বিচারিক সাজা মৃত্যুদন্ড একটি বিচারবিভাগীয় হত্যাকান্ডে রুপ নিচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৯:৩১ বিকাল
আদালত ও বিচার শব্দদ্বয়ের মহিমা ও মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকলেও শব্দদ্বয়ের অপ-ব্যবহার রোধের কোন কার্যকর ব্যাবস্থা নেই। বিচার বিভাগ পৃথক ও স্বাধীন ঘোষণা করা হলেও , বিচার কাজ ও বিচারক নিয়োগে ক্ষমতাসীন সরকারের কায়েশের প্রতিফলন কখনো বন্ধ হয়নি। এর প্রধান দুইটি কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিচারক নিয়োগ বা পদায়ন ও বিচারকদের বিশেষ আদর্শ ও রাজনৈতিক দলের প্রতি মোহ।
মৃত্যুদন্ডের মত জীবনমরণের বিচারিক সিদ্ধান্তে বিচারকদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কোন বিচারক ভিন্ন মত দিলেও তার কোন গুরুত্ব থাকে না। কিন্তু মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রত্যেক বিচারকের মতের গুরুত্ব থাকা দরকার।কারণ বিভক্ত রায়ে আসামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।
ইতিহাস যেমন কেবল বিজিতরা লেখেন, তেমনি পরাজিতরা বনে যান ভয়ংকর অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছাড়নো হয় অবাদে। আদালতও বিজিতদের পক্ষে ব্যবরিত হয়। বিচারকরাও আবেকপ্রবণ হয়, আবার ক্ষমতাবানদের দ্বারা প্রভাবিত হন।আদালতকে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকলে, যে বিচারে আদর্শ ও রাজনৈতিক ফায়দা সংশ্লিষ্ট থাকে সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়া দুষ্কর।
মৃত্যুদন্ড ও ঠান্ডা মাথার খুন দেশে-বিদেশে সমার্থক শব্দে পরিনত হয়েছে। ক্ষমতাবানরা সবসময় আদালতকে ব্যাবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও প্রতিশোধস্পৃহা চরিত্রার্থ করে থাকে। এই কথা সকল সভ্য দেশের জন্যে প্রযোজ্য। ইজরাইলী আদালত একই অপরাধের জন্যে একজন ফিলিস্তিন ও একজন ইজরাইলির উপর সমান সাজা দেন না,মার্কিন ও শিয়া স্বার্থের জন্যে সাদ্দাম হোসেনকে পরিকল্পিত ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে যদি হত্যা না করে গ্রেপ্তার করত, তাকেও বিচারের নামে নাটকের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত।আজ মিশরের আদালতে মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে পাইকারী হারে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে দায়মুক্তি দিয়েছে আদালত। এটাই ক্ষমতাবান ও বিজিতদের নীতি। ক্ষমতাচ্যুত মুসলিম ব্রাদারহুড পরাজিত শক্তি, তাই তারা রাষ্ট্রের চোখে সন্ত্রাসী।
অপরাধী ও সন্ত্রাসী সাব্যস্ত করার মুলনীতি সবার কাছে এক নয়। এর সাথে রাজনৈতিক, আদর্শিক ও ব্যক্তি স্বার্থ জডিয়ে যায়। তাই কিছু বিচারের রায় কারো কাছে ন্যায়বিচার হলেও অন্যের কাছে ঘোরতর বিতর্কিত ও অন্যায় হিসাবে বিবেচিত। পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করে না আদালতের মাধ্যমে অন্যায় সাজা দেওয়া হয়
না ও দেওয়া হয় না।
আজ আমাদের দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত দেশীয় শক্তির বিচার হচ্ছে। গণহারে আদালত মৃত্যুদন্ড দিচ্ছে। সরকার তা মঞ্চায়ন করছে বড় ধরণের মহড়া দিয়ে। আদালতের বাহিরে মিটিং-মিছিলের মাধ্যমে বিচারকে প্রভাবিত করা হয়েছে, বিচারের আগে বিচারের রায় রাজপথ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের রায়ে তারই প্রতিফলন ঘটছে। সুস্পষ্ট হত্যার অভিযোগ প্রমানিত হওয়া ছাড়া মৃত্যুদন্ডের মত কঠিন সাজা দেয়া হচ্ছে। ৪৩ বছরের আগের ঘটা হত্যাকান্ডে কেবল প্ররোচিত, প্রভাবিত ও উৎসাহিত করার অভিযোগে তখকার সময়ের একজন ছাত্রকে(বর্তমানে একটি প্রভাবশালী সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা) মৃত্যুদন্ড দেওয়া রায় আবেক, রাজনৈতিক ও আদর্শিত প্রভাবমুক্ত বলা কঠিন।
হত্যাকান্ডকে গ্রাউন্ড ধরে বিচার না করে বিচার হচ্ছে ব্যক্তি কেন্দ্রিক। বুদ্ধিজীবি হত্যার সাথে জড়িত সকল ব্যক্তির বিচার এক সাথে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের সাথে এক এক জনকে নানা ভাবে সম্পৃক্ত করে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধের সময় ঘটা সকল হত্যাকান্ডের মধ্যে বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের বিচারের সাথে বাঙ্গালী জাতির বেশী আবেক জড়িত। বিচারক ও সরকার এই আবেককে বেশী ব্যবহার করছে।
বিষয়: বিবিধ
১০১৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন