপনারা কি মানুষ না ?
তাই নাকি ! আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি আমাদের মানুষ মনে করেন ।
তা ভাই কয়দিন হয় চাকরি ?
না বেশি না এইত কিছুদিন হয় । তা আপনি কি করেন ?
প্রবাসী । সৌদী আছি আজ ১৮ বছর ।
ও ! ছেলে মেয়ে কয়জন ?
দুইটা ।
তাহলেত হ্যাপী ফ্যামেলী !
( দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল লোকটির ভিতর থেকে । মনে হল বহু বছরের জমানো বাতাস যেন প্রবল বেগে ফুসফুস থেকে বেরিয়ে গেল )
আমি হতচকিত হয়ে তার হাত ধরলাম । শ্রমিকের হাত যেন এক কঠিন ধাতব খন্ড । লোকটির মুখের দিকে ভাল করে তাকালাম মনে হল কোন এক কঠিন আঘাতে বিধ্বস্ত, হতাশায় ভারাক্রান্ত এক ব্যক্তি আমার পাশে বসে আছে ।
ভাই এমন করে নিঃশ্বাস ফেললেন কেন ?
রাজ্যের কষ্ট আর অসীম হতাশা ভরা কন্ঠে লোকটি উত্তর দিল "বিয়ে করে বউ রেখে বিদেশ যাওয়া মানে সেই বউকে অন্যের কাছে বর্গা দেয়া । জমিন আপনার যাবতীয় খরচাপাতি আপনার কিন্তু চাষ করবে অন্য কেউ"।
আমি কিছু বোঝে উঠার আগেই লোকটি উঠে দাঁড়াল আর হনহন করে পাশের গলিতে হারিয়ে গেল ।
মনে পড়ল কিছু দিন আগে থানায় ডিউটি অফিসারের রুমে এক মহিলাকে নিয়ে আসা হয়েছে । তার স্বামী থাকে প্রবাসে এবং স্বামীর অনুপস্থিতে মহিলা পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন । সাত আট দিন আগে ছয় বছরের বাচ্ছাসহ অর্থালংকার নিয়ে পাশের গ্রামের এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছেন । কপাল মন্দ পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে এসেছে এজন্য রাগে গর গর করছেন ।
আমি তার কাছে গেলাম । জানতে চাইলাম তুমার এত সুখের সংসার এভাবে ভাংতে পারলে ?
তার সাফ জবাব জীবন এবং যৌবন একবারই পাওয়া যায় জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় গুলা বছরের পর বছর একা একা কাটাতে কার ভাল লাগে ?
জামাই থেকেও নাই ! এরচেয়ে দূর্ভাগ্যের কি আছে ?
মহিলার চোখে মুখে কোনরুপ অপরাধ, আফসুস বা ভীতির লেশমাত্র নাই । মনে হল বহুকষ্টের পর এক অসীম খুশির ঝিলিকে তার চোখমুখ দোল খাচ্ছে । এবার সে মুক্তি চায় ।
বিষয়: সাহিত্য
১০৮৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন