মনের পশুত্বের কুরবানিই হল সকল ইবাদতের উদ্দেশ্য
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০৯:০৪ রাত
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের হজ্জ একটি অনন্য স্তম্ভ। হজ্জের মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আহকাম হল পশু কুরবানি। এই কুরবানি নিয়ে এক শ্রেণীর ছদ্দবেশী উগ্র ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠি পশু কোরবানিকে তুলে ধরতে চান নিষ্ঠুরতা হিসাবে। মূলত ইসলামের প্রতি মানুষের মনে বিদ্বেষ মনোভাব সৃষ্টিই তাদের পেছনের লক্ষ্য। তারা শ্লোগান দিচ্ছে পশু নয় , মনের পশুত্বের কুরবানি। অথচ ইসলামপ্রিয় মানুষদের ক্রসফায়ারে মারা, ড্রোন হামলায় মারা, ফাঁসিতে ঝুলাতে তাদের কোন আপত্তি নেই বরং উল্লসিত। এখানে নিষ্ঠুরতা যায় কোথায়? বাঘ যে হরিণকে ধরে খায় তার প্রতিরোধ কিভাবে করবে? সমুদ্র এক মাছ আরেক মাছকে ধরে খায় তা কেমনে বন্ধ করবে? বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, বৃক্ষের পাতা ছেঁড়া, গাছ কাটাও নিষ্ঠুরতা, এতে এইগুলো কষ্ট পায়, যদিও তা মানুষের বোধগম্য নয়। বৃক্ষের কষ্ট কি নিরামিষভোজীরা বুঝবে? এরা অধিকাংশই মাংসভোজী। তাদের খাওয়া পশু কি জবেহ করা হয় না? আর যদি না জবেহ করে খায় তা আরো বেশী নিষ্ঠুরতা নয় কি?
ইসলামে পশু কুরবানির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল মনের পশুত্বের কুরবানি দেওয়া।
আল্লাহ বলেন, "আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কুরবানীর পশুর) না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া" সূরা হজ্ব : ৩৭।
শুধু কুরবানি দিলে হবে না, কুরবানির দিতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য, লাজ-লজ্জা, বাহাদুরির জন্য নয়।
কুরবানি ইতিহাস থেকে দেখা যায় হযরত ইব্রাহিম(আঃ) তাঁর প্রিয় পুত্রকে আল্লাহর জন্য কুরবানি দিতে স্বপ্ন যোগে নির্দেশিত হয়েছিলেন। মূলত এই কুরবানির উদ্দেশ্য ছিল মানুষের ভালবাসার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর শিশুপুত্রকে কুরবানি দিতে সচেষ্ট হলেও আল্লাহ সেই দিন ইব্রাহিমের শিশুপুত্রের বদলে একটি পশু কুরবানির ব্যবস্থা করেছিলেন। এখান থেকে আমাদের এই কুরবানির ইতিহাস চলে আসছে।
পশু প্রতি মানুষের ভালবাসাকে আল্লাহ সুশোভিত করে দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘’মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্তুপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভাণ্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজী, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র" সুরা আল ইমরান-১৪।
পশুর প্রতি এই ভালবাসা আল্লাহর জন্য বিসর্জন দেওয়াই কুরবানির মূল লক্ষ্য।
কুরবানি গোশত শুধু দাতা খায় না, বরং বেশীর ভাগ অভাবীদের যারা কুরবান করতে পারেনি তাদের দিয়ে দেন। আল্লাহ তায়ালা এর নির্দেশনাও দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং অভাবগ্রস্ত দরিদ্র লোকদের খাওয়াও’ (হজ্জ ২৮)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেরা খাও, যারা চায় না তাদের খাওয়াও এবং যারা নিজেদের প্রয়োজন পেশ করে তাদের খাওয়াও’ (হজ্জ ৩৬)।
এখানে নিজের অর্থে কেনা পশুর গোশত যারা খেতে পারে না তাদেরকে খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে, এমনকি যারা লজ্জায় চাইতে পারে না তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এখানে রয়েছে মানবতার জন্য আত্তত্যাগের শিক্ষা। নিজের মনকে পাষাণের মত শক্ত না রেখে অভাবী- অসহায়ের জন্য নিজের সম্পদের উৎসর্গের শিক্ষাকে কি বলা যায় না মনের পশুত্বের কুরবানি?
ইসলামের মৌলিক ইবাদাত সমূহে রকম ফের থাকলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন। আল্লাহর একক ও শরিকহীন উপসনাই সকল ইবাদতের পূর্বশর্ত। সলাত হচ্ছে এমন এক ইবাদাত যাতে মানুষকে প্রতিকীভাবে আল্লাহর সামনে সিজদা দিতে হয়। নিজের সব অহংকার , সম্মান আল্লাহর পদে এমনভাবে নীত করে দিতে হয় যাতে প্রমানিত হয় যে আমরা তাঁর গোলাম, ভৃত্য। আমাদের আত্ত অহংকারের কিছু নেই। তাঁর আদেশ পালনে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
আল্লাহ বলেন , "আমরা শুনলাম, মেনে নিলাম" সুরা বাকারা ২৮৫। এটাই মনের পশুত্বের কুরবানী। মানুষ যেন মনের পুজারী না হয়ে আল্লাহর কল্যাণময় নির্দেশনা বিনা বাক্য মেনে নেয় এমন শিক্ষাই এখানে দেওয়া হয়েছে।
যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। সলাতের পরেই যাকাতের স্থান। সম্পদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ হলে প্রত্যককে যাকাত দেওয়া ফরজ। স্বর্ণ, ফসল , অর্থের রয়েছে আলাদা আলাদা যাকাত। কষ্টার্জিত সম্পদের একটি অংশ অন্যকে বিনা বিনিময়ে দিয়ে দিতে হবে। এটা অর্থের কুরবানী। আর এই যাকাতের অর্থ গ্রহিতা, দাতার কাছে কোনভাবে দায়বদ্ধ নয়। ররং যাকাতের অর্থ গ্রহিতার কাছে পোঁছে দিতে হবে দাতার নিজ দায়িত্বে। এখানে যাকাত দাতাকে অসহায় বলা চলে, গ্রহীতা নয়। যাকাত না দেওয়া পর্যন্ত সম্পদ তাঁর পবিত্র হবে না। অপবিত্র সম্পদের দায়ভার মালিকের। তাই যাকাত দিয়ে সম্পদ ও মালিকের মনের পবিত্রতা হাসিল করা লাগে।
আল্লাহ বলেন, "যখন মানুষ (ধন-দৌলতে) কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন সে স্বভাবে কৃপণ হয়ে পড়ে। ব্যতিক্রমী তাঁরাই, যাঁরা নামায আদায়কারী, যারা নিজ সালাতে কায়েম থাকেন সর্বদা। আর যাঁদের সম্পদে নিধারিত হক রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য।’ (সুরা মরিয়াম ২১-২৫)
ধনসম্পদ আল্লাহর উদ্দেশ্য প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য ব্যয় করে মনের কৃপনতার কুরবানি কি মনের পশুত্বের কুরবানি নয়?
সওম ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সওম পালন করতে থাকতে হয় দীর্ঘ সময় উপবাস, এক ফোটা পানিও পানের সুযোগ নেই। দেশ দেশ ভেদে সওমের উপবাসের ভিন্ন দীর্ঘতা রয়েছে। শীতকাল থেকে তীব্র রোদের গ্রষ্মকাল, সারা বছর জুড়ে সওমের মাস চক্রাকারে ঘুরে। উপবাসের সময় যত বাড়ে ক্ষুদার কষ্টও তত বাড়ে। এরপরও সওম পালন করে বিনা অভিযোগে মুসলিমরা। আল্লাহর জন্য ক্ষুদার কষ্ট বিসর্জন দেওয়াই হল আত্তনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা হতে বাধা দিয়েছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন’’ (মুসনাদ, হাদিস নং ৬৬২৬)।
সওমের মাসে যে আমলের কথা বলা হয়েছে তা ভোগবিলাস পরিহার করে আত্তউৎসর্গের শিক্ষা দেয়। সওমের কষ্ট সহ্যের মধ্য দিয়ে অর্জন করা আত্তত্যাগের চেতনা কি মনের পশুত্বের কুরবানি নয়?
বিষয়: বিবিধ
৮৮৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
টাকা দিয়ে কেনা এই পশুর গোস্ত তার জন্য কিন্তু ৩ ভাগের একভাগ । অন্য সময়ে কি ৩ ভাগের দুই ভাগ ছেড়ে দিত ?
সেটা করে আল্লাহর ভয়েই , আল্লাহর আদেশ বলেই ।
কিন্তু আমরা তো এখন পশু কেনার পাশাপাশি ডিপফ্রিজও কিনি !
মন্তব্য করতে লগইন করুন