তুরষ্কের ব্যর্থ ক্যু এর পেছনের শক্তি কারা?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০৪:০৩:৪৭ বিকাল
দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ১৫ জুলাই রাতের আঁধারে তুরষ্কে ঘটে যাওয়া ব্যর্থ ক্যু এর মূল হোতাদের রাষ্ট্রের সব স্তর থেকে নিশ্চিহ্ন করার যে পরিকল্পনা এরদোগান হাতে নিয়েছেন তাতে ব্যর্থ ক্যু এর পেছনের শক্তি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ও মিডিয়া ইনিয়ে বিনিয়ে একই সুরে এরদোগানের সমালোচনা করে যাচ্ছে। এই যাত্রায় তারা ব্যর্থ হয়ে যেন প্রলাপ বকছেন।
এরদোগান বলেছেন জনগণ যদি চায় তিনি ব্যর্থ অভ্যুত্থানকারীদের শাস্তি দিতে ২০০৪ সালে বিলুপ্ত করা মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনবেন। তিনি চান না পশ্চিমা মদদপুষ্ট ঘৃণ্য এই হোতাদের জেলে পুরে জনগণের অর্থে খাওয়াতে। এতেই পশ্চিমা গনতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের যত মাথা ব্যাথা। তারা ক্যুকারীদের রক্ষা করতে এরদোগানকে নানা উপদেশ ও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত । এমনকি হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। যখন ক্যুকারীদের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবি উঠছে রাজপথে জনগনের কাছ থেকে তখন যুক্তরাষ্ট্র তুরষ্ককে ন্যাটো জোট থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছে অথচ যুক্তরাষ্ট্রে এখনও মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করা হয়নি। মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনলে ইইউ তুরষ্ককে এই জোটের সদস্য করা হবে না বলে হুমকি দিয়েছে। ইইউ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোগেরিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের বিধান বহাল রেখে কেউ ইইউ সদস্য হতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হল এর আগে সফল অভ্যুত্থানকারী সেনা শাসকদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর কাজ করতে সমস্যা হয় নাই কেন? কেন গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সাথে চলতে তাদের এত পীড়া?
“যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা” , আসল কথা হল পশ্চিমাদের কাছে এরদোগানের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এরদোগানের ইসলামী মিশনে তারা ভীত। বিশ্বের যেকোন প্রান্তের নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বর তিনি। আর এরদোগানের নেতৃত্বে বিশ্বরাজনীতিতে তুরষ্ক ক্রমাগত প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। মুসলিমদের পক্ষে কথা বলছেন। পশ্চিমাদের ডাবল স্টান্ডাডের মুখ ও মুখোশ উম্মোচন করে দিচ্ছেন। নানা ইস্যুতে পশ্চিমাদের সবক গ্রহণ করছেন না। এতে এরদোগানকে সন্দেহের চোখে দেখছে তারা। তারা নতুন নতজানু নেতৃত্ব চায়, যেভাবে মিশরে সিসিকে পশ্চিমা ও ইসরাইলের মুর্তি বানিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নেতানিয়াহু ও সৌদি বাদশার পায়ে মাথা গোচানো ছাড়া সিসির আর করার কিছু নাই।
এই ব্যর্থ ক্যু এর জন্য যাকে দায়ী করা হচ্ছে এক সময়ের এরদোগানের মিত্র সেই ফেতুল্লাহ গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সিআইএ ও ইসরাইলের সাথে তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারনা করা হয়। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে প্রভাবশলী গুলেনের মনে ক্ষমতার লিপ্সা জাগবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সামাজিক আন্দোলন করে আসা এই রহস্য ব্যক্তি জনগনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন সম্ভবনা না পেয়ে এরদোগান সরকারের সাথে পাল্লা দিয়ে প্যারালাল সরকার কায়েম করে তুরষ্কে। যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় যখন গত কয়েক বছর আগে এরদোগান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কথিত দূর্নীতির অভিযোগ আনে গুলেনপন্থী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। এতে একেপি সরকারের পতনের অবস্থা সৃষ্টি হয়। তখন থেকে এরদোগানের সাথে গুলেনের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এরপর থেকে নানাভাবে গুলেনপন্থীদের প্রশাসন থেকে ছাঁটাই করার উদ্যোগ নেয় ক্ষমতাসীন সরকার। ব্যর্থ ক্যু ছিল পশ্চিমাদের ইন্দনে গুলেনের শেষ কামড়। কিন্তু এই যাত্রায় বেছে গেলেন এরদোগান। উম্মোচিত হল এরদগানের দেশী-বিদেশী শত্রু-মিত্র। এই ব্যর্থ ক্যুকে এরদোগান আল্লাহ প্রদত্ত রহমত হিসাবে দেখছেন। এতে করে তিনি পু্রো দেশকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ পেয়েছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন আরো ক্ষমতাবান, আরো জনপ্রিয়, নায়ক থেকে মহানায়ক।
বিষয়: বিবিধ
১১১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
গণতন্ত্রের প্যাকেটে মূলত এরা লুটপাট ও আধিপত্যবাদকেই লালন করে ।
কোনখানে যদি প্রকৃত গণতন্ত্র আসে এবং এতে তাদের লুটপাটে বাধা আসে তাহলে সেই গণত্নত্রের মায়েরে বাপ ....
নিজেদের দেশকে এরা গণতন্ত্রের মডেল বলে পরিচিত করে - কারণ গণতন্ত্রের মুখোশ পড়ে বিভিন্ন দেশ হতে লুটে আনা ধন সম্পদে নিজ দেশের মানুষকে তারা আরাম আয়েশে রেখে ঘাঢ় এক পাশে ঘুরিয়ে রাখে । অথবা নিজেরা আরাম আয়েশে আছে - সেটা কিভাবে আসলে , কেমন করে আসলো - এটা জানার কোন তাগাদা অনুভব করে না ।
তাই অন্য কোথাও কোন হানাহানি ঘটলে তারা ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে পারে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন