মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা চলছে চেতনার নামে
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ০১:০১:০৫ দুপুর
আমরা আমভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গর্ব করি। তাঁদের সম্মান হানি হওয়া সহ্য করতে পারি না। তাদের নিয়ে নানা আবেকঘন গল্প-কবিতা-উপন্যাস-নাটক লিখি। তাদের অবদানকে আকাশসম হিসাবে দেখি। কিন্তু সবমতের মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তরে জায়গা করে দিতে পারিনা। কারো কাছে নাস্তিক বা ধর্মনিরেপক্ষ মুক্তিযোদ্ধারা মর্যাদা পেলেও ইসলামপ্রিয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কাছে অপ্রিয়। আল্লাহর নামে শহীদ হওয়ার জন্য জীবন দিতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে চায় না তারা।
এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, মুক্তিযোদ্ধা পদ টিকে রাখতে হলে নাস্তিক বা ধর্মনিরেপক্ষ হতে হবে, মুজিবের নামে আওয়ামী লীগের গীত গাইতে হবে ও ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষে কথা বলতে হবে। একাত্তরের কোন মুক্তিযোদ্ধা ইসলামপ্রিয় হতে পারবে না। যদিও মুক্তিযোদ্ধের ঘোষনাপত্রে ধর্মনিরেপক্ষতা বা সমাজতন্ত্র কোনটি লেখা ছিল না। মানুষ মূলত স্বাধীন মাতৃভুমির জন্য যুদ্ধ করেছে, কোন বিশেষ মতাদর্শকে প্রতিষ্টার জন্য নয়। কিন্তু বলা হচ্ছে ধর্মনিরেপক্ষতা ও সমাজতন্ত্র মুক্তিযোদ্ধের চেতনা। মুক্তিযোদ্ধের চেতনা হল শোষণ মুক্ত সমাজ যেখানে সকল মতের নাগরিকের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা হবে। এই চেতনা কোন আদর্শ দিয়ে প্রতিষ্টা করা হবে তা দলীয় ও মতাদর্শগত বিষয়।
প্রকৃত অর্থে আমরা মুক্তিযুদ্ধাদের মূল্যায়ন করি কিনা? ইতিহাস ও বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ বলছে ভিন্ন কথা। মুজিবের রক্ষীবাহিনী ও জাসদের গণবাহিনী পরস্পরকে হত্যা করেছে, এতে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকেও হত্যা করা হয়েছে। এরপরে সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্যু ও পাল্টা ক্যু করে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সময়েও খেতাবপ্রাপ্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে নানাভাবে অপমান করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধের চেতনাধারী সরকারের আমলেই। কারণ এই মুক্তিযোদ্ধারা ভিন্নমতের। কারণ এরা সরকারের গুম-খুন অপশাসন, নির্বাচনে কারচুপির সমালোচনা করছে। ভিন্নমত দমনের সমালোচনা করছে।
জিয়া বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযুদ্ধা, কিন্তু কেউ কেউ বলছেন জিয়া দৈব মুক্তিযোদ্ধা। এই সরকার জিয়ার নামে করা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন দেশের বিপুল অর্থ খরচ করে। এখন জিয়াকে দেওয়া মরণ উত্তর স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের সর্বোচ্চ এই সম্মাননা জিয়াই চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়াই শেখ মুজিব ও জিয়া উভয়কে এই সম্মাননা দিয়েছিলেন। আজকে দেশের যত সংকট তৈরি করা হচ্ছে তা মুক্তিযূদ্ধের চেতনার নববিন্যাসের কারণে হচ্ছে। নানাভাবে ভিন্নমতের মুক্তিযুদ্ধাদের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করলে এর পরিনাম ভাল হবে না। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? একজনকে মহিমান্বিত করতে অন্যজনকে হেয় করতে হবে এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য নয়। জিয়া কারো কাছে অপছন্দনীয় হতে পারে, কিন্তু এই দেশের অর্ধেকের বেশী মানুষের কাছে তিনি পছন্দের পাত্র।
মুক্তিযুদ্ধের সম্মান যদি বিশেষ চেতনাধারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয় তবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিনকে দিন হ্রাস পাবে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি বাড়বে। এত বড় নেতা হওয়া স্বর্থেও শেখ মুজিবের সমালোচনা ও কটুক্তি রুখতে যাবৎজীবন কারাদন্ডের আইন করতে হচ্ছে। প্রশ্ন হল এই আইন যাবৎজীবন বহাল থাকবে কি? সরকার পরিবর্তন হলে শেখ মুজিবের সম্মান কে রক্ষা করবে?
আসলে আমরা দলীয় ও নিজ নিজ আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মুল্যায়ন করছি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকাকে সমনে রেখে নয়। তাই মুক্তিযোদ্ধের চেতনার প্রশ্নে জাতি ক্রমগত বিভক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
৯৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যুদ্ধের সময় ঘরে বসে থাকাদের বা ওপারে পালিয়ে যাওয়াদের চেতনা থাকতে পারে, তবে সেটা পলায়নতার চেতনা।
আর খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হয়েছে নব্য রাজাকার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন