কওমী সনদের স্বীকৃতি বনাম হেফাজতে ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ০২ মে, ২০১৭, ১১:১১:৪০ রাত
কওমী সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অনেকে উষ্মা প্রকাশ করছে। আবার কেউ কেউ মানববন্ধন করে স্বীকৃতি বাতলের দাবি তুলেছে। কেউ বলছেন এর মাধ্যমে হেফাজত ইসলাম শাপলা চত্বরে নিহত আলেম-উলামা ও হেফাজত কর্মীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করেছেন। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, এই কওমী সনদের স্বীকৃতির প্রচেষ্টা দুই-তিন বছরের নতুন ইস্যু নয়। কয়েক দশক ধরে এই স্বীকৃতির জন্য দেন-দরবার চলছে। বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও স্বীকৃতির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল যদিও তা আলোর মুখ দেখেনি। সুতরাং কওমী সনদের ব্যাপারটা হেফাজত ইসলামের কোন সাংঘঠনিক বিষয় মনে করা ভুল। এটা হল কওমী মাদ্রাসাগুলোর নিজস্ব দাবি, কওমী মাদ্রাসার ছাত্র, অভিভাবক ও শুভাকাংখীদের দীর্ঘ দিনের ন্যায্য অধিকার। বিএনপি-জামায়াত যে স্বীকৃতি বাস্তনায়ন করেনি তা ফলস্রু করতে বিএনপির বিকল্প আওয়ামী লীগের কাছে না গিয়ে কার কাছে যাবে? সামনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা বিনা স্বর্থে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করত কিনা বা করতে পারত কিনা সন্দেহ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব তার সবকিছু বিএনপি-জামায়েতের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
সবার জানা বিষয় হল কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়েন তাদের বৃহৎ অংশ দরিদ্র, এতিম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। এরা ১৮-২০ বছর পড়াশোনা করে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু সনদের সরকারী স্বীকৃতি না থাকায় দেশ তাদের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে নিয়োগ পাওয়া উচ্চবিলাসী আমলাদের দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার কারণে দেশের জনগণের প্রাণ ওষ্টাগত সেখানে অনাড়ম্বর কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা আমলাতন্ত্রে প্রবেশ করলে দূর্নীতি যেমন কমবে, তেমনি নাগরিক সেবাও বাড়বে। নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই, যা প্রয়োজনী তা কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জন করে থাকে। কওমী মাদরাসা থেকে পড়ালেখা করে যদি মন্ত্রী হওয়া যায়, কেন আমলা হওয়া যাবে না? একটা কথা কথিত প্রগতিশীলরা বলে থাকে তা হল নারীদের বাদ দিয়ে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়, তেমনি বিশাল আকারের কওমী মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরকে মূলধারায় এনে দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্যবহার না করলে দেশের অগ্রগতি তরান্বিত হবে না।
রাজনৈতিকভাবে দেখলেও বিএনপি-জামায়াতের জন্য এই স্বীকৃতি ইতিবাচক। কারণ দীর্ঘদিন দরে, কথিত স্যেকুলাররা বিএনপি-জামায়াতকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ-অনুযোগ করে আসছিল। তাদের প্রচারণা ছিল আওয়ামী লীগ যেহেতু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে না তাই তাদেরকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে যে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তা হেফাজত সংযোগের ফলে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আওয়ামী নেতারা এখন বিএনপিকে জামায়াত কিংবা মৌলবাদীদের সংগে রাখার জন্য কটাক্ষ করলে তা হালে পানি পাবে না।
সার্বিকভাবে এটা জাতির জন্য মঙ্গলজনক ইংগিত। কারণ আওয়ামী লীগ গণমানুষের পালস বুঝতে চেষ্টা করছে। এখন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বহাল থাকতে চায়, ৫ জানুয়ারির মত ভোটারবিহীন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে নয়। এতদিন কথিত নাস্তিক-স্যেকুলারদের ইসলাম ও গণবিরোধী পরামর্শের ফলে সরকার যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তা উপলব্ধি করতে পারছে তার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিত । আমার মনে হয় এই উপলব্ধি শেখ হাসিনার তাই আশাবাদী যে আগামীতে একটা ভাল নির্বাচন হবে, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিবে। নির্বাচিত সরকার জনগণের মেন্ডেট নিয়ে জাতিকে সুশাসন উপহার দিবে। বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ হবে।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন