পিতা হত্যার মাস্টারমাইন্ডরা কন্যার আঁচলে আশ্রিত!

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৪৩:১৮ সকাল



শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় জিয়াউর রহমানকে নানাভাবে জড়ানোর চেষ্টা চলছে। জিয়া মূলত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে দেওয়ায় কিছু বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও পরজিবী জিয়ার উপর চরম ক্ষেপা। সেই ক্ষোপ থেকে মৌলবাদের জনক আখ্যা দিয়ে বামপন্থী মিড়িয়াগুলো জিয়াকে নিয়ে ঘৃণা তৈরিতে ব্যস্ত। অথচ শেখ হাসিনা খুণের সাথে স্পষ্ট জড়িত ছিল এমন অনেককে আঁচলে আগলে রেখেছেন। মুশতাকের মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যদের নিজের মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়েছেন। ইতিহাসের এমন কিছু খলনায়ক যারা এখন সব জায়গায় আদৃত হচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন

হাসানুল হক ইনু

সবাই এক নামে তাঁকে চিনি যিনি শেখ মুজিব হত্যার পর ট্যাংকের উপর নেচে বন্দুক উচিয়ে উল্লাস করেছিলেন। উল্লাসের ছবি ইন্টারনেটে এখনও পাওয়া যায়। কথিত বিপ্লবের নামে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জনক সেই ইনু এখন শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি ভিন্নমতের গনমাধ্যম দমনে শেখ হাসিনার বিশ্বস্থ খলিফা। শেখ মুজিব হত্যায় ইনুর উল্লাসের সমালোচনা উঠলে অদৃশ্য কারণে শেখ হাসিনা তাঁকে বুকে আগলে রেখে অভয় দেন। ১৫ আগস্টের পর ইনুর গনবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রচারিত লিফলেটের শিরোনাম ছিল “খুনি মুজিব খুন হয়েছে অত্যাচারীর পতন অনিবার্য”।আজ শেখ মুজিবের জন্য তাঁর কান্না কেউ থামাতে পারেন না। শেখ হাসিনার সাথে তাঁর দহরম-মহরম সম্পর্ক যেমন জাসদের নিহত বিশ হাজার কর্মীর সাথে বিশ্বাসঘতকতা, অপরদিকে পিতা হত্যার এই সমর্থকের সাথে শেখ হাসিনার মধুর সম্পর্ক রহস্যময় হয়ে আছে।

রাশেদ খান মেনন

মেজর নূর চৌধুরীর নেতৃত্বে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের সদস্য ছিলেন এবং পরে সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেন।শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যার ব্যাপারে নূর চৌধুরী বলেন, “ওরা আমার নেতাকে(সিরাজ শিকদার) খুন করেছে, আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি”।

১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে নবগঠিত দল ইউনাইটেড পিউপলস পার্টি (ইউপিপি) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাশেদ খান মেনন। শেখ মুজিবের হত্যার পর ২৯ আগস্টে ইউপিপি পক্ষ থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গত সাড়ে তিন বছরের ঘৃণ্য ও গণধিকৃত মুজিবী রাজত্বের অবসান হয়েছে। লুট-দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ-অনাহার, চোরাচালান-পারমিটবাজি, স্বৈরাচার-পারিবারিক রাজত্ব কায়েম, জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ও অবমাননায় বিক্ষুব্ধ জনগণ প্রতি মুহূর্তে মুজিবের পতন কামনা করেছে” বিবৃতিরে আরো বলা হয়েছিল, ‘মুজিবের অপসারণে জনগণ উল্লসিত। তার মৃত্যু কারও মনে সামান্যতম সমবেদনা বা দুঃখ জাগায়নি—জাগাতে পারে না’। শেখ মুজিবের প্রতি এমন বিদ্বেষপোষণকারী মেনন শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বিমানমন্ত্রী।

মতিয়া চৌধুরী

১৯৭৩ সালে ন্যপের সাংগঠনিক সম্পাদক হন মতিয়া চৌধুরী। কালক্রমে পরিচিতি পান অগ্নিকন্যা হিসাবে। কিন্তু এই অগ্নিকন্যাই শেখ মুজিবকে বঙ্গশত্রু উপাধি দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে ডাকসু ও ছাত্র ইউনিয়ন আয়োজিত ভিয়েতনাম সংহতি মিছিলে আওয়ামী ক্যাডাররা গুলি চালালে ছাত্র ইউনিয়ন এর দুই কর্মী নিহত হয়। তাছাড়া আওয়ামী ক্যাডাররা ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি জ্বালিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক প্রতিবাদ সভায় মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, ‘তুমি আর বঙ্গবন্ধু নও, আজ থেকে তুমি বঙ্গশত্রু’। শেখ মুজিবের শাসনামলে তিনি মুজিবের চামড়া দিয়ে ডোল ও হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন। সেই অগ্নিকন্যা এখন আওয়ামীলীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রী ও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

ড. অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন

জাসদ নেতা আনোয়ার হোসেন শেখ হাসিনার কাছের লোক। শেখ হাসিনার বদান্যতায় হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তাঁর ভাই কর্ণেল তাহের, গণবাহিণীর চীফ কামান্ডার ছিলেন। সমারিক অফিসার হলেও তৎসময়ের রাজনীতির আন্ডারগ্রাউন্ডের আলোচিত চরিত্র। শেখ মুজিবের হত্যা থেকে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায়ন পর্যন্ত ক্ষমতার নানা পটপরিবর্তনে তার জোরালো বা প্রচ্ছন্ন ভূমিকা ছিল। শেখ মুজিব হত্যার পর তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ শেখ মুজিবকে করব দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি, এখন তো সেখানে মাজার হবে, উচিত ছিল লাশ বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া”।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সম্প্রতি বলেছেন, ‘আনোয়ার হোসেনকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করতে দেখেছিলাম', গুলিটা প্রথম আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে আমি জাসদে ছিলাম। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হল, আমরা গ্রেপ্তার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করব। কিন্তু ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না। জানতো- হাসানুল হক ইনু। আর, কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন’। কিন্তু পিতার শত্রু এই তাহের ও তাঁর ভাই আনোয়ার হোসেন শেখ হাসিনার কাছে আজ শত্রু নয়। ক্ষমতার নানা স্বাদ তাদের গ্রহণ করতে সুযোগ করে দিচ্ছেন।

শাহরিয়ার কবির

সময়ের আলোচিত সমালোচিত এক চরিত্রের নাম শাহরিয়ার কবির। মুরগী কবির হিসাবে বেশি পরিচিত। বঙ্গবন্ধু বলে বলে মূখে ফেনা তুলা এই ঘাতক-দালাল নির্মূলে নামা শাহরিয়ার কবির নিজেই ঘাতক-দালাল। শেখ মুজিবের শাসনামলে, শাহরিয়ার কবির লিখেছিলেন , “ মুজিব আর বঙ্গবন্ধু নয়, এখন থেকে মুজিব জনশত্রু” । শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর এই বিদ্বেষ বলে দেয় শেখ মুজিব হত্যায় তাঁর হাত রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে তিনি বেশ আদৃত।

হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ

রাজনীতিতে বহুরুপী চরিত্রের অধিকারী এরশাদ নিজের নানা মামলার সাজা এড়াতে সুবিধাবাদী রাজনীতিই করে। সকাল-বিকাল তাঁর মত পাল্টে যায়। তাই পল্টিবাজ হিসাবেই খ্যাত। স্বৈরশাসক হওয়া শর্তেও চতুরতা ও চাটুকারিতার মাধ্যমে রাজনীতিতে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এরশাদকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছেন।

শেখ মুজিব হত্যায় তাঁর জড়িত থাকার কথা দাবি করেছেন কর্নেল শাফায়াত জামিল তাঁর লেখা এক বইয়ে। তাঁর লেখা “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাত্ব মধ্য আগষ্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর” বইয়ের ১২০ থেকে ১২১ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন, ‘‘এরশাদ দিল্লিতে ট্রেনিং এ থাকার সময় হঠাৎ ঢাকায় ফিরে আসেন। এসময় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাকে ঢাকায় আশার কারণ জিজ্ঞেস করেন। এরশাদ বলেন, তার স্ত্রীর জন্য একজন কাজের লোক নিতে এসেছেন দিল্লি থেকে। তখন জিয়াউর রহমান এরশাদকে রেগেমেগে বলেন, আপনার মত সিনিয়র অফিসারা নির্দেশ অমান্য করেন বলে জুনিয়াররা প্রেসিডেন্ট (শেখ মজিব)হত্যার মত অপরাধ করে। জিয়া এরশাদ কে পরের দিন দিল্লি ফিরে যেতে নির্দেশ এবং বঙ্গভবনে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু এরশাদ জিয়ার কথা অমান্য করে গোপনে রাতেই বঙ্গভবনে মুজিব হত্যার নায়কদের সাথে বৈঠক করেন"।

তোফায়েল আহমেদ

ডাকসু সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর বলেছেন, শেখ মুজিব হত্যার রাতে বেশ ক’বার বঙ্গবন্ধু তোফায়েল আহমদ ও আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে রক্ষীবাহিনীর প্রধান তোফায়েল আহমদ কোনো সাড়া দেননি। তোফায়েল বলেছিল, ‘‘আমার কিছু করার নেই। যা হচ্ছে তা হতে দিন।’’ আজ তাদের অনেকে মুজিব কন্যার সরকারে প্রভাবশালী মন্ত্রী।

এইচ টি ইমাম

এইচ টি ইমাম শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা। শেখ মুজিবের খুনী মীরজাফর খ্যাত খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতির শপথ পড়িয়েছিলেন এই এইচ টি ইমাম।

স্বাধীনতা যুদ্ধের রাজাকারদের ছাড় না দিলেও পিতা হত্যার রাজাকার ও সুবিধাভূগীদের বিচারের কোন কথা বলা হচ্ছে না। বরং তাদের নিয়েই তিনি তরী বেয়ে চলছেন। শেখ মুজিবের লাশ ফেলে যারা মোশতাকের মন্ত্রীসভার মন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছিল তারাই এখন শেখ হাসিনার চারপাশে ঘুর ঘুর করছে। এরাই শেখ মুজিবের জন্য মায়া কান্না করছে। এরাই হয়ত আরেকটা ১৫ আগষ্ট ঘটায় কিনা এই সন্দেহ খোদ শেখ হাসিনার মধ্যে বিদ্যমান। সম্প্রতি মন্ত্রীদের চেকআপ সেই সন্দেহেরই ইঙ্গিত।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376798
২৫ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০২:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : ঠিক মত খুঁজলে দেখবেন বের হয়ে আসবে যে বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাস্টারমাইন্ড ছিল মেজর জিয়াই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File