এরদোগানের আপদ-বিপদ
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:২১:৫০ রাত
তূরষ্ক-রাশিয়ার সুসম্পর্ক পশ্চিমাদের কাম্য নয়, কিন্তু এরদোগান চায় পরস্পর বৈরী রাশিয়া ও পশ্চিমা উভয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক রেখে চলতে যা তাকে বেশ চ্যালেঞ্জে পেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যর্থ ক্যুসহ তুরষ্ক যে সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হচ্ছে তা মূলত পশ্চিমাদের কাছে তাঁর নতি স্বীকার না করার ফল। যা অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তুর্কি জনগণও তা ভাল ভাবে বুঝে। আর এই জনগনই এরদোগানের মূল শক্তি। পশ্চিমাদের প্রতারণামূলক আচরণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য পুতিন ও এরদোগান উভয়ই নিজ নিজ দেশে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট।
পূর্ব আলেপ্পোতে রাশিয়া-ইরানের অঘোষিত জোটের বিমান হামলায় বিরোধী শক্তির পতনের পর রাশিয়া-ইরান এক প্রকার বেশ খুশি হয়েছিল। তাদের সেই আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে তুরষ্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কার্লোভ এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হওয়ার পর। এর প্রভাব আলেপ্পো ইস্যুতে পড়বে। মূলত এরদোগান নিজের দেশে কুর্দী বিচ্ছিন্নবাদী সশস্ত্র সংঘটন পিকেকের এর তূর্কি শাখা টাকের নানা আত্তঘাতি হামলায় বেশ কঠিন সময় পার করছেন। সিরিয়া ইস্যুতে এরদোগান-সৌদি-কাতার জোট থেকে কার্যত ইউরোপ-আমেরিকা সমর্থন তুলে নিয়েছেন। সেই সাথে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে সিরিয়া ইস্যুতে আগের চেয়ে ভিন্ন ধরণের পলিসি গ্রহণ করতে পারেন যা রাশিয়া ও ইরান বলয়কে শক্তিশালী করবে।
একদিকে পশ্চিমারা এরদোগানকে পিছন থেকে চুরি মেরে চলছে। তূর্কিতে ন্যাটোর বিমানঘাটি থেকে আইএস বিরোধিতার নামে যুক্তরাষ্ট্র মূলত কূর্দি বিচ্ছিন্নবাদী সন্ত্রাসী সংঘটন পিকেকেকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যারা তুর্কিদের বিরুদ্ধে নানা সন্ত্রাসী হামলা করে যাচ্ছে। তাই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে এরদোগানের জন্য রাশিয়া সবচেয়ে ভাল বন্ধু। অপরদিকে পশ্চিমাদের মোকাবেলায় এরদোগান রাশিয়ার পরীক্ষিত মিত্র। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ইউরোপ ও আমেরিকা যখন এক জোট হয়ে ক্রেমলিন ইস্যুতে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, এরদোগান সেই নিষেধাজ্ঞায় শামিল না হয় রাশিয়ার সাথে বানিজ্য সচল রাখে। এতে এরদোগানের উপর পশ্চিমারা ক্ষেপে যায়।
ট্রাস্পের সাথে পুতিনের সম্ভাব্য সম্পর্ক রাশিয়া মনস্তাত্ত্বিকভাবে কিছুটা সুবিধায় থাকলেও পশ্চিমাদের মূল সেন্টিমেন্ট রাশিয়া বিরোধী এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এখন পশ্চিমারা চায় পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার গাদ্দারি মিটিয়ে দিতে। ট্রাম্প যতই চায় না কেন রাশিয়ার সাথে দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়তে পারবে না। কারণ রাশিয়ার সাথে সেই স্নায়ুযুদ্ধে এখনো নানাভাবে চলছে। তাই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবেলায় এরদোগানকেও পুতিনের প্রয়োজন। জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য তুরষ্ক-রাশিয়া ভাল সম্পর্কের বিকল্প নেই। তাই এই রাষ্ট্রদূত হত্যায় কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।
তুরষ্কের মসনদ থেকে এরদোগানকে সরাতে গত ১৫ জুলাই ব্যর্থ ক্যু চালায় পশ্চিমারা। রাশিয়া তুরষ্কের ভাল বন্ধু হওয়ার পরেও সিরিয়া ইস্যুতে দুই বন্ধু দেশের মধ্যে রয়েছে বড় ধরণের বৈরতা। যার কারণে এরদোগান বর্তমানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে।
বিষয়: রাজনীতি
৯০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন