বাংলার এক অপরূপ পাখির নাম ডাহুক।
লিখেছেন লিখেছেন মুজাহিদ হোসাইন সজিব ১০ মে, ২০১৪, ০৬:৪৯:২৪ সন্ধ্যা
বাংলার এক অপরূপ পাখির নাম ডাহুক।
কবিকুল তাকে ভালোবাসার নিঃস্বার্থ প্রহেলিকা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। কবি জীবনানন্দ দাস এই ডাহুক পাখি নিয়ে লিখেছেন, "মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী/নিদাঘের রোৗদ্রতাপে একা সে ডাহুকী/বিজন-তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে বনচ্ছায়া- অন্তরালে তরল তিমিরে"।
একালের বাংলার কবি আল মাহমুদের কবিতাতেও এই বর্ণিল পাখির কাব্যময় উপস্থিতি রয়েছে।
আসলে পাখিটি চিরবিরহী প্রকৃতির। জলচর ডাহুক-ডাহুকির ভালোবাসার গল্প অনেকটা আরব্য উপন্যাসের লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনী-দন্ডিদাস, আনারকলি- সেলিম কিম্বা দেবদাস-পার্বতীর মতোই। বনে-বাদরে ঘুরে বেড়ানো এই ডাহুক- ডাহুকী শাশ্বত পলিটনিক (দেহাতীত) ভালোবাসার প্রতীক। সঙ্গীহীন হলে এরা পাগল হয়ে যায়। ডাহুক হারালে ডাহুকী দিনরাত ডাকতে ডাকতে গলা চিরে রক্ত উঠে এক সময় মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়ে। সঙ্গী ছাড়া এক মুহূর্ত নয়। কি অবাক ও মর্মান্তিক পাখি ডাহুক। তাই বুঝি বিদ্যাপতি, চন্ডিদাস, ফররুখ আহম্মেদ, জীবনানন্দ, আল মাহমুদের কবিতার অলংকার হয়েছে ডাহুক পাখি। ভীরু লাজুক প্রেমিক পাখি ডাহুক কবিতার প্রতীক, উপমা উৎপ্রেক্ষায় অলংকিত হয়েছে। বড়বড় জলাভূমির পাজরের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে ডাহুক। এরা মাঝারি আকারের পাখি। লেজ ছোট, পা লম্বা লম্বা। ৫২-৫৮ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়। পায়ের আঙ্গুলগুলোও বেশ লম্বা। মানুষ দেখলেই পলায়নপর পাখি। ডাহুকের গায়ের রং ধুসর-কালো-খয়েরির মিশেলে। মাথা বুক সাদা। লেজ লালটে আভা। হলুদ ঠোঁটের উপরে লাল টুকটুকে একটি টয়া। এরা জলাভূমিতের কচুরিপানা অথবা শাপলা পাতার উপর
দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। পায়ের নোখ গুলো ভীষণ লম্বা বলে। পানির উপর ঝোঁপ যেখানে, সেখানেই এরা বাসা বানায়। প্রজননকাল জুন-সেপ্টেম্বর মাস। ডিম দেয় ৬/৭টি। ডিমের রয় ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকী দু'জন মিলেই ডিমে তা দেয়। বাচ্চাদের রং সব সময় হয় কালো। জলজ পোকা- মাকড়, উদ্ভিদের কচি ঢগা, শ্যাওলা এদের
প্রিয় খাবার। ইংরেজি নামঃ White- breasted Waterhen বৈজ্ঞানিক নামঃ Amaurornis phoenicurus. রাতে ডাহুকের কোয়াক কোয়াক ডাক শুনেই চিনে নেওয়া যায়। এটা পুরুষ পাখির ডাক। একটানা অনেকক্ষন এরা ডাকতে পারে। বর্ষাতেই এ ডাক বেশী শোনা যায়। কিন্তু দুঃজনক হলেও সত্য মায়াবী ভালোবাসার বর্ণিল এই পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। বাসস্থান আর নির্দয় শিকারীদের জন্য এক সময় হয়তো স্বার্থহীন ভালোবাসার পাখি ডাহু-ডাহুকীকে আর আমার খুঁজে পাবনা আমারা।
(সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
৩৩৯৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে ঘুমের পাড়া স্তব্ধ দিঘি অতল সুপ্তির...
ডাহুক স্বাদেও ভাল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন