ছাত্ররাজনীতিতে দুর্ভৃত্তায়ন কতটা ঝেঁকে বসেছে?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:৪৬:৫২ সন্ধ্যা
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেছেন, যে ইমরান খাদিজাকে উদ্ধার করেছে ও যারা বদরুল আলমকে গনপিটুনী দিয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী, কেবল বদরুল আলম ছাত্রলীগের কেউ নয়! দল ক্ষমতায় থাকা স্বর্থেও দায় কাঁধে নেওয়ার হিম্মৎ দেখাতে পারলেন না জাকির হোসেন। অথচ সবাই ভাল করে জানে বদরুলের রাজনৈতিক পরিচয়। বদরুলের ব্যক্তিগত দায় ছাত্রলীগের উপর না বর্তালেও নৈতিকতার প্রশ্ন থেকে যায়। ছাত্রলীগ কি বখাটে তৈরীর কারখানা? এমন প্রশ্ন জনগণের মনে উদয় হতেই পারে। বিশ্বজিৎ হত্যা, ২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠা হত্যার দায় কি ছাত্রলীগ এড়াতে পারে? কিছুদিন আগে আফসানা হত্যাকারী ছিলেন তেজগাঁও কলেজের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিন।
আসল কথা হল , ছাত্ররাজনীতির সোনালী যুগ আর নেই। তা পঞ্চাশ-ষাড়ের দশকে শেষ হয়ে গেছে। এক সময় ক্যাম্পাসের ভাল রেজাল্টধারীরা ছাত্র রাজনীতি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক , খ্যাতিমান সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাঁরা কোন না কোনভাবে ছাত্র রাজনীতর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এখনো চলছে সেই আমলের ছাত্রনেতাদের উপর ভর করে। তখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হত। নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধি থেকে তৈরি হত আদর্শবাদী নেতা। কিন্তু এখন আর সেই ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয় না।
বর্তমান ছাত্ররাজনীতি বড় দুই দলের জন্য লাঠিয়াল বাহিণী তৈরি করছে। বই-খাতার পরিবর্তে ব্যাগে ঠাই পাচ্ছে অস্ত্র-চাপাতি-ইয়াবা-গাঁজা-আফিম! ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশের ধরণও বদলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনদেরকে ছাত্ররাজনীতিতে আহবান জানালে তারা বলে, পরিবার থেকে রাজনীতি করা নিষিদ্ধ। অভিবাবকরা মনে করেন রাজনীতি ছেলের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিবে।হচ্ছেও তাই। এর মধ্যে জীবনের শঙ্কাও রয়েছে।
কিন্তু কিছু ছেলে এক সময় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে যায়। কিন্তু কখন? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন পরীক্ষায় খারাপ করছে, হতাশায় ভোগছে তখন ধীরে ধীরে নেশা ও রাজনীতির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। কোন আদর্শিক কারণে রাজনীতিতে আসছে তা শতকরা ১০ ভাগও পাওয়া যাবে না। অনেকে রাজনীতিতে আসেন ভবিষ্যত চাকুরীর আশায় এই সংখ্যাও কম নয়।কিন্তু এই আশা কত জনের পূর্ণ হওয়া সম্ভব?
অনেকে ক্যাম্পাসে নিছক ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের জন্য রাজনীতি করে, আর এই সংখ্যাই বেশী। রাজনীতি করতে গিয়ে যখন পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়তে থাকে তখন একপর্যায়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে পুরুদমে রাজনীতি করা শুরু করে। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য দলের স্বার্থ কিংবা কথিত ক্ষমতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে গিয়ে কারণে-অকারণে মারামারি শুরু করে। এই মারামারি থেকে গ্রুপিং, তা থেকে উগ্রতা চর্চা করতে করতে তাদের মধ্যে উগ্র দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়।এক সময় ভয়ঙ্কর বখাটে হয়ে ওঠে। এদের দমানোর সাধ্য তখন কারো থাকে না। শিক্ষকদের মারধর করার মত ন্যক্কারজনক কাজও তাদের কাছে সরল সমীকরণ। কিছু বুদ্ধিজীবী ও সরকারের ছত্রছায়ায় এরা এক সময় ধরে নেয় যে অপরাধই তাঁরা করুক না কেন তাতে তাদের শাস্তি হবে না। যার ফলে তাদের উগ্র মস্তিষ্ক দ্বারা মাঝে মধ্যে নিরাপরাধ কেউ স্বীকার হয়।
রাজনীতি একটি জাতিসত্তার ভবিষ্যৎ গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করলেও রাজনীতির প্রতি ক্রমশ ঘৃণা বাড়ছে গত তিন দশক ধরে। ফলে ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতি সবখানে বখাটে উগ্ররা স্থান করে নিয়েছে। যার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ খাদিজাকে ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের হিংশ্র কোপানো যা সচেতন নাগরিকদের নির্বাক করে দিয়েছে। প্রশ্ন জেগেছে ছাত্ররাজনীতিতে দুর্ভৃত্তায়ন কতটা ঝেঁকে বসেছে? মুক্তির আদৌ পন্তা আছে কি?
বিষয়: বিবিধ
১২১৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজ যদি বদরুলকে বিএনপি জামায়াত কোপাতো তাহলে কি ছাত্রলীগ এরকমভাবে দায়ভার এড়িয়ে যেত ?
এক্সচেললেনট
রাজনৈতিক বিকাশের কোন সুযোগই নেই। ক্ষমতাসীনরা নিজস্ব স্বার্থের জন্য তরুণ ছাত্রদের বিপদ্গামী করছে, সামান্য ক্ষমতা চর্চার লোভ দেখিয়ে।
আপনি পড়েন শাবিপ্রবি তে, আর প্রেম করতে গেলেন সিলেট সরকারি কলেজে পড়া একটা মেয়ের সাথে? কেনো ভাই? প্রেমেরও তো মিনিমাম একটা ক্লাশ থাকে, নাকি? শাবিপ্রবি তে কি মেয়ের এতই আকাল যে আপনাকে কলেজে আইসা ঘটনা ঘটাইতে হইলো? আপনি কেন জাফর ষাড়ের কচিকাঁচাদের দিকে নজর দিতে গেলেন!!!
আপনারা না দলীয় লোকদের শান্তি দিলেন, না জাফর ইকবাল স্যারকে। স্যার মাসের মধ্যে আর কতোবার 'ওরা অবুঝ' 'ওরা বুঝে না' 'ওদের সময় দিন' বলে আপনাদের ইমেইজ রক্ষা করে যাবে বলেন দেখি? মানুষের শব্দ ভান্ডারে এই জাতীয় কিউট শব্দগুলোরও তো একটা লিমিট থাকে, তাই না?
কোপাবেন ভালো কথা, সাথে অন্তত একবার 'আল্লাহু আকবার' বলে চিক্কুর দিলেই পারতেন। অথবা পুলিশকে বলতেন, আপনার দূরসম্পর্কের কেউ একজন শিবির করে, তাহলে সব ল্যাঠা জামাত-শিবিরের কান্ধে ট্রান্সফার হইয়া যাইতো। এই ছোটখাটো ভুলগুলা যে কবে আপনারা শুধরাবেন আল্লাহ মালুম...।
দেখাযাক কি হয়, বেশি টেনশন নিয়ে শরীর খারাপ কইরেন না...পাবলিকের সাময়িক চেঁচামেচিতে যদি আপনার কোনো শাস্তি হয়েও যায়...আমাদের মহামতি রাষ্ট্রপতি তো আছেন!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন