ট্রাম্পের দাজ্জালিপনা ও বিশ্বায়নকে ধর্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:১৫:২৬ রাত



ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর মনে হচ্ছে তিনি তাঁর সব নির্বাচনী ওয়াদা যে কোন মূল্যে পালন করবেন। এতে তিনি পাহাড়কেও বাধা হিসাবে মানতে নারাজ। ইসলামে বর্নিত কিয়ামতের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল দাজ্জালের আবির্ভাব। এক চোখা দাজ্জাল তার ক্রিয়া-কলাপ দ্বারা তামাম বিশ্বের মানুষের চিন্তাকে ওলট-পালট করে দিবে। দাজ্জালের ক্ষমতাগুলোর মধ্যে থাকবে “মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, জড় পদার্থ ও পশুদের দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেওয়া, চল্লিশদিনে সারা বিশ্ব চষে বেড়ানো”।

ট্রাম্পকে বলা চলে আসল দাজ্জালের প্রতিচ্ছবি। দাজ্জালের অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী থাকবে ইহুদীরা। এখন দেখা যাচ্ছে ইজরাইলের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক সবচেয়ে মজবুত হতে চলছে। ক্ষমতা গ্রহণের আগেও ইজরাইলের পক্ষে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ফিলিস্তিনে ইজরাইলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিশরের প্রস্তাবকে ঠেকিয়ে দিয়েছিল ট্রাম্প। যদিও ওবামা প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপে আবার এই প্রস্তাব উত্তাপন করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ভোট প্রদানে বিরত থাকায় প্রস্তাবটি পাস হয়। এর পরেও ট্রাম্প জোর গলায় বলছে, তিনি ইজরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকে তেলাবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে আসবেন। ইজরাইলি মন্ত্রীসভা ট্রাম্পের সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনে আবার বসতি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

ট্রাম্পের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কেউ হিসাব মিলাতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কথা বললেও বিশ্লেষকদের ধারনা এতে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের নিজের দেশই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশ্বময় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আরো কমবে। অনেকে ট্রাম্পের স্লোগান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন যুক্তরাষ্ট্র যখন থেকে মহান হয়েছে, তখন থেকে এখনো মহান জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্টিত আছে। যে বিশ্বায়ন তাদেরকে মহান করেছে ট্রাম্প সেই বিশ্বায়নকে এখন ধর্ষণ করতে উদ্যত। তিনি অমেরিকাকে “আবার মহান করা” বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা বোধগম্য নয়। যদিও ২০০১ সালে টূইন টাওয়ার হামলার পর থেকে আমেরিকার পতন শুরু হয়েছে। সম্ভবত ট্রাম্প সেই পতনকে তরান্বিত করবে।

ট্রাম্প প্রথমদিনেই বাতিল করে দেন ওবামাকেয়ার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ম আয়ের ২ কোটিরও বেশী মানুষ এই স্বল্প মূল্যের স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা পেয়ে আসছিল। যে নিম্ম আয়ের মনে আশার সঞ্চার করে ট্রাম্প দৈত্যের মত ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হলেন, তাদের স্বার্থে প্রথম আঘাত হানা হল। অনেকে মনে করছেন স্বাস্থ্য ঘাতের মাফিয়াদের স্বার্থে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ। এমনো হতে পারে ওবামার নাম ওবামাকেয়ারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প চান না কৃষ্ণাঙ্গ কোন প্রেসিডেন্টের নাম আমেরিকায় স্বরনীয় হয়ে থাকুক।

ট্রাম্পের সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনী এজেন্ডা ছিল চীনকে ঠেকানো। ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারসীপ(টিপিপি) হতে পারত চীনকে কন্টেইন করা অন্যতম কার্যকর মাধ্যম। কিন্তু ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে তা ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। টিপিপিকে তাঁর দেশকে ধর্ষণের সাথে তুলনা করে বলেছেন “ TPP, a rape of our country”। এইদিকে নর্থ আটলান্টিক ফ্রি ট্রেট এগ্রিমেন্ট(নাফটা) থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে পারে। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও জাতিসংঘের মত প্রতিষ্টানেও যুক্তরাষ্ট্র চাঁদা দেওয়া কমিয়ে আনতে পারে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায়ও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন না করার কথা বলছেন।

মূলত ট্রাম্প মনে করছেন এই সব বানিজ্য চুক্তির ফলে চাকরীর বাজার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমেরিকা “নিজের খেয়ে বনের মুষ তাড়ানোর” মত কাজ করছে। আমেরিকান কোম্পানিগুলো মুনাফার স্বার্থে বিদেশে বিনিয়োগ করছে। এতে আমেরিকানরা চাকরি হারাচ্ছে। তাঁর অভিবাসন বিরোধী অবস্থানের কারণ প্রধানত দুইটি। একটি হল অভিবাসীরা স্বল্প বেতনে চাকরী করায় নেটিভ আমেরিকানরা চাকরী হারাচ্ছেন। অন্যদিকে অভিবাসীদের কারণে আমেরিকান সমাজে দিন দিন শ্বেতাঙ্গদের প্রভাব কমছে। ট্রাম্পের ভয় যুক্তরাষ্ট্র অচিরেই কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান দেশে পরিনত হবে। তাই কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলার কথা এখনও জোর গলায় বলছেন।

কট্টর খৃষ্টান ডানপন্থী হিসাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মুসলিমদের নিজ দেশে অভিবাসী হয়ে প্রবেশ থামাতে চায়। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হতে পারে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত যুদ্ধ। আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় ট্রাম্পকে ব্যাথিত করেছে। তালেবান, আলকায়দা, ও হাল আমলের অপ্রতিরোধ্য আইএসআইকে পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি মনে করে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কার্যকরী যুদ্ধ করতে ট্রাম্প মনে করে রাশিয়া ও ইজরাইল তাঁর সবচেয়ে ভাল সঙ্গী হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381500
২৬ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০৩:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ট্রাম্প এর নিতি মুসলিম বিশ্বের জন্য বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য ভাল হতে পারে।
২৭ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:৫৭
315485
আব্দুল্লাহ আল রাহাত লিখেছেন : আমিও মনে করি, ট্রাম্প যুগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়ানোর বুদ্ধিভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন সিরিয়ায় ইস্যুতে আস্তানায় যুক্তরাষ্ট্রকে বাইপাস করা ভাল লক্ষণ।
381511
২৬ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:৫১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি ভালো লাগলো ট্রাম্প যা চায় তা হবে এমন কথা নয় এর বিপরিত ও হতে পারে।আপনাকে ধন্যবাদ
381523
২৭ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০২:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : ট্রাম্প যদি আমেরিকা নিয়ে মেতে থাকে আর বিশ্বকে না ঘাটায় তাহলে সেটা সবদিক দিয়ে ভাল হবে
২৭ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:৫৯
315486
আব্দুল্লাহ আল রাহাত লিখেছেন : কিন্তু পাগলা কখন কি করে বলা যায় না। কট্টর খৃষ্টান মৌলবাদী হিসাবে মুসলিম বিশ্বকে সতর্ক থাকতে হবে।
২৮ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ০৭:৪৭
315499
হতভাগা লিখেছেন : বিশ্বে যুদ্ধের ফেরি করা আমেরিকা বাইরে ফিটফাট দেখালেও ভেতরে সদরঘাট।

ডলারকে ডলার ব্যয় করে নিজেরা ফট্টুহারা হয়ে যাচ্ছে ।

ট্রাম্পের পাগলামি মানে যুদ্ধের আরও প্রসার হওয়া ।

২য় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী হলেও চার্চিল পরের নির্বাচনে হেরেছিলেন । কারণ, অর্থনৈতিক ধ্বস যেটা যুদ্ধের কারণেই হয়েছিল।

যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমেরিকার চেয়ে জাপান , জার্মানী , ইতালী এরা ভাল জানে । তাই তারা অক্ষ শক্তি থাকলেও এখন অর্থনীতির দিকে মন দিয়েছে । রাশিয়াও স্নায়ুযুদ্ধে হেরে টুকরো টুকরো হয়ে দুই দশক হাইবারনেশনে গিয়েছিল । টাকা বেশী হয়ে যাওয়াতে আবার ফালতু,বেহুদা ও ধ্বংসাত্মক কাজে খরচ করতে উনাদের মন উথাল পাথাল করতেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File