সুন্দরবনের উপর সরকার এত নির্দয় কেন?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১০:১৯:০৪ রাত
সুন্দরবনকে নতুনভাবে চিত্রায়িত করার কিছু নেই। অনন্য এই প্রাকৃতিক বনটি বাঙ্গালি জাতির গর্ব অহংকারের প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। বহির্বিশ্বে যে কয়টা জিনিস আমাদের পরিচিত করেছে তার মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন। কিন্তু এই প্রিয় সুন্দরবন ও তার ভিতরে থাকা রয়েল বেঙ্গল টাইগার মনুষ্য সৃষ্ট দূর্যোগ রামপাল নামক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্বারা আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। সরকার স্বজ্ঞানে ঠান্ডা মাথায় এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল তা কারো কাছে বোধগম্য নয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসলেও সরকার তাতে কোন কর্ণপাত করেনি। এই প্রকল্পের দাতা ও অংশিদার ভারত তার নিজের দেশে জনগনের প্রতিবাদের মুখে এই ধরনের প্রকল্প বাতিল করতে বাধ্য হয়।
প্রথমত একটা বিষয় হল ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমাদের বিদ্যুৎ লাগবে। বিদ্যুৎ বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক ভিত্তির চাবিকাটি। যদিও সারা বিশ্বে অপেক্ষাকৃত বেশী পরিবেশ বিধংশী হওয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে মূখ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ।এ কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। তারপরও আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের সীমাবদ্ধাতার কারণে সল্প খরচের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে এটাই স্বাভাবিক।এই নিয়ে তেমন মতপার্থক্য নেই। কিন্তু তা সুন্দরবনের মত ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সম্পদকে ক্ষতি করে কেন করা হবে? সরকার যদিও বলছে এতে সুন্দরবনের পরিবেশের ক্ষতি হবে না।কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। পরিবেশবিদদের উদ্বেগ গুরুতর। সরকার মূলত ভারতের বানানো বুলি আওড়াচ্ছে। এই প্রকল্পের চুক্তি নিয়েও রয়েছে না হিসেব নিকাশ। বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদদের মতে এই প্রকল্পে মূলত প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্বার্থই রক্ষা হচ্ছে। বাংলাদেশ নামমাত্র লাভবান হবে।
বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ জনমত এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে হলেও সরকার কার স্বার্থে এই প্রকল্প অনুমোদন করল তা নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। সরকারের দুর্বল ভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে ভারত একের পর এক স্বার্থ উদ্ধার করে নিচ্ছে শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে। নৌ ও স্থল ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ নদীর পানির ন্যায্য হিসসা এখনো পাইনি। কথিত বন্ধুপ্রথিম প্রতিবেশী এই দেশটি কতটা জোঁকের মত রক্ত শোষক তা আওয়ামী লীগের না বুঝার কথা নয়। শেখ হাসিনার না বুঝলেও শেখ মুজিব তা কড়ায় গন্ডায় বুঝতে পেরেছিল। ভারতের সবক গ্রহণ না করায় ভারতের ইন্দনে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা। ভারত রাজনৈতিক ও নিজ দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্য করলেও আমরা ভারতকে অন্যভাবে দেখি। সিকিমের মত এই ভুখন্ডের প্রতি ভারতের কু নজর যে ছিল তা শেখ মুজিব বুঝত । তাই ভারতকে উপেক্ষা করে মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিলেন তিনি।কিন্তু বাংলাদেশের একটি অংশ দাদা দাদা করে এখনো ভারতকে পুজনীয় করে উপস্থাপন করছে।
ভারত এটা বুঝে গেছে যে, আওয়ামী সরকার তাদের দয়ায় ক্ষমতায় থাকতে পারছে, যে কোন সময় সুষ্ট নির্বাচন হলে এই সরকার গদি থেকে খসে পড়বে। বিরোধী মতের বিএনপি-জমায়াতের নেতা-কর্মীদের উপর অব্যাহত খুন-গুম ও নির্যাতন, সাধারণ মানুষের উপর পুলিশি অত্যাচার ও বিচারহীনতার কারনে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়া নিরাপদ মনে করছে না। সরকারের ভিতর নানা আশংকা ও অস্তিরতা কাজ করছে।তাই ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে সহায়তার আশ্বাস আওয়ামী লীগের কাছে এখন সবার উর্ধ্বে বিবেচ্য বিষয়।
সংসদের বাহিরে থাকা বিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়ত যখন নির্বাচন বা সংলাপের কথা বলে তখন আওয়ামী লীগের পেট মুছড় দিয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক হোলি অটিজানে বিদেশী জিম্মি হত্যায় হতাশাগ্রস্থ সরকারকে বিএনপি জঙ্গি ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকার একলা চল নীতিতে হেঁটে চলছে অজানা গন্তব্যের দিকে। পশ্চিমা বিশ্ব সময়ে সময়ে আগাম নির্বাচন বা জাতীয় এক্যের যে সবক দিচ্ছে তা আওয়ামী লীগের শীরা পীড়া আরো বাডিয়ে দিচ্ছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্টিত দুর্বল এই সরকার দেশের ভেতরে বাইরে বন্ধুশুন্যতায় ভোগছে এখন। দমন-পীড়ন ও নির্বাহী হস্তক্ষেপে ভিন্নমতের গনমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে আপাতত নানা অপকর্ম ও দূর্নীতি আড়াল করছে।
প্রশাসনের উপরও সরকারের খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। পুলিশের নানা বেপরোয়া কর্মকান্ড বলে দিচ্ছে প্রশাসন সরকারকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা সরকারকে তারাই ঠিকিয়ে রেখেছে। গত স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন গুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নজিরবিহীন কারচুপি করলেও প্রশাসন না দেখার বান করে তাদের সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগের পালাবার জায়গা নেই।
জনভিত্তিহীন এমন সরকারের পক্ষে দেশের স্বার্থে কাজ করা যায় না। সম্প্রতি তুরষ্ক ঘটে যাওয়া বিদেশী মদদে ব্যর্থ অভ্যুন্থান এরদোগান ঠেকিয়ে দিয়েছে মূলত জনগনের শক্তিতে। ক্যুকারী ও তাদের বিদেশী মদদদাতাদের এরদোগান যেভাবে আগ্রাসী কায়দায় জবাব দিচ্ছে তা মূলত জনপ্রিয়তার কারণে পারছে। তুরষ্কের জনগণের কাছে এরদোগানের বিকল্প নেই এই ধারনা বদ্ধমূল হয়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণ, জনমত ও গনতন্ত্রের উপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা দুটোই নষ্ট করে ফেলেছে।তাই ক্ষমতায় ঠিকে থাকার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের ভারতের পদ চুম্বন করবে এটাই স্বাভাবিক। জনগণের ইচ্ছার গুরুত্ব আওয়ামী লীগের কাছে শুন্যের কোটায় পৌছে গেছে। তাই এখন গনতন্ত্রের বদলে উন্নয়ন তত্ত্ব ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় দরকার শক্তিশালী জনভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার। সেই সাথে দরকার বিভিন্ন মত ও পথের সকল শক্তিকে বিনা শর্তে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
বিষয়: বিবিধ
১০০৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন