ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি প্রশ্নের জবাব-১ম পর্ব (ডা: জাকির নায়েক এর লেকচার)
লিখেছেন লিখেছেন মুজাহিদ হোসাইন সজিব ৩১ মে, ২০১৫, ০৬:৫৬:৫২ সন্ধ্যা
প্রশ্নঃ মুসলমানরা কেন অমুসলিমদের কাফের বলে?
জবাবঃ কাফের মানে যে প্রত্যাখ্যান করে কাফের শব্দটি মূল শব্দ ‘কুফর’ থেকে উৎপন্ন। যার মানে গোপন করা, আড়াল করা, অথবা প্রত্যাখ্যান করা। ইসলামী পরিভাষায় কাফের বলা হয় সেই লোককে যে ইসলামের মহাসত্যকে গোপন করে, আড়াল করে বা প্রত্যাখ্যান করে এবং এমন এক ব্যক্তি, যে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে বাংলায় অমুসলিম এবং ইংরেজীতে ‘ননমুসলিম’ বলা হয়। যদি কোনো অমুসলিম তাকে অমুসলিম অথবা কাফের বলাকে গালি মনে করেন তা হলে ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণা ছাড়া এটাকে আর কিছুই বলা যায় না। ইসলাম ও ইসলামী পরিভাষা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবার জন্য তাকে ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও বিশদ্ধ হাদীস থেকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তখন তিনি বুঝতে পারবেন এটা গালি তো নয়ই বরং যথাযোগ্য পারিভাষা ব্যবহারে জন্য ইসলামকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারবেন না।
প্রশ্নঃ ইসলাম যদি শ্রেষ্ঠতম ধর্ম হয় তাহলে অসংখ্য মুসলমান কেন এত অসৎ অবিশ্বস্ত এবং অপরাধ জগতের সাথে এমনভাবে জড়িত ?
জবাবঃ ক. অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য মুলত প্রতিটি ধর্মই মানুষকে মন্দ দূর করে ভাল হবার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইসলামের পরিধি আরো ব্যাপক। ইসলাম আমাদেরকে ন্যায়-পরায়নতা অর্জনের প্রকৃতিসম্মত পথ ও পদ্ধতি দেখিয়ে দেয় কিভাবে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে যাবতীয় মন্দ নির্মূল করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাব প্রকৃতি ও সমাজের চিন্তা ভাবনা ও রুচি অভিরুচিকে বিবেচনায় রাখে। ইসলাম খোদ সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার দেয়া মানুষের জীবন যাপন পদ্ধতির দিক নির্দেশিকা। এ কারণে ইসলামকে ‘দ্বীনুল ফিৎরাহ’ বা মানুষের প্রকৃতি সম্মত জীবন ব্যবস্থাও বলা হয়।
খ. যেমন ইসলামে আমাদেরকে চুরি, ডাকাতি পরিহার করতে বলার সাথে সাথে সে এ ও বলে দেয় যে, কেমন করে সমাজ থেকে এ প্রবনতা নির্মূল করা যাবে।
১. বড় বড় সব ধর্মই শিক্ষা দেয় চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে অন্য ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্য কোথায়? পার্থক্যটা হলো চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ এ শিক্ষার সাথে সাথে ইসলাম এমন একটি সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের বাস্তব পদ্ধতি নির্দেশ করে যে সমাজে চুরি ডাকাতির প্রয়োজনই পড়বে না।
২. মানুষের অভাব দুর করতে ইসলাম যাকতের বিধান দিয়েছে। ইসলাম বিধান দিয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য যাকাতি বাধ্যতাম্যলক যার নিসাব পরিমান উদ্ধৃত্ত তাকে। অর্থাৎ বাৎসরিক আয় ব্যায়ের পরে ৮৫ গ্রাম সোনা বা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা অন্যান্য মাল পত্র উদ্ধৃত্ত থাকবে। ২.৫% বা শতকারা আড়াই টাকা প্রতি চন্দ্র বৎসরের শেষে তাকে (অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দিতে হবে)। পৃথিবীর প্রতিটি সম্পদশালী ব্যক্তি যদি সত্যি সত্যিই এই যাকাত আদায় করে তাহলে দারিদ্রতা বলতে পৃথিবীতে কিছু থাকবে না। তখন ভিক্ষা দিতেও একজন ভিখারী খুজে পাওয়া যাবে না। (এই হলো ইসলামী অর্থনীতির মাত্র একটি কার্যক্রম। শুধুমাত্র এই যাকাত ব্যাবস্থাটুকু কার্যকর হলে হাত পাতার লোক খুঁজে পেতে হবে।)
৩. চুরি ডাকাতির শাস্তি হাত কেটে ফেলা চোর ডাকাত প্রমাণিত হলে তার হাত কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছে ইসলাম। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ চোর অথবা চোরনী, তোমরা তাদের হাত কেটে দাও এটাই শাস্তি যে কর্ম তারা করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক (দেয়া) আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহ মহা মক্তিমান জ্ঞানপূর্ন (সূরা মায়েদাহঃ৩৮)
৪. ইসলামী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠিত হলে তার কল্যানী ফলাফল হাতে হাতে পাওয়া যায় আমেরিকা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে উন্নততম। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে তার আছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এহেন আমেরিকায় যদি ইসলামের পূর্নাঙ্গ বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়- একদিকে প্রতিটি সার্মথ্যবান ব্যক্তি রীতিমতো যাকাত আদায় করছে অপর দিকে নারী বা পুরুষ চোর প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হাত কেটে ফেলা। তাহলে আমেরিকায় চুরি, ডাকাতির বর্তমান প্রবণতা বাড়বে, না একই রকম থাকবে, নাকি একেবারে কমে যাবে? সঙ্গত ভাবেই তা কমে যাবে।তদুপরি এই ধরনের কঠিন আইন থাকলে অনেক স্বভাবের চোরও নিজেকে এই ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে। অর্থাৎ চুরি ডাকাতি প্রায় বিলুপ্ত। একথা মানতেই হবে যে, পৃথিবীব্যাপী চুরি ডাকাতির বর্তমান যে হার তাতে হাত কাটা আইন চালু হলে লক্ষ লক্ষ লোক এমন দেখা যাবে যাদের হাত কাটা। বিষয়টা হলো যে মুহুর্তে এই আইন ঘোষনা করা হবে তার পরের মুহুর্ত থেকেই এ প্রবণতা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কমে আসতে থাকবে। পেশাদারী চোরও এ পথে পা ফেলার আগে একবার ভেবে নেবে ধরা পড়লে তার পরিনতি কি হবে। শাস্তির ভয়াবহতাই চোরের ইচ্ছাকে দমন করার জন্য যথেষ্ট। তখন নিতান্ত দুরাত্মা ও দুর্ভাগা ছাড়া এ কাজ আর কেউ করবে না সামান্য কয়েকটি লোকের হয়তো হাত কাটা যাবে কিন্তু কোটি কোটি মানুষ লাভ করবে নিরাপত্তা, শান্তি এবং সর্বস্ব হারাবার ভয় থেকে মুক্তি।
ইসলামী বিধান এই রকম বাস্তবধর্মী এবং প্রত্যক্ষবাবে ফলদায়ক
গ. যেমন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন। সাথে সাথে কার্যকর করতে বলেছে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উভয়ের কঠোরভাবে পালনীয় হিজাব বা পর্দা এবং সাব্যস্ত ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ১. ধর্ষণ ও উৎপীড়নের শেকড় শুদ্ধ নির্মূল করার পরামর্শ দিয়েছে বড় বড় সকল ধর্ম নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন জঘন্য অপরাধবলে ঘোষণা করে। ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে কি পার্থক্য ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের? পার্থক্যের বিষয়টা হলে ইসলাম শুধুমাত্র নারী মর্যাদার ওয়াজই করেনা বা ধর্ষণ ও উৎপীড়ণকে ঘৃনার সাথে জঘন্য অপরাধ হিসেবে পরিত্যাগ করতেই বলে না। সাথে সাথে সুস্পস্ট নির্দেশনাও দেয় কিভাবে সমাজ থেকে এই অপরাধ সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
২.পুরুষের পর্দাঃ হিজাব বা পর্দা ইসলামের একটি বিধান। জ্যোতির্ময় কুরআন প্রথম উল্লেখ করেছে পুরুষের পর্দা। তারপরে তা নারীর জন্য। (হে রাসূল!) মোমেন পুরুষদের বলোঃ তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে। এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহ হেফাজত তরে। এটা তাদের আরো পবিত্র হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। (তাদের চরিত্র নির্মাণের জন্য) যা কিছুই তারা করে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহ সে সব কিছু সম্পর্কেই খবর রাখবেন। (সূরা নূরঃ ৩০) যে মুহুর্তে একটি পুরুষ একজন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলো যদি কোনো ধরনের অশ্লিল চিন্তা মাথায় এসে যায় এই ভয়ে সাথে সাথে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেবে।
৩. নারীর পর্দা কুরআন নারীর পর্দা সম্পর্কে এভাবে বরেছেঃ আর (হে নবী) মোমেন স্ত্রীলোকদের বলুন! তারা যেন নিজেদের চোখ অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ করে। আর যেন প্রদর্শনী না করে তাদের রুপ-সৌন্দর্য ও অলংকারের। তবে এ সবের মধ্যে যা অনিবার্যভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তারা যেন ঝুলিয়ে দেয় তাদের ওড়না তাদের বুকের ওপর। আর তারা প্রকাশ করবে না তাদের রুপ-সৌন্দর্য তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা অথবা তাদের স্বামীদের পিতা (শ্বশুর) অথবা তাদের পুত্র।(সূরা নূরঃ৩১)
নারীর জন্য হিজাবের পরিধি তার সম্পূর্ণ দেহ আর্বত থাকতে হবে ঢিলেঢালা কাপড়ে। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত এবং মুখ মন্ডল খোলা থাকতে পারে যদি তারা চায়, তা না হলে তাও ঢেকে নিতে পারে। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ মুখমন্ডল ঢাকারও পরামর্শ দেন।
৪. হিজাব উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে নারীকে কেন আল্লাহ হিজাব ধারণ করতে বরেছেন কুরআনে তা এভাবে বলা হয়েছে হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ এবং ঈমান গ্রহণকারী নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন ঝুলিয়ে দেয়া তাদের নিজেদের ওপর তাদের বড় চাগর জাতীয় কিছু (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির জন্য ন্যুনতম (পোষাক) তাহলে তারা আর উৎপীড়িত হবে না। আর আল্লাহ তো আছেনই ক্ষমা দানকারী দয়াময়। (সূরা আহযাবঃ ৫৯) কুরআন বলে, নারীকে এই কারণে হিজাব পড়তে বলা হয়েছে যেন তারা রুচিশিলা মহিলা হিসাবে পরিচিত হয়। এটা তাদেরকে উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ রেকর্ড আমেরিকায় ১৯৯০ সালে এফ, বি, আই এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১,০২,৫৫৫ টি ধর্ষনের ঘটনা ঘঠেছে। মন্তব্যে বলা হয়েছে আনুমানিক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ঘটনার অভিযোগ করা হয়। তাহলে সত্যিকারের পরিমাণ বের করতে হলে ৬.২৫ দিয়ে গুন করতে হবে দাঁড়ালো ৬,৪০,৯৬৮ এ সংখ্যাকে ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করলে প্রতিদিন ১৭৫৬ টি ধর্ষণের ঘটনা আমেরিকায় ঘটছে। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জ্যাস্টিস এর ন্যাশানাল ক্রাইম ভিকটিমাইজেশন সারভে ব্যুরো অব জাস্টিস এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে ৩,০৭,০০০ ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে সংঘটিত ঘটনার সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাহলে ৩,০৭,০০০ * ৩,২২৬ =৯,৯০,৩২২ টি ধর্ষনের ঘটনা ১৯৯৬ সালে ঘটেছে। প্রতিদিন ২৭১৩ অর্থাৎ প্রতি ৩২ সেকেন্ড পৃথিবীর সভ্যতম দেশে একজন নারী ধর্ষিত হয়। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ এর এই পার্থক্য লক্ষ্য করার মতো। মনে হয় আমেরিকার ধর্ষকরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এফ , বি, আই এর রিপের্টে বলা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ ঘটনার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ সংঘটিত ঘটনার মাত্র ১.৬% ভাগ। এদিকে অভিযুক্তদের ৫০ শতাংশ বিচারের আগেই বেরিয়ে যায়। তার মানে ০.৮% ভাগ ধর্ষক বিচারের সম্মুখীন হয়। অন্য কথায় কোনো ধর্ষক ১২৫ জন নারীকে ধর্ষণ করলে এর মধ্যে তার ধরা পড়া শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার। অনেক ধর্ষণকারী পুরুষ এটাকে একটা নিশ্চিন্ত বাজী ও জুয়ার মতো ধরে নিতে পারে। কেননা ১২৫ বারে ধরা পড়ে শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার। রিপোর্টে আরো বলা হয় ০.৮ শতাংশের যারা বিচারের সম্মুখীন হয় তাদরে ৫০% শতাংশেই এক বছরের কম, কারা ভোগ করে। যদিও আমেরিকার আইনে তার বিধান আছে ৭ বছরের। ধর্ষনের দায়ে প্রতিবার ধরা পড়লে বিচারকরা তাদের প্রতি কোমল দন্ডের রায় দেন। ভেবে দেখার মতো বিষয় বটে! একজন ধর্ষক ১২৫ বার ধর্ষণ করলে, ধরা পড়র সম্ভাবনা মাত্র একবার। আর ধরা পড়লে শাস্তির সম্ভাবনা মাত্র কয়েক মাস।
ঘ. মানবীয় সমস্যায় ইসলামের সমাধান বাস্তব মুখী ইসলাম মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্তযাপন পদ্ধতি। কেননা এর শিক্ষা অকার্যকর তত্ত্বাগত বাগাড়ম্বর নয় বরং মানুষের যাবতীয় সমস্যার নগদ ও বাস্তব সমাধান। স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও সমাজিক সমস্যা, উভয় ক্ষেত্রেই ইসলামে প্রত্যক্ষ ফলাফর অর্জন করে। ইসলাম একারণেও শ্রেষ্ঠতম জীবন পদ্ধতি যে, এটা বাস্তব সম্মত বিশ্বজনীন ধর্ম। কোনো জাতি অথবা জাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন