কেন মার্কিনিরা ডোনান্ড ট্রাম্পকে বেছে নিলেন?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ০৮:৩৯:৪৪ রাত
মার্কিন মুলুকে এইবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার ভাল কাজ দিয়েছে। ডোনান্ড ট্রাম্প নির্বাচনে ধর্মানুভুতির ব্যবহার করে হোয়াইট হাউজ ভাগিয়ে নিলেন। তাঁর জয়ের অন্যতম হাতিয়ার ছিল নির্বাচিত হলে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণা যা তাকে ব্যাপক সমালোচনায় ফেললেও ডানপন্থী খৃষ্টানদের মন জয় করতে সহায়তা করেছিল। সেই সাথে ছিল শ্বেতাঙ্গ খৃষ্টানদের জন্য আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলা ও হিন্দুদেরকে বন্ধু ঘোষণা।
মূলত বিশ্বে সর্বত্র ধর্মনিরেপক্ষবাদীদের বদলে ডানপন্থীরা ক্ষমতায় ফিরে আসছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দূর্বল হতে চলছে। এই যেন গনতন্ত্র ও ধর্মনিরেপক্ষতা থেকে মূখ ফিরিয়ে নেওয়া। এর পেছনে ছে প্রধানত দুইটা কারণ আছে বলে আমার মনে হয়।
প্রথমত, ধর্মনিরেপক্ষ ও পুজিবাদী অর্থব্যবস্থা ধনী-গরিবের ব্যবধান ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। বরং বিশাল আকারের ঋণের বুঝা জনগণের মাথার উপর চাপছে। মার্কিন সরকারের সর্বমোট ঋণ ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার যা জিডিপির প্রায় ৮০ ভাগ। আমেরিকা বিশ্বে মোডলিপনা করার জন্য "ঘরের খেয়ে বনের মুষ তাড়ানো" নীতি সাধারণ জনগণ আর চায় না। তারা চায় বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক বিনিয়োগ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য বরাদ্ধ অর্থ দেশের জনগণের জন্য ব্যবহার করা হউক। ট্রাম্পের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা মার্কিনিদের ট্রাম্পকে বেঁচে নেওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ।
একটি দেশের বেশীরভাগ সম্পদ অল্পকিছু সংখ্যক ব্যবসায়ীর হাতে চলে যাচ্ছে। যেমন বিশ্বের অর্ধেক সম্পত্তি ১% শীর্ষ ধনীদের মালিকানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ম স্তরের ৪০ ভাগ জনগণের হাতে মাত্র ১% সম্পদ রয়েছে, যেখানে টপ ১% ধনী ৩৫ ভাগ সম্পদের মালিক। আর এই ধনীরাই তাদের পুঁজির কল্যাণে সরকারের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সাধারণ জনগণ এখন ধনী ও ক্ষমতাবানদের ডিজিটাল দাস-দাসীতে পরিনত হয়েছে। ক্ষমতাবান ও ধনীদের নীতি-আদর্শ ইচ্ছায় হউক অনিচ্ছায় হউক মেনে নিতে বাধ্য।
ফলে ধর্মনিরেপক্ষবাদী সরকারগুলো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তাদের গৃহীত নীতির সুফল সাধারণ জনগণ পায় না যদিও ট্যাক্সের বুঝা সবাইকে বহন করতে হচ্ছে। দুনিয়াকে উপভোগ করার যে স্বপ্ন ও পথ ধর্মনিরেপক্ষবাদীরা দেখাচ্ছে তা আর্থিক সামর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে সমাজের ধনিক শ্রেণির সাথে দরিদ্ররা পেরে উঠছে না। তাছাড়া ধনী গরিবের এই ব্যবধান কমানোর কোন ভাল মডেলও ধর্মনিরেপক্ষবাদীদের কাছে নেই। তাই জনগণ দিশাহারা হয়ে ভিন্নধর্মী প্রার্থীকে নির্বাচিত করছে।
দ্বিতীয়ত, নাস্তিক্যবাদী চিন্তার প্রসার ও ধর্মনিরেপক্ষতার ছদ্দাবরণে জাতিগত ঐতিহ্য ও পরিচিতি হারিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে তা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে বলা হচ্ছে বহুত্ববাদ ও অভিবাসীদের দেশ , যেখানে বিশ্বের সকল দেশের অবদান রয়েছে। এখন মার্কিনিদের বাস্তব এই সত্য অস্বীকার করার উপায়ও নেই।
এছাড়া ইসলাম গ্রহণের ফলে পশ্চিমা দেশগুলোতে যে হারে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে পশ্চিমাদের মধ্যে ইসলাম ভীতি ডুকে গেছে। যদিও বাকস্বাধীনতা ও ধর্মনিরেপক্ষ নীতির কারণে তাঁরা সরাসরি মুসলিমদের ঠেকাতে পারছে না। আমেরিকানদের ধর্ম, বর্ণ ও ঐতিহ্যগত চেতনা দূর্বল হয়ে যাওয়ায় অনেকে আবার আমেরিকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চায়। তাই এবারের নির্বাচনে ট্রম্পের " মেক আমেরিকা গ্রেট আগেইন' স্লোগানটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে ট্রাম্প ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ খৃষ্টান ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন