আইএস হতে পারে বর্তমান সময়ের খারেজী
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ০৫ জুলাই, ২০১৬, ০৪:২৩:০৩ বিকাল
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব আজ যে অস্তিরতা, হত্যা ও মিথ্যার চাদরে ঢাকা পড়ছে ,তা মূলত উগ্র সেক্যুলার, নাস্তিক ও উগ্র ধর্মান্ধতার মিথষ্কিয়ায় সৃষ্ট। উগ্র সেক্যুলাররা ধর্ম বিশেষভাবে ইসলামকে মোটেই সহ্য করতে পারছে না। মুসলিম বিশ্বে কথিত সেক্যুলার মুসলিমরাও ইহুদী-নাসারা ও মুশরিকদের মত তাদের ধর্ম ইসলামকে তিলে তিলে ধ্বংশ করতে চায়। শরিয়াকে আইনের উৎস হিসাবে এরা কোন অবস্থায় মেনে নিতে রাজি নয়।দুনিয়ার ভোগবিলাসে তারা এতটা মগ্ন হয়েছে যে, আল্লাহর পাঠানো বার্তা নিয়ে ভাবার অবসর তাদের নেই। আল্লাহর আযাবের ভয় থেকে বাঁচতে তারা ইসলামকে নির্মূল করে দিতে চাইলেও আল্লাহ তার দ্বীনকে ভাঙ্গা-গড়ার মধ্যে দিয়ে নানাভাবে পূনঃর্জাগরণ করে বিকশিত ও বিজিত রাখছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পূর্ণতাদানকারী। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। [সূরা ছফ-৮-৯]
জঙ্গিবাদ নিয়ে আজ সারা বিশ্ব চিন্তিত। কিন্তু কেন ও কীভাবে এই জঙ্গিবাদ তথা ফেনাটিজমের জন্ম হল তার প্রকৃত কারণ নিয়ে আলোচনা-বিশ্লেষণ হয় কম। যেখানে মুসলিম শাসক সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধের কাজ করছে, ইসলামের শিক্ষা নির্মূলে সদা তৎপর থাকছে, সেখানে ইসলাম নিয়ে এহেন হটকারীতা উগ্র ধর্মান্ধতার ক্ষেত্র তৈরি করছে। মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমাদের অযাচিত হস্তেক্ষেপ ও সামারিক অভিযানে নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা ক্রমাগতভাবে কিছু মুসলিমকে স্বসস্ত্র যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেক্যুলার নামধারী মুসলিম -ইসলামপন্থীদের পারস্পরিক দন্ধ ও সংঘাত থেকে উগ্র ধর্মান্ধতার জন্ম নিয়েছে। কিছু উগ্র ও কট্রর গোষ্ঠী ইসলামে বর্নীত যুদ্ধের বিধিবিধান ভংগ করে পশ্চিমাদের মত নিরাপরাধ নারী-পূরুষ ও শিশু হত্যার লীলা খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে। আইএস তেমন একটি গোষ্ঠী যাদের সারা বিশ্বে আবেদন রয়েছে। বাংলাদেশের মত যেসব দেশে উগ্রপন্থীরা কোনঠাসা হয়ে আছে, তারা নানাভাবে আইএস এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। আইএস গত পঞ্চাশ বছরে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন জিহাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও আদর্শিকভাবে ভিন্ন মতালম্বী। এদের সাথে রাসুল(স) বির্নীত খাওয়ারিজদের সাথে বেশী মিল পাওয়া যায়। এরা মুখে ইসলামের কথা বললেও যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান মানছে না, বরং তারা শত্রুকে পশ্চিমা আদলে শায়েস্তা করছে। হত্যার ব্যাপারে এরা নারী-পুরুষ-শিশু ও অপরাধী-নিরাপরাধী বিচার-বিবেচনা করছে না। এমনকি মুসলিমের মাঝে যারা এদের আনুগত্য অস্বীকার করছে তাদেরকেও হত্যা করছে। আইএস এর নেতা-কর্মীরা অল্প বয়ষ্ক তরুণ যা খারেজীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচাইতে উত্তম কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে যেইভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে।”
বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (নিসা ৪/২৯) । কিন্তু আইএস তাদের সমরনীতির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসাবে আত্তগাতি হামলাকে বেচে নিয়েছেন। যেখানে নিজের মৃত্যুকে নিজেই নির্ধারণ করে নিয়েছে। গুলশানে হামলাকারীরা বাঁচার চেষ্টায় করেনি, বরং সেনাবাহিনী কখন গুলি করে তাদের হত্যা করবে এই আহ্লাদে বসে ছিল। এমন অভিনব আত্তহত্যা নিয়ে ভাববার প্রয়োজন রয়েছে।
হত্যার ব্যাপারে উগ্র সেক্যুলাররা যেমন সীমালংঘন করছে, তেমনি আইএস এর মত কিছু উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীও সীমালংঘন করে যাচ্ছে। আইএস ইসলামের নামে এই সব অপরাধ করার ফলে তা আরো বেশী উদ্বেগের বিষয়। ইসলামে নিরাপরাধ একজন মানুষ হত্যা গোটা মানবজাতি হত্যার সমান।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, "হত্যার বদলে হত্যা বা সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি প্রতিফল ছাড়া অন্য কোনো কারণে কেউ যদি একজনকেও হত্যা করে, তাহলে সে যেন মানবজাতির সবাইকে হত্যা করল" [আল-মায়িদাহঃ-৩২] “আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা কর না” [সূরা বনী ইসরাঈল:-৩৩]
গুলশানে সম্পূর্ণ হত্যার অযোগ্য মানুষদেরকে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের শাসক ও সেনাবাহিনীর দায় কখনো এই সব দেশের সাধারণ মানুষের উপর পড়বে না। আল্লাহদ্রোহীতার জন্য অমুসলিমদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একমাত্র হকদার আল্লাহ তায়ালা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না" [সূরা আনআমঃ-১৬৫]
“প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই উপর বর্তাবে” –[সুরা বাকারাঃ- ২৮৬]
পশ্চিমারা নির্বিচারে বোমা মেরে মুসলিম নারী-শিশুদেরকে হত্যা করছে । আর এই যুক্তিতে অমুসলিম নারী-শিশুদের হত্যা কখনো জায়েজ নয়। ইসলামে যুদ্ধের ময়দানে নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে, এমনকি ক্ষেত-খামার ও অট্রালিকা ধ্বংস করাও নিষিদ্ধ।
রাসুল(স) বলেন, কোন নারী, শিশু, বৃদ্ধকে হত্যা করো না ও গির্জায় অবস্থাকারী দুনিয়া পরিত্যাগকারীকে হত্যা করবে না। [আবু-দাউদ] খেজুর এবং অন্যকোন গাছ কাটবে না, কোন অট্রালিকা ধ্বংস করবে না [আল-বুকারী]
বিষয়: বিবিধ
১১৭৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কাবা মুসলমানদের কিবলা এবং এর তওয়াফ করা আল্লাহরই হুকুম । মুসলমানেরা কেবল আল্লাহর নির্দেশই পালন করছে ।
ইহুদী খৃষ্টানরা নিজেরা মুসলমানদের যত না ক্ষতি করতে পারে তার চেয়ে বেশী পারে বিপথগামী মুসলমানদের ব্রেইন ওয়াশ করে ।
ক্রসফায়ারবাজীদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলে মানুষ তাদেরকেই হিরো ভাবে।
বাংলাদেশ সরকারের সাথে একমত।
আইএস এর অপারেশনের ধরনই আলাদা। আইএস প্রত্যেক সদস্যের suicide vests and belts থাকে। যা এদের ছিল না। জঙ্গী গুলো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পরে ক্রস ফায়ারে মারা পরছে। ওদের ধারনা, মানুষ মেরে জান্নাতে আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন