বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ বিচারে নতুন ইস্যু প্রাণভিক্ষাঃ কাকে বিশ্বাস করবে জনগণ?

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২২ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৩৬:১৪ দুপুর

নানা কারণে বিতর্কিত ও ত্রুটিপূর্ণ এই বিচার প্রক্রিয়ার নতূন ইস্যু রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রাণভিক্ষা। সাকা-মুজাহিদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি সরকার ও মিডিয়ার নাটক। সরকার বলছেন সাকা-মুজাহিদ দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। জনগণ কাকে বিশ্বাস করবেন? এই ইস্যুতেও দুইটা পক্ষ আছে। কেউ সরকারকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবে, আরেক পক্ষ সাকা-মুজাহিদের পরিবারকে। এইখানে যুক্তি খাটবে না। আসলে এটা হক-বাতিলের দন্ধ।

এখন ফাঁসির আনন্দ বা শোক দুইটাই মলিন হয়ে গেছে। আসামী যখন স্বগর্বে হাসিতে হাসিতে মরিতে প্রস্তুত, তখন বিচারপ্রার্থীদের চেহারা কিছুটা মলিন হবে এটাই স্বভাবিক। নাটকের আসল রহস্য হয়ত এখানেই লুক্কায়িত।

যারা ফাঁসিতে ঝুলছে তারা বলছে তারা নিরাপরাধ, তারা জুড়িসিয়াল কিলিং এর শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ(আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী এজেন্ডা) থেকে করা বিতর্কিত এই বিচার দেশের জনগণের এক বৃহৎ অংশের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। এই বিচারকার্য পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংঘটন বিচারকার্যের বিভিন্ন ত্রুটির কথা বললেও সরকার এর যোগ্য উত্তর দিতে পারছে না। কেন এই ট্রাইবুনালকে আন্তর্জাতিক আখ্যা দেওয়া হলেও, পরে ডোমেস্টিক বলে আন্তর্জাতিক আইনজীবি নিয়োগে বাধা দেওয়া হল কেন? আন্তর্জাতিক আইনজীবি থাকলে ন্যায়বিচার বিগ্ন হয় কীভাবে? কেন স্কাইপি কেলেংকারী মাধ্যমে বিচার ব্যাবস্থার ইতিহাসে কলঙ্কজনক নাটক মঞ্চায়ন করা হল? বিবাদীর সাক্ষীকে কেন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গুম করা হল? প্রত্যাশিত রায় না হওয়ায় বিচারের মাঝখানে আইনে সংশোধন করা হল কেন? আসামী পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা কেন দুই একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ? কেন বিচারের আগে অভিযোক্তকে অপরাধীকে সাব্যস্থ করছে প্রচার মাধ্যম? বিচারকের নিরেপক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার পরও বিচারকার্যে নিরেপক্ষ বিচারক নিয়োগ দেওয়া হল না কেন? কেন স্বাধীনতার সময় বিরোধিতাকারী চার-পাঁচটা দল থাকলেও কেবল জামায়াতের অতি পরিচিত শীর্ষ নেতাদের বিচার হচ্ছে? কেন মাস্টার মাইন্ড খ্যাত গোলাম আজমের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযুক্ত না করে বিচারের মাঝখানে অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার করা হল? কেন চিহ্নিত ১৫৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হচ্ছে না? সরকারের ভিতরে লুকিয়ে থাকা রাজাকারের বিচার হচ্ছে না কেন? রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার বলা হচ্ছে কেন? সবাইকে কেন আল-বদর প্রধান বা রাজাকার প্রধান বলা হচ্ছে?

এই বিচার বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে নতূন অধ্যায় যোগ করেছে, যখন এই বিচারের কাহিনী শুধু ইতিহাস হয়ে যাবে প্রত্যক্ষ পক্ষে বিপক্ষে স্থৃতিচারণ করার কেউ থাকবে না তখন এই বিচার নিয়ে ইতিহাসের গবেষকরা উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবেন।

জামায়ত ইসলামীও এই সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিব্যি রাজনীতি করছেন ও করতে পারবেন। যার উদাহারণ আজই বিদ্যামান। এই ত্রুটিপূর্ণ বিচারকার্য ও জামায়াত-শিবিরকে সরকার কর্তৃক গুম, হত্যা ও নীপিড়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রচার প্রসারও হয়েছে। সাম্প্রতিক সরকারের ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সরকারের ইতিহাসের নির্মম অভিযান ও হত্যাকান্ড জামায়ত ইসলামীর সাথে মূলধারার অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিএনপি জামায়াত ত্যাগ করলে ভবিষ্যতে জামায়াত প্রভাবিত বড় ধরণের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তির সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে।

জামায়াত বিএনপি যা সুবিধা নেওয়ার নেওয়া হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে বিএনপির সাথে জোড়বদ্ধ থাকা না থাকা জামায়াতের তেমন লাভ-ক্ষতি নেই। কারণ জামায়াতের একটা প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলে তাদের নেতাদের উদ্ধার করতে পারবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় থেকে যাওয়া, সেই আশা গুড়ে বালি হয়েছে। ইতোমধ্য তাদের দুইজন মেধাবী নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। গত রাত জামায়াতের সেকেন্ড ইন কমান্ড আলী আহসান মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়।

বিষয়: বিবিধ

৯৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350854
২২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪০
ফুটন্ত গোলাপ লিখেছেন : একদিন নিশ্চয় এই অবিচার দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সে পর্যন্ত ঈমান, ধৈর্য আর সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
350855
২২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪১
নাবীল লিখেছেন : বিশ্বাস আওয়ামীলীগ কে করা যায়,কারণ আওয়ামীরা মানে আওয়ামী সরকার মিথ্যা বাদিতে উস্তাদ।
মিথ্যা না হলে প্রান ভিক্ষা পেপারে কি লেখেছে সাংবাদিক দের দেখাও।
আসল কথা হচ্ছে আওয়ামীরা হচ্ছে বামপন্হী ওরা মিথ্যা বলবেই।
যার ঈনান তারাই আওয়ামী লীগ।
350857
২২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৪
হতভাগা লিখেছেন :


নিহত বা নিহতদের ওয়ারিশদের ক্ষমা না পেলে পরকালেও উনাদের জন্য কঠিন সময়ই অপেক্ষা করতেছে
350866
২২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৩
বিবেক নাই লিখেছেন : যে অভিযোগে অভিযুক্ত করে এদের ফাঁসি দেওয়া হল এর সাথে এদের সম্পর্ক না থাকলে এদের মৃত্যু এদের জন্য অবশ্যই মঙ্গল বয়ে আনবে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File