ধর্ষণপ্রবনতার জন্য কতটা পোশাক দায়ী? ইসলাম কি বলে?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৩ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৩০:০৩ সন্ধ্যা
তনু ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকার। তনু হিজাবী মেয়ে, তারপরও ধর্ষণের স্বীকার। তাহলে প্রশ্ন জাগে ধর্ষণপ্রবনতার জন্য কতটা পোশাক দায়ী? অনেকে বিচার চাইছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কার কাছে বিচার চাইছেন, শাসক-বিচারক জামায়াত-বিএনপি আর ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত। এই দিকে ফিরে তাকানোর সময় নাই। বিচার নয় আমি তার কাছে ক্ষমা চাই, তার জন্য ক্ষমা চাই। ধর্ষণ একটা অপরাধ, হত্যা যেমন অপরাধ। ঘুষ-খাওয়া, আত্মসাৎ করা, চাঁদাবাজি মাস্তানি মাদকসেবন তেমনই অপরাধ। এই সব অপরাধের ধরণ মাত্রা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ভিন্নতা আছে, একটা সাথে আরেকটার যোগসূত্রও রয়েছে।
‘‘হে মুমিনগণ! নিশ্চিত মদ, জুয়া প্রতিমা এবং ভাগ্যনির্ধারক তীর নিক্ষেপ এসবগুলোই নিকৃষ্ট শয়তানী কাজ। [সূরা মায়িদা:৯০]
‘‘নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের পরস্পরে শক্রতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায় [সূরা মায়িদা:৯১]
চাঁদাবাজি মাস্তানি মাদকসেবন ধর্ষণপ্রবনতার অন্যতম কারণ।
ধর্ষক কারা? ধর্ষিতা কারা?
পাঁচ বছরের কেউ নিশ্চয় ধর্ষণ করে না, কিন্তু এই বয়সে ধর্ষণের স্বীকার হতে দেখা যায়।প্রভাবশালী সমাজের উঁচু শ্রেণীর পর্দাহীন বা পর্দানশীন কেউ ধর্ষণের স্বীকার হয় তার সংখ্যা হতে গোনা, গ্রামীণ হত দরিদ্র শ্রেণী অবলা মেয়েরা ধর্ষণের স্বীকার হয় বেশী। নিশ্চয় মন্ত্রী এমপির মেয়েরা ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে না।কিন্তু তাদের লালিত মাস্তানরাই ধর্ষণের মূল আয়োজক। অভিনয় জগতের তাঁরা গুলোর কেউ না। কিন্তু তাদের অনুরাগী অনেকই ধর্ষক-ধর্ষিতার তালিকায় পাওয়া যায়। ধর্ষক কারা? প্রধানত বখাটে সন্ত্রাসী, পাড়ার মাস্তান, মাদকাশক্ত ও প্রভাবশালীরাই এই বলয়ের বাসিন্দা।
ধর্ষণের কারণ আসলে কি?
ধর্ষকের চরিত্রেই তা ফুটে ওঠে। ধর্ষণের জন্য পোশাক মৌলিকভাবে দায়ী নয়। ধর্ষকরা সল্পবসনা মেয়েদের টার্গেট করে বেশী। এর অর্থ এই নয় যে ধর্ষক থেকে রেহাই পেতে ভারী পোশাকই সামাধান। তবে এটি সহায়ক। ধর্ষণ রোধে শালীন পোশাক মেয়েদের দিক থেকে করণীয়। শালীন পোশাক কুমন্ত্রনাকে কমিয়ে দিতে পারে। কারণ মেয়েদের প্রতি পুরুষের সহজাত মোহ রয়েছে।
“মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে নারীর ভালবাসা” [সুরা আল ইমরান:১৪] ১৪।
ধর্ষকরা এর অবৈধ অমানবিক চর্চা করে।
ইসলাম কেন পর্দা করতে বলেছে?
প্রথমত এটি আল্লাহ এর বিধান। যেমনটা তিনি চেয়েছেন। আল্লাহ বলেননি পর্দা করলে ধর্ষণ থেকে বাঁচা যাবে। পর্দা শারীরিক সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখার জন্য। আল্লাহ শালীনতাকে পছন্দ করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ লাজুক, গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা তথা পর্দা-শীলতাকে পছন্দ করেন।
আল্লাহ চাননা জাহেলী যুগের নারীদের মত মুমিন নারীরা বাহিরে ঘুরে বেড়াক।
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।”। [সুরা আহজাব : ৩৩]
কারণ পুরুষমাত্রই নারীর দৈহিক রুপের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। এতে উভয়ের মধ্যে ফেতনা সৃষ্টির পথ পেয়ে যেতে পারে শয়তান। কোন পুরুষ যদি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে ,তা নারীকেও প্রভাবিত করবে, শয়তান তাদের উভয়ের অন্তরকে ধীরে ধীরে জিনার দিকে ধাবিত করবে, তা তাদের অজান্তেই।
“আর যখন নবি-পত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র”। [সুরা আহজাব : ৫৩]
আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে । [সূরা নূর, আয়াত: ৬০]
এখানে ভয়টা যেনার, ধর্ষণের নয়। যেনা যত সহজে হয়ে যেতে পারে ধর্ষণ তত সহজে নয়। ধর্ষণের জন্য দরকার হয় মানবিক বিকৃতি, শক্তিমত্তা, শাস্তি থেকে পার পেয়ে যাওয়ার উপায়। যা একটি সমাজে তিলে তিলে বিকাশ লাভ করে।
ধর্ষণ একটি একমূখি অপরাধ
জেনা ও ধর্ষণের মধ্যে আছে তফাৎ। যেনা হয় সম্মতিতে। তাই যেনার শাস্তি উভয়কে দিতে হবে। কিন্তু ধর্ষণের শাস্তি ধর্ষককে দিতে হবে, ধর্ষিতা নয়। ইসলামে হত্যার ন্যায্যতা থাকলে দায়মুক্তি পেতে পারে, কিন্তু ধর্ষণের কোন ন্যায্যতা নেই। এটি শর্তহীন অপরাধ।
ধর্ষণ অপরাধপ্রবণতার অংশ
কারা ধর্ষণ করে? বড় প্রশ্ন। যে কেউ এই ফাঁদে পা দিতে পারে। সাধারণত দেখা যায় ধর্ষকশ্রেণীটা নানা অপরাধ প্রবণ হয়। এদের সিংহভাগ মাদকাশক্ত, হত্যা রাহাজানি চাঁদাবাজি তাদের নিত্য দিনের কর্মসূচি। এরা প্রভাবশালীও বটে বা সমাজ ও দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে।
ধর্ষণ মানসিক বিকৃতি
পর্নোগ্রাফি দর্শকের মনের মানসিক বিকৃতি ঘটায়। পর্নোগ্রাফি তার মনে যে সার্বক্ষনিক যৌন লালসা তৈরি করে ধর্ষণ চিন্তা তার একটি কারণ। এভাবে কিছু ধর্ষকের জন্ম এই পর্নো ইন্ডাস্ট্রি থেকেই।
অপরাধীর পার পাওয়া সম্ভবনা
একটি রাষ্ট্র বা সমাজে যখন আইনের শাসন থাকে না, অপরাধ সেখানে বাড়বেই। মানুষ মাত্রই অপরাধ প্রবণ। এটি তার সহজাত গুণ। অপরাধ করার ইচ্ছা কম বেশী সবার মনে জাগে। একজন তাকওয়াবান মুসলিম আল্লাহ এর ভয়ে অপরাধ থেকে বেঁচে থাকে। অনেকে বিবেক ও নৈতিকতাবোধ থেকে ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখে। কেউ আবার শাস্তির ভয়ে দূরে থাকে। যারা কেবল শাস্তির ভয়ে দূরে থাকে তারা যখন সুযোগ পায়, অপরাধে তার কিছু হবে না, তখন অপরাধ করতে তার দায় লাগে না।
মুসলিম হয়েও কেন ধর্ষণ করে?
অবাক হওয়ার বিষয়। কিন্তু এটা সত্য যে মুসলিম ধর্ষকও আছে। কেন? কারণ জানতে দেখতে হবে মুসলিম সমাজের কারা ধর্ষণ করে। মুসলিম ধর্ষকের মধ্যে বেশীর ভাগই ইসলামের চর্চা করে না। নামেই মুসলিম। তাদের কাছে আল্লাহের ভয়ের বালাই নেই। দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও ফূর্তি কর! এই ছন্দে তাদের জীবন কাটে। দুনিয়ার মোহে তারা ভাল-মন্দের তফাৎ ভুলে গেছে। ইসলাম কি হালাল করেছে কি হারাম করেছে তা জানা ও মানার সময় তাদের হয় না।
ধর্ষণ রোধে পোশাকী পর্দা কতটা কার্যকর?
পর্দা যেনা-ব্যভিচার ব্যহায়াপনা রোধে একটি সহায়ক উপায়। শয়তান যেনা-ব্যভিচারের মত পাপকে সহজ সরল করার জন্য মানুষের লজ্জার প্রাচীর ভেঙ্গে দিতে চায়। আর লজ্জার মত মনবীয় গুণকে ধরে রাখতে পর্দা কার্যকরী। অবশ্য মনের পর্দাই আসল পর্দা।
আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম”। [সুরা আরাফ : ২৬]
ধর্ষণের ইচ্ছা তো ধর্ষকের অন্তকরণে থাকে। নারী গায়ের পর্দা দিয়ে কি ধর্ষকের মনের জ্বালা মিটানো যায়! ধর্ষণ রোধে ধর্ষকের অন্তকরণে আগাত হানতে হবে। তার অন্তকরণে পর্দা ফেলে মুছে দিতে হবে ধর্ষণের চিন্তা। কেমনে মুছবেন? নৈতিক ও মানবিক শিক্ষা দিতে হবে, থাকতে হবে শাস্তির নিশ্চায়তা। শাস্তির নিশ্চায়তা কেমনে দিবেন? তার জন্য দরকার সুশাসন, আইনের শাসন।
ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের বিধান কি?
ইসলামে অপরাধ দমনে একক সামাধান। তা হল তাকওয়া অর্জন। আল্লাহর ভয় মুছে দিতে পারে ধর্ষণের মত মানবতা বিরোধী অপরাধকে। তাকওয়া হানা দিতে পারে ধর্ষকের অন্তকরণে। দুনিয়ার শাসককে ফাঁকি দেওয়া যায় কিন্তু আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়া যায় না। আর ধর্ষককে দিতে হবে প্রাপ্য শাস্তি। মেয়েদের দিক থেকে শালীন পোশাক পরিধান করণীয়।
“হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা-স্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম”। [সুরা আরাফ : ২৬]
‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং গোপন অঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে জানেন। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং গোপন অঙ্গের হেফাজত করে।—[সূরা নূর: ৩০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘পথের হকগুলোর একটি অন্যতম হক হলো, দৃষ্টিকে সংযত রাখা।’ (বুখারি শরিফ)
আর ইসলামের সামগ্রিক বিধি-বিধান মেনে চলার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা যায়। যে যত বেশী ইসলামকে মানতে পারবে তার তাকওয়ার পারদ তত বেশী উঁচু হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঝাজাকাল্লাহ খায়ের ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন