গাজার জন্য কান্না তো মায়াকান্না!
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ২৭ জুলাই, ২০১৪, ১১:২২:৫২ সকাল
প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ আপনি আমাদের জন্য গাজা উপত্যকায় ইজরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদ করা সহজ ও নির্ভয় করে দিয়েছেন ।আমাদের দেশে যখন নির্বিচারে নিরীহ জামায়াত শিবির বিএনপি হেফাজত কর্মী ও নিরীহ সাধারণ মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল তখন আপনি প্রতিবাদ করেননি তাই এই দেশের হাজারো অসহায় মায়ের কলিজার টুকরা সন্তানহারানো আত্তচিৎকারের পক্ষে কথা বলার দুঃসাহস এই দেশের জনগণের হয়নি।জামায়াত শিবির ভেবে নিরীহ মানুষের হয়রানী, কারাভোগ ,আপনার র্যাব পুলিশ বাহিনীর চাঁদাবাজি, নিরীহ মানুষের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস দিয়ে নিঃস্ব করে দেওয়ার করূণ কাহিণী আপনাকে ব্যথিত করেনি। এই দেশের মানুষ আপনার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি। আপনি অভয় দেন দেখবেন আপনার কাছে অসহায় মানুষ কত অবিযোগ নিয়ে আসে। কত মানুষ প্রতিবাদ করে ।
বড় বড় বুদ্ধিজীবিরা মূখে থালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন ও এখনো লাগানো আছে।আপনার দিকে তাঁদের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাঁরা আপনাকে কেবলা বানিয়ে নিয়েছেন । তাঁদের কাজ আপনার কাজের সত্যায়ন করা আর তাঁরা তা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। মাশোহারা হিসাবে পাচ্ছেন মন্ত্রীত্ব , পদোন্নতি, উপেদেষ্টা হোয়ার সুযোগ , দুর্নীতি করার নির্ভয় সুযোগ।আরো পাচ্ছেন বুদ্ধিজিবী , দেশপ্রেমিক চার্টিপিকেট ইত্যাদি ।
মজলুম মানুষের কন্ঠস্বর নয়াদিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দিয়েছেন টুকনো অবযোগে। আমারদেশ পত্রিকা বন্ধ। দেশ ও মজুলুম মানুষের পক্ষে কথা বলার পথকে রুদ্ধ করেছেন। মজলুম সাহসী সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি রেখেছেন। আপনার বিচারকগণ রায় বা জামিন দেওয়ার আগে আপনার ও আপনার দলের নেতাকর্মীদের দিকে তাকিয়ে থাকেন আপনার ও আপনার দলের সিদ্ধান্তের জন্য । কার্যত আপনাই এখন এই দেশের বিচারক । আপনার দলের লোকেরা বেকসুর খালাস পান অপরাধ যায় হউক। তাদের সাত খুন মাপ কারণ তারা আপনার সোনার ছেলে! আপনার দলের কর্মীদের বিপক্ষে রায় দেওয়ার সাহস আছে কোন বিচারকের ? থাকলে আপনার মন্ত্রীরা নিশ্চয় তার চাকরী খাবেন! আপনার বিচারালয়ে ফটকা ফুটানোর অবিযোগের মামলার জামিন নিতে হাইকোর্ট দেখতে হয়। আহ!কি চমৎকার স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা!
আপনার চৌকস তদন্ত কর্মকর্তারা চল্লিশ বছর আগের ঘটনার প্রমাণ পাচ্ছেন। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কর্যকর করছেন কিন্তু তারা আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের কোন সুরাহা করতে পারেনা! শেয়ারবাজার কেলেংকারীর মূল হোতাদের খুঁজে পায় না! কালো টাকা ধরা পড়লেও কালো বিড়ালের ধরা পড়ে না!বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পান না! শ্রমিক নেতা আমিনুলকে খুঁজে পান না! কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধবী ছাত্রকে খুঁজে পান না! খুঁজে পান না বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার পর! আপনার পুলিশ র্যাব বাহিণী কেবল খুঁজে পায় নিরীহ জামায়াত শিবির বিএনপি হেফাজত কর্মীদের!
যারা নিজ দেশে নিরীহ মুসলমান হত্যা করে বা হত্যার প্রতিবাদ করে না তাদের মুখে গাজার নিরীহ মুসলমানের জন্য কান্না কেবল মায়াকান্না । এই কান্না রাজনৈতিক দলের জন্য রাজনৈতিক বৈই আর কিছু নয়। আর বাকিরা আমেরিকার স্টাইলে মানবতার জন্য কাঁদছে। ডিজিটাল স্টাইলে # ট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আমি তাদের প্রতিবাদকে খাট করছি না।কিন্তু তাদের প্রতিবাদ দুর্বল ও মায়াকান্নার মত। আপনাদের ভাগ্য ভাল শেখ মুজিব ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ছিলেন, আরো সুভাগ্য যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পিতা অনুসরণ করে মন্ত্রীসভার মাধ্যমে ইজরাইলি হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ,আরো সুভাগ্য যে বাংলাদেশের সাথে ইজরাইলের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তা না হলে ভারতের মত ইজরাইলের সাথে আঁতাত করে মুসলিম স্বৈরশাসক ও রাজশাসকদের মত নিরব থেকে ইজরাইলকে সমর্থন করতেন। হামাসকে তালেবানী ট্যাগ নিয়ে জঙ্গি বানিয়ে বলত ইজরাইলের আত্তরক্ষার অধিকারের কথা রয়েছে।
ক্ষমতা হারনোর ভয়ে মুসলিম মোড়ল সৌদি জালিম বাদশা আব্দুল্লাহসহ উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশের রাজারা ও রক্ত পিপাসু মিশরের সিসি হামাসকে সন্ত্রসী গোষ্ঠী মনে করে। শেখ হাসিনাও সেই পথ অনুসরণ করত। আর আপনাদের প্রতিবাদকে জঙ্গি হামাসের পক্ষে বলে চালিয়ে দিত। আপনারা প্রতিবাদ করতে পারতেন না। হেফাজত বিবৃতি হিত না ।তার প্রমান হেফাজত নেতারা শাপলা চত্বরে তাঁদের কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ করলেও বিএনপি জামায়ত নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ তাঁরা করেনি।
সাবেক বনমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ মত কিছু পন্ডিতমশায় ও ইহুদীবাদী কয়েকটি পত্রিকা বাদ দিলে বাংলাদেশের সকল মানুষ ও পত্রিকা অসহায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। দেশের বাম ডান বুদ্ধিজীবিরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বলছেন গলা ফাটিয়ে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক শত্রু জামায়ত শিবিরের গাজায় ইহুদীবাদী ইজরাইলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আয়োজিত মিটিং মিশিলে আওয়ামী পুলিশ নাশকতার গন্ধ পাচ্ছেন না।ইসলামপন্থি হামাসকে পশ্চিমা স্টাইলে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না।
হামাসের সাথে জামায়ত ইসলামীর অদর্শিক অভিন্নতা ও সখ্যতার কারণে গাজায় ইজরাইলি হত্যাকান্ডে তাদেরই অন্তরে রক্তক্ষরণ বেশী হচ্ছে। গাজার প্রতিনিয়ত খবর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টুইটারে ছড়িয়ে দিচ্ছে জামায়াত ও ইসলামপন্থি অন্যান্য অনলাইন এক্টিভিস্ট ও সংবাদ কর্মীরা।
নিজ দেশে জঙ্গি দমনের নামে আওয়ামী লীগ মুসলিম হত্যা করছে। তাদের মুখে গাজার জন্য কন্না স্রেপ রাজনৈতিক। সংসদের গৃহপালিত বিরোধদলীয় নেতা রওসন এরশাদ যখন দেখেন দেশে সরকার ও বিরোধী সকলে গাজার পক্ষে বলছেন আট নয়দিন পর তিনি হতচকিত হয়ে ইজরাইলি হামলার প্রতিবাদ জানায়। রাজনীতিভিত্তিক ইসলামী দল জামায়াত ইসলামী কর্মী সমর্থকদের মানবাধিকার আছে কিনা তা তো সরকারী দল স্বীকার করে না। একটা দলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাদের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করবে এটাই স্বাভাবিক। তা যদি না হত আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করার নৈতিক অধিকার পেত না । মুজিব হত্যার বিচার আওয়ামী লীগ সরকার এই জন্য করেছেন কারণ তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। তারা তাঁকে ভালবাসে। জিয়া হত্যার বিচার তো আওয়ামী লীগ করছে না। জিয়া হত্যার বিচার করতে বিএনপিকে লাগবে কারণ সে তো বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগ নেতা না ।
আমাদের দেশে সবকিছু চলে রাজনৈতিক বিবেচনায় । নীতি নৈতিকতার বালাই নেই।রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভে ভিন্নমত দমনে বিরোধী নেতা কর্মীদের হত্যা গুম করা আজ হালাল হয়ে গেছে। এই দেশে ঘোষনা হয় শিবির দেখলে গুলি কর।নিরস্ত্র শিবিরকে গুলি করার নির্দেশ সংবিধানের কোন ধারায় আছে? নিজ দলীয় ক্যাডারের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া কি সংবিধান লংঘন নয় ? দেশের ভার যাঁদের হাতে নেয়স্ত তাঁরা যখন এমন ঘোষনা দেয় তখন হতাশ ও দুর্ভাগ্যবান হওয়া ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত মিয়ানমার যখন সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করে তখন সরকার দলীয়-রাজনৈতিক সুযোগ ও সমর্থন হারানোর ভয়ে নিরব থেকে বরং ভিন্নদেশীর মত আচরণ করে।
আসলে আওয়ামী লীগের সাথে হানাদার ইজরাইলের মিল কম নেই । অমিল হল আওয়ামী লীগ নিজ দেশের সমধর্মী নিরীহ মুসলিম নাগরিকের উপর অত্যাচার নির্যাতন হত্যাযজ্ঞ চালায় আর বর্নবাদী ইসরাইল চালায় ভিন্নদেশী ভিন্নধর্মী নিরীহ ফিলিস্তিনের উপর ।আওয়ামী লীগ চায় বিরোধীশক্তিকে নির্মূল করতে ইজরাইল চায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে।
চরম হতশা ও দূর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, মুসলিম প্রধান দেশে আজ মুসলমানরাই নির্যাতিত। মুসলিমদের এই কেমন নিয়তি ? নিজ দেশেও মুসলমানদের মানবাধিকার নেই। এই মানুষ না জন্তু জানুয়ার! হত্যা করে রক্ত গোশত খেতে হবে!সংখ্যালঘুদের জন্য কি কান্না ? তাদের গায়ে একটা সুই ফুঁটলেও দেশে প্রতিবাদের আগুন ধরে যায়। মুসলমানদের যেন এই দেশে নাগরিকত্ব নেই। কথায় কথায় বিরোধীদের পাকিস্তান চলে যাওয়ার উপদেশ দেন। নাগরিক কেবল তারাই যারা আওয়ামী লীগ করে, আল্লহকে অস্বীকার করে ইসলামকে জঙ্গিবাদ ও ইসলামী দলকে জঙ্গি বলে প্রচার করে। সবসময় আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলতে হবে , বঙ্গবন্দুর পক্ষে , শেখ হাসিনার পক্ষে। বিপক্ষে বললে স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি ট্যাগ লাগানো হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললে দেশপ্রেমিক ট্যাগ পাওয়া যায়। সাত খুন মাপ হয়ে যায়।মন্ত্রীত্ব পাওয়া যায় । প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। একালের বঙ্গবন্ধুর পিঠের চামড়া নিয়ে রাজনীতি করা মতিয়া ইনুরা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক করে দিতে পারে।
বিষয়: রাজনীতি
১০৯৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এর পর আর কোনো কথা হতে পারে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন