মানবিকনীতির উপর অর্থনীতির প্রভাব বিস্তার ও নয়া উপনিবেশবাদ
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ০১ মার্চ, ২০১৬, ০৪:০৮:৫২ বিকাল
পৃথিবীর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে দুটি মৌলিকভাবে ভাগ করা যেতে পারে, একটা হল মানবিকনীতি, আরেকটা অর্থনীতি। মানবিকনীতির কাজ হল মানবাধিকার সুরক্ষা করা। অর্থনীতির কাজ হল মুনাফা সর্বোচ্চকরণ। কথা ছিল অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করবে মানবিকনীতি, কিন্তু আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। মানবাধিকারের চেয়ে অর্থনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে
অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বলতে শোনা যায়, সেবাই তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু কর্মের বিচারে তার প্রমাণ খুব কমই মিলে। মুনাফার স্বার্থে তারা কর্মী ও ভোক্তার মানবিক স্বার্থ খুব কমই গুরুত্ব দেয়। বিশ্বের মোড়লরা কেবল তাদের অর্থনীতির স্বার্থে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ জিইয়ে রাখছে। এভাবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজস্ব শক্তিশালী আত্তনির্ভরশীল অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এইভাবে মানবনীতির উপর অর্থনীতি প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। তাই পৃথিবীতে সামগ্রিক মানবাধিকারের এই বেহাল দশা।
বিশ্বব্যাপি মানবাধিকারের আর্তনাৎ বিশ্বমোড়লদের মন গলাতে পারেনি। ফ্রান্সে হামলার বদলা নিতে ওলাদ ইরাকে ঝটিকা বিমান হামলা চালিয়ে কার্যত সাধারণ ইরাকিদের হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, রাশিয়াও অর্থনৈতিক ও কুটনৈতিক স্বার্থে সিরিয়ায় প্রতিনিয়ত বিমান হামলা চালিয়ে আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কারো কাছে মানবাধিকার গুরুত্বপূর্ণ নয়। ক্ষমতার অহমিকায় উম্মাদ এই বিশ্বমোড়ল গোষ্ঠী সারাবিশ্বে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করছে। সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে এই ধরণের আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ নতূন উপনিবেশবাদ হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে। এতে তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকছে। যখনই পশ্চিমাদের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, তখনই কোন না কোন ষড়যন্ত্রের সূচনা করে। সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে এই ধরণের আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ নতূন উপনিবেশবাদ হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে এখন অর্থনীতি উন্নয়নের কথা বেশ জোরে সুরে বলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার কাছে ৫ এ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনের পর আর গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে না। সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে বলা হত গণতন্ত্রের মানসকন্যা। এখন আর তাঁকে তাঁর নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলছে না, কারণ এখন তিনি ৫ এ জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা করে কার্যত গণতন্ত্রের পথ থেকে ফিরে এসেছে। এখন তাঁর নেতা-কর্মীরা মুরিদ সেজে তাঁকে অলি আওলিয়া বানিয়ে পেলেছেন। তাই সংসদ অধিবেশন ডাকা হয় মুরিদদের মেজবানের জন্য যেখনে মুরিদরা অলি-আওলিয়ার গুণকীর্তন করবেন । সাম্প্রতিক টিআইবির রিপোর্টে সংসদকে পুতুল নাচের নাঠ্যশালা বলে উপযুক্ত বিষেশণে বিষেশায়িত করেছেন। সংসদ সদস্য হিসাবে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তারা মুলত হয় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত অথবা নায়ক-নায়িকা বা গায়ক-গায়িকা। সংসদ এখন জাতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনার কেন্ত্র নয়, এটি সাংসদের বিনোদনের জায়গায় পরিনত হয়েছে।
গণতন্ত্র না থাকায় শেখ হাসিনা উন্নয়ন তত্ত্ব শুনিয়ে জনগণকে খুশি করা চেষ্টা করছে। মূলত উন্নয়ন তত্ত্ব ব্যবহার করে অব্যাহত গুম, হত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার মত নানা অপরাধ ডাকার চেষ্টা করছে। সীমাহীন দুর্নীতির বেড়াঝালে আবদ্ধ উন্নয়ন তত্ত্ব কেবল চোখ ধাধানো ঘোষণা মাত্র। এর কার্যকর কোন সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এই উন্নয়ন তত্ত্ব মূলত আওয়ামী নেতা-কর্মীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। দেশের অর্থনীতি যেঠুকো টিকে আছে তা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও নিরীহ গার্মেন্স শ্রমিকদের সস্তা শ্রমের বদৌলতে।
বিষয়: বিবিধ
১১২৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন