কামারুজ্জানানের ফাঁসি কার্যকরঃ আওয়ামী লীগ কোন পথে চলছে?
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ১৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:৩৪:১৭ দুপুর
আক্ষরিকভাবে একে বলা চলে কামারুজ্জামান ও তাঁর দলের পরাজয়, একে বলা যেতে পারে ইসালামী মৌলবাদেরও পরাজয়ের পূর্ব বার্তা। এটি সতর্ক বার্তা নিয়ে যাচ্ছে যারা ইসলাম নিয়ে উচ্চবাক্য এবং হোংকার দিচ্ছে এমন সব ইসলামপন্থী সংগঠনের কাছে,ব্যক্তির কাছে।তবে এই ক্ষতি বা পরাজয় এর স্থায়ীভাবে পেয়ে বসবে কিনা তা নির্ভর করছে আগামী বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর। সিটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত যদি জনমত পায়, তবে আওয়ামী লীগের কাছে একটি বার্তা যাবে। আগাম নির্বাচনের বিএনপি-জামায়াতের যোক্তিক দাবিতে নেতা কর্মীরা উৎসাহ পাবে।
আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচন দিয়ে তাদের একবছরের জনসমর্থন যাচায় করতে চায়। কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর জনমনে কেমন প্রভাব ফেলে তারও একটা যাচায় সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে জানা যাবে।সিটি নির্বাচনের ফলাফল জেনে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।
দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিহাদী গোষ্ঠীগুলোর এমনিতে কোন ফিউচার নেই। চাপাতি দিয়ে মাঝে মধ্যে নাস্তিকদের শিরচ্চেদ করতে পারলেও এতে ইসলামের কতটুকু লাভ হবে এটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী হতে পারে।আর এতে লাভের ভাগিদার বিভিন্ন জিহাদীর অন্তরজ্বালা মিটলেও, ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে মুলধারার ইসলামী আন্দোলনের। এতে ক্ষতির শিকার হতে পারে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ইসলামী এনজিওর ও কওমী মাদরাসা। সরকার জংগিবাদের ধুঁয়া তুলে এসব সংগঠন, ইসলামী এনজিওর নিষিদ্ধ করে দিতে পারে অতি সহজে। নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে কওমী মাদরাসাগুলোর।
অতীতে দেশ ও বিদেশের চাপে আওয়ামী লীগ তাঁর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও এখন তারা দেশের সকল স্তরের প্রশাসন ও মিড়িয়াকে নিজেদের কব্জায় ভালভাবে আটকিয়ে ফেলেছে। যে আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালের সাইদীর রায় ও হেফাজতের সমাবেশে নারকীয় হত্যাকান্ড ও নির্যাতন করে পরিস্থিতি উৎরাতে পেরেছে তারা আজকে ম্রিয়মান আন্দোলনকে কোন তোয়াক্কা করবে না এটাই স্বাভাবিক। এখন সরকার শুধু গণজমায়তকে ভয় পায়।তাই তারা যে কোন মূল্যে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।
সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করে এমন ইসলাম বামঘেষা আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না, মসজিদে আবদ্ধ ইসলামই তারা চায় যা আধুনিক সাংস্কৃতিক চর্চায় এমনিতে দূর্বল বা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ এতে করে হতে পারবে ধর্মনিরেপক্ষতার আড়ালে ধর্মহীন রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফেরি করে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের নামে ধর্মহীন রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের দরকার আগামী সংসদ নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয়লাভ।
এই সরকারের বাকি মেয়াদে, আওয়ামী লীগ চাইবে জাতির বিভিন্ন দূর্বল মুহুর্তকে ব্যবহার করে অভিযুক্ত বাকী জামায়ত নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করতে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ বা দূর্বল করে আন্ডার গ্রাউন্ডে পাঠানো গেলে, আওয়ামী লীগের পরবর্তী টার্গেটে থাকবে কওমী মাদরাসা। সরকার ও বামপন্থীরা বলছে নাস্তিক ব্লগার অভিজিৎ ও ওয়াশিকুরের হত্যার মূলে রয়েছে কওমী ঘেষা জিহাদীরা। তারা বলছে কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গি তৈরীর কারখানা। দাবি তুলছে এসব মাদরাসা বন্ধের। কিছুদিন আগেও সরকার চেয়েছিল কওমী মাদারাসাগুলো সরকারী নিয়ন্ত্রণ এনে পাঠ্যসুচিতে আধুনিক বিষয়াদি যুক্ত করতে। এতে করে তারা পারবে আলিয়া মাদরাসার মত কওমী মাদরাসাগুলোতে সরকার পছন্দনীয় শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে । কালক্রমে কওমী মাদরাসাগুলো স্বকীয়তা হারিয়ে বর্তমান আলিয়া মাদরাসার মত ওলামা লীগ বা ওলামা দলের মত এক দল মুনাফেকশ্রেণীর সেকুলার আলেম তৈরি হবে। যারা মুলত সরকারের ইচ্ছামত ইসলামের ফতোয়া দিবে।তাদের মূল কাজ হবে সরকারী সুবিধার বিনিময়ে ইসলাম ও ইসলামী দলের মধ্যে বিভক্তি জিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগ কোন প্রকার সংলাপ বা সমঝোতায় আগাম নির্বাচন দিবে না। নির্বাচন আদায় করতে হলে ঢাকাকে পুরোপুরি অচল করতে হবে, সচিবালয় ও সংসদ ঘিরে ফেলতে হবে, ঢাকায় দশ লাক্ষ জনমাগম করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৯২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন