প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাহসী নেতৃত্ব (তুরস্কে ব্যর্থ ক্যু: শ্বাসরুদ্ধকর একটি কালো রাত!)
লিখেছেন লিখেছেন মুজাহিদ হোসাইন সজিব ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০৬:২৩:৫৬ সন্ধ্যা
তুরস্কে অবস্থানরত এক ভাইয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
রাত তখন ১০.৩০ মিনিট। ক্যান্টিনে রাতের খাবার খেতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎই আনকারার আকাশে যুদ্ধ বিমানের প্রচুর শব্দ। ভাবলাম, কী হল? যুদ্ধ-টুদ্ধ লাগলো নাকি? ক্যান্টিদের দিকে বের হলাম। পথিমধ্যে অন্যান্য লোকজনও দেখী বিষয়টা খেয়াল করছে। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হইছে? কেউই উত্তর দিতে পারলো না।
ক্যান্টিনে টিভির ব্রেকিং নিউজ দেখলাম যে, ইস্তাম্বুলের এশিয়া-ইউরোপ সংযোগ ব্রিজ বন্ধ করে সেনাবাহিনী গাড়ী নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তখনো ভাবছিলাম, সম্ববত সন্ত্রাসী হামলা হইছে..! তাই সতর্কতা।
কিন্তু না..! কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থতি পাল্টে যেতে লাগলো। ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক এয়ারপোর্ট বন্ধ করে সেনা ট্যাঙ্ক এয়ারপোর্টের দখল নিল। কিছুক্ষণ পর প্রধনমন্ত্রী বিনালী ইলদিরিম মিডিয়াকে জানালেন, সেনা বাহিনীর একটি অংশ ক্যু করেছে। কিন্তু আমরা তাদেরকে ছাড় দিবনা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কোন ভরসা পেলাম না। সবকিছু সেনাবাহিনীর দখলে করে নিচ্ছে। একে পার্টির অফিস, প্রেসিডেন্ট অফিস, সরকারী নানা অফিস এমনকি রাষ্ট্রীয় টিভি। রাত ১২ টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় টিভি থেকে ঘোষণা এল যে, "সেনা শাসন জারী করা হয়েছে। কেউ যেন রাস্তায় বের না হয়। এখন থেকে সেনাবাহিনী দেশ চালাবে"।
পুরো হতবম্ব। কী হবে..! আমাদের ডরমেটারীর সবাই ক্যান্টিনে টিভির সামনে।পাশের রাস্তা দিয়ে সেনা ট্যাঙ্ক মুহুর্তে মুহুর্তে টহল দিচ্ছে। সবার মনে ভয় আর আফসোস! দেশটা শেষ!
এদিকে প্রেসিডেন্ট মিডিয়াতে বক্তব্য দিতে পারছেন না। উনি ব্যক্তিগত সফরে অন্য শহরে ছিলেন। রাত আনুমানিক ১২.৩০ এর দিকে একটি মিডিয়াতে স্বাইপিতে প্রেসিডেন্ট ৩/৪ মিনিটের একটি বক্তব্য দিতে সক্ষম হন। এতে তিনি সকলকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান এবং ইস্তাম্বুলের এয়ারপোর্টে আসতে বলেন। উনি স্পষ্ট বলেন যে, আমি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, কোন বিপদগামী কাউকে সফল হতে দিবনা। আপনারা এয়ারপোর্টে আসেন, আমি আসতেছি। আপনাদের সাথে রাস্তায় নামব।
এরদোয়ানের এই ঘোষণার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই দেখলাম জনগন রাস্তায় নামা শুরু করল। ক্যান্টিন থেকেই নিজ চোখে দেখলাম কিভাবে সেনা ট্যাঙ্কের সামনে লোকজন শুয়ে পরলো। ট্যাঙ্কের গতিরোধ করার চেষ্টা করল। পুরো তুরস্কের কয়েক মিলিয়ন লোক রাস্তায়। সেনা বাহিনীর সাথে অনেকটা যুদ্ধ হচ্ছে। সেনাবাহিনী কয়েকটি জায়গায় উপর থেকে বোমা বর্ষণ করছে সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পক্ষ নিল এবং ক্যুয়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানালো। তারপরও পরিস্থিতি পুরোই নিয়ন্ত্রনের বাহিরে। তবে ইতিমধ্যে এরদোয়ানকে রিসিভ করতে কয়েক মিলিয়িন লোক ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে অবস্থান নিয়ে সেনা ট্যাঙ্ক দখল করে নিল। জনজোয়ারে সেনাবাহিনী এয়ারপোর্ট থেকে পিছু হটল।
রাত ৪ টার দিকে প্রেসিডেন্ট যখন এয়ারপোর্টে পৌছলেন তখনো ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন জায়গায় গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এরদোয়ান প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য দিলেন এবং জানালেন তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখনো যারা ব্যারাকের বাহিরে আছে তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যেতে আহবান জানান।আর এ ঘটনা ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে বলে জানান।
আমরা লাইভ দেখতেছিলাম। এরদোয়ানের মাথার উপর আই মিন এয়ারপোর্টের উপর বিদ্রোহী যুদ্ধবিমান তথনো ব্যপক মহড়া দিচ্ছে। যাক, এরমধ্যে পুলিশ, সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ, নৌবাহিনী, স্পেশাল ফোর্স সরকারের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করলো।যদিও সেনাপ্রধান বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি ছিল।
সকাল হতে লাগল। ভোর ৫টা- ৬ টার দিকে ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ার, বসফরাস ব্রিজ, আরকারার প্রেসিডেন্ট প্যালেসসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এখন পর্যন্ত ২৮৩৯ জন বিদ্রোহী সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থতি এখন পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রনে।তবে জনগন এখনো রাস্তায়। তবে সেনবাহিনীর সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত শহীদ হয়েছে ১৭ পুলিশসহ ১৬১ জন সাধারণ জনতা। অবশ্য এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত এখন পর্যন্ত ১৪৪০ জন। এ ক্যুতে সফল হলে তুরস্কে আরেক সিসির জন্ম নিত, হয়ে যেত মিশর। কিন্তু গতকালের ক্যু সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারায় তুরস্কের ইসলাম ও গণতন্ত্র মজবুত হল। অবিশ্বাস্যভাবে সকল জনতার মুখে তাকভীর, আল্লাহু আকবরের মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখোরিত ছিল পুরো তুরস্ক। রাত ১ টা থেকে টানা তুরস্কের মসজিদগুলো থেকে আযান প্রচারিত হচ্ছিল। মসজিদ থেকে লোকজনকে রাস্তায় নামার জন্য আহবান ও সাহস দেওয়া হচ্ছিল। মানে একটা বিপ্লব।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাহসী নেতৃত্ব, সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা এবং জনতার আত্মত্যাগের এই বিরল দৃষ্টান্ত সমসাময়িক রাজনৈতিক ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকবে।
স্মার্টফোনটি হয়ে উঠেছিল এরদোয়ানের অস্ত্র,
নিজের আইফোনে অ্যাপলের ফেইস টাইম অ্যাপ ব্যবহার করে একটি ভাষণে এরদোয়ান তখন অভ্যুত্থান ঠেকাতে জনগণকে রাজপথে, বিমানবন্দরে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
ফেইস টাইমে দেওয়া তার ওই বক্তব্য সিএনএন-তুর্ক টেলিভিশনে দেখানো হয়। এরদোয়ান বলেন, “তুরস্কের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- জড়ো হন রাজপথে, বিমানবন্দরগুলোতে। তাদের কাছে ট্যাংক-কামান থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই।”
তারপর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট।
বিষয়: বিবিধ
১৬২১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরদোয়ানের এই ঘোষণা প্রসংসনিয়। আপনাকে ধন্যবাদ
আল্লাহ তার দ্বীনকে এগিয়ে নেবেই। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন