ভালবাসার মহত্ব , ভালবাসা দিবস ও কতিপয় উম্মাদ নাস্তিকের মর্মজ্বালা

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:৫২:০২ দুপুর

ভালবাসা একটি ইতিবাচক শব্দ। এই শব্দের খোলসে মোড়ানো আছে সৃষ্টির সবকিছু। এই শব্দ মিশে আছে স্রষ্টার সিফতের সাথে। মহান স্রষ্টা এই পৃথিবীর সবকিছুকে তার অকৃত্রিম ভালবাসার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছেন। সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতির জন্য তার ভালবাসা অনন্য। তাই আল-কুরাআনে বর্ণিত হয়েছে প্রথম মানব সৃষ্টির এক অনন্য ইতিহাস, আর এই মানবজাতির জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন এই তামাম দুনিয়ার সবকিছু। মানব জাতির প্রতি অগাধ ভালবাসার কারণে সৎকর্মের পুরষ্কারস্বরুপ সৃষ্টি করেছেন জান্নাত। মহাগ্রন্থ আল কুরাআনে বহুবার বিশেষ বিশেষ গুণের নরনারীকে ভালবাসার কথা বলা হয়েছে। তিনি যাদের ভালবাসেন তাদের জন্য ঘোষণা করেছেন বিশেষ ক্ষমা। নিবেন হিসেবটা সহজ করে, তার মানে সোজা জান্নাত! এই হল ভালবাসা। যার ছেদ পড়ে না, শুধু কল্যাণই যার পরিণতি।

স্রষ্টা প্রতি তার ভক্তকূলের ভালবাসা,সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা,ভাই-বোনের ভালবাসা,স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা, অসহায়ের প্রতি ভালবাসা। পরিণামের বিচারে এই সব ভালবাসাই কল্যাণধর্মী। নবজাতকের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালবাসাই অসহায় শিশু সন্তানটি আয়েশে বেড়ে ওঠে। নবজাতকের সেবা-যত্নে মায়ের অসীম ত্যাগ ও কষ্টসাধন ভালবাসার কারণেই কেবল সম্ভব। স্রষ্টা মায়ের বুকে এমন ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এই ভালবাসার তুলনা পৃথিবীতে নেই। অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দেওয়া মানবপ্রেমীদের ভালবাসার ফসল।

যেখানেই ভালবাসার অভাব রয়েছে, সেখানে ঘটছে অমানবিক যত কাজ। একজন খুনি তখন খুন করতে পারে যখন তার হৃদয়ে ভালবাসা ফুরিয়ে যায়। আজ পৃথিবীতে ভালবাসা নিঃশেষ হয়ে না গেলেও, বহুক্ষেত্রে তার বড়ই আকাল পড়েছে। ভালবাসার নিঃস্বার্থ রূপ হারিয়ে যাচ্ছে, সবখানে সবকিছু যেন কোন না কোন স্বার্থে জড়ানো। আজ মানুষ পিতা-মাতা, ভাই-বোন নিকট আত্মীয় বাদ দিয়ে সম্পর্ক ঘটছে ভিনপুরুষের সাথে। সম্পর্ক গড়ছে কর্মস্থলের বস-সহকর্মীদের সাথে যেখানে স্বার্থ আছে, ভাবছে এরাই আসল ভালবাসা চর্চার জায়গা। অর্থ ও নানা স্বার্থে ভালবাসার নিঃস্বার্থতা হারিয়ে যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসা কোন এক অজানা স্বার্থে বন্দী হচ্ছে, বাড়ছে পরকীয়া নামক এক মহামারী, যা নিঃস্বার্থ ভালবাসাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে। ইতিহাসের বিচারে এটির বাংলা নামকরণ সঠিক হয়নি। এই দিবসের ইতিহাস প্রনয়-অভিসারের সাথে সম্পর্কিত। সেই হিসাবে একে প্রনয় দিবস নামকরণ করলে যথার্থ হত। ভালবাসা শব্দ কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার প্রনয়সিক্ত ভালবাসাকে বুঝায় না। এর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। মহৎ এই শব্দের এহেন ব্যবহার অমর্যাদাই বলা চলে। এই দিবস তরুণ-তরুণীর মাঝে অশ্লীল প্রনয়ের উম্মাদনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভালবাসার নামে মূলত অশ্লীল-বেহায়াপনা ও পশ্চিমা অপসংষ্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে তরুণদের মাঝে।

স্বার্থ, বেহায়াপনা ও অপসংষ্কৃতির কবলে পশ্চিমাদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা আজ প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের ভালবাসা স্বার্থের জালে মুড়ানো। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন এতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে কেউ কারোর প্রয়োজন অনুভব করছে না, কেউ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকারের বিষয়টা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পিতা-মাতার মায়া-যত্ন থেকে সন্তান বঞ্চিত হচ্ছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার খোঁজ রাখছে না সন্তানরা। তারা আজ পিতা-মাতাকে বুঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছে। মন কতটা মমতা-ভালবাসা শুন্য হলে এহেন কর্ম সম্ভব!

এই ভালবাসা দিবসকে পুঁজি করে কতিপয় নাস্তিক ঈমান বিধংশী বেহায়াপনা ছড়িয়ে দিয়ে চায়। কেউ চায় রাজপথে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া হউক, আরেক উম্মাদ নাস্তিক একটু বাড়তি আশা করে, তার ইচ্ছা প্রকাশ্যে সেক্স করা হউক। মনুষ্যত্বের কতটা বিলোপ হলে পশুর মত প্রকাশ্যে সেক্স করার কথা ভাবতে পারে, বলতে পারে!মূলত এগুলো নাস্তিকদের মর্মজ্বালা। সারা বিশ্ব যখন ধর্মবিদ্ধেষী নাস্তিকতা পরিহার করছে, তখন এই সব ইসলাম বিদ্ধেষী নাস্তিকদের উম্মাদনা বেড়ে চলছে। এহেন সময়ে ধর্মানুরাগী তরুণ-তরুণীদের ধর্মবিদ্ধেষী বানাতে অশ্লীল কল্পকাহিনী ও প্রকাশ্যে বেহায়াপনার প্রচার প্রসার করার চেষ্টা করছে।

মোহ আর ভালবাসা এক নয়। তরুণ-তরুণীর প্রনয়-আকর্ষণ একটি মোহ। যা শেষ হয়ে যেতে পারে সহজে, তুচ্ছ কোন কারণে-বিবাধে। হঠাত কাউকে ভাল লাগার মোহ ভালবাসা নয়, মোহে যে প্রেম হয় তা ক্ষণস্থায়ী, তাই আজকালের প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেম এই আছে এই নাই, কারণ তাদের প্রেম একটা মোহ, দেখতে দেখতে , বলতে বলতে তা এক সময় কেটে যায়, তাই প্রেমিক-প্রেমিকার অদল-বদল ঘটে। হঠাৎ ভাল লাগা, হয় সুন্দর চেহারায় ও না হয় মহৎ কোন গুণে। কিন্তু প্রেম ঘটে বিশেষত সুন্দর্যে। সুন্দর্যের মোহে পড়ে ভালবাসার কিছু দিন অভিনয় হয়, মোহ ফিকে হয়ে যায়, ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায়।

যারা অভিনয় করে ভালবাসা সমাজে ছড়িয়ে দেয়, তাদের ভালবাসার আকাল পড়েছে সবচেয়ে বেশী। এরা চুমু কম খায়নি, তার পরেও ভালবাসা এদের কাছে কেবল অভিসার!

বিষয়: বিবিধ

১২৬৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

359387
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:২৪
অপি বাইদান লিখেছেন :
359388
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৩১
হতভাগা লিখেছেন : ভালবাসা দিবসে যেই ভালবাসা পালন করা হয় সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী ও প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যকার ভালবাসাটাই ।

এই দিনে স্বামী বা প্রেমিক তার স্ত্রী বা প্রেমিকাকে উপহার দিয়ে থাকে ।

ভালবাসা দিবসকে ঘিরে এই যে উপহার কেনাকাটা এটাই হচ্ছে ভালবাসা দিবসের লুক্কায়িত আসল উদ্দেশ্য । বিশাল বাণিজ্য হয় এই উপহার কেনাকাটাকে ঘিরে । তাই ব্যবসায়ীদের জন্য এই দিনটি খুব পয়মন্ত।

ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার স্বার্থে এই দিনটাকে জিইয়ে রাখবে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File