প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ পরীক্ষা শেষে অনশন কেন?

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ৩১ মে, ২০১৪, ১২:৪২:১৪ রাত



এই বছরের মত প্রশ্নপত্রের ফাঁসের খবর কোন দিন শুনিনি । তবে ২০০০ সালের আগে দেখেছি অনেকে পরীক্ষার হলে বই কেটে নিয়ে যেতে , মেয়েরা নকলে উস্তাদ বলা যায়। মেয়ে বলে তাদের এই সুবিধা । চাইলেও সহজে চেক করা যেত না । ভালভাবে চেক করতে হলে লাগত মহিলা ,তাও আবার পরীক্ষার হলে সম্ভব না ।অবশ্যই তখন নকল করা অপেন সিক্রেট ছিল। আর এখন প্রশ্নপত্র অপেন সিক্রেট!

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বলিষ্ট ভূমিকায় ধীরে ধীরে নকল শুন্যের কোটায় নিয়ে আসে । এটা জোট সরকারের অন্যতম প্রধান সফলতা ছিল । এই ধারা এখনো বহাল থাকলেও এখন শুরু হয়েছে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিনব ফাঁদ যা অব্যাহত থাকলে শিক্ষাগত মান তলানিতে পৌছতে সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইউরোপ আমেরিকার মত দেশে অপেন বুক পরীক্ষা হয়, আমাদের দেশেও কোন কোন শিক্ষক মাঝে মধ্যে অপেন বুক পরীক্ষা নেন । আমরাও মাঝে মধ্যে উৎসাহ নিয়ে দিই ।কোথাও অপেন প্রশ্ন পরীক্ষা হয় না । এসাইনমেন্ট আলাদা কিছু । এসাইনমেন্ট দিয়ে কিছু শেখানো হয় । পরীক্ষা দিয়ে কাউকে যাচাই করা হয়।

আমাদের দেশে পর্দার অন্তরালে অপেন প্রশ্নে শিক্ষাজীবনের অতি উৎসাহব্যঞ্জক এস এস সি ও এইস এস সি পরীক্ষা শেষ হল । কোন পরীক্ষার্থী দেখলে সবাই্ প্রশ্ন পেয়েছ তো? বেশীর ভাগ সময় হ্যাঁ সূচক উত্তর আসে । ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রশ্ন চলে গেছে ঘরে ঘরে । এস এস সি পরীক্ষার ফলাফলও বের হয়েছে , পাসের হার বেড়েছে ভাল , কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে অবাক হতবাক করার মত । জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯১ হাজার ২২৬ জন। এভাবে জিপিএ-৫ বাড়তে থাকলে হয়ত এক সময় আমরা শুনতে পাব বাংলাদেশের সব ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে যেখানে আমরা শুনি শতভাগ পাস করেছে অমুক কলেজ তমুক মাদ্রাসা। কারণ যে হারে জিপিএ-৫ বাড়ছে সে হারে কিন্তু পরীক্ষার্থী বাড়ছে না।

এই ফলাফল যদি যোগ্যতা দিয়ে প্রকৃত যাচায়ের মধ্য দিয়ে হত তাহলে বড় সুসংবাদ বলতাম , কিন্তু তা হয়েছে “ নম্বর কি তোমার বাপের বাড়ির দিবা না” কর্তাব্যক্তির এই বাক্যের ঠেলায়। নম্বর বাড়িয়ে দিক সমস্যা নাই , তবে যা প্রাপ্য তা দেওয়া হউক । কিপটামি করে ১০ এর মধ্যে ৮ ধরে পরীক্ষার খাতা দেখা মঘের মুল্লুকের মত। কিন্তু লেখা থাকলেই নম্বর দেওয়ার রীতি কেন?

এই জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের উপর দেশের শিক্ষাবিদরা আস্থাবান নয় । সবাই শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ পরিনতির আশংকা করছেন । তাই দেশের স্বনামধন্য লেখক , শিক্ষাবিদরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন , অনশন শুরু করেছেন।তবে অনশন আর জোরালো প্রতিবাদ আগে থেকে করলে ভাল হত । দেশের সর্বোচ্চ আদালতে রিট করা যেত ।একটা কার্যকর কোন ফল আমরা পেতাম । কিন্তু ষড়যন্ত্রটি অংকুরে বিনষ্ট করা গেল না । এস এস সি তে প্রশ্ন ফাঁসের সময়ে জোরালো প্রতিবাদ করলে এইস এস সি তে প্রশ্নপত্র পাস বন্ধ করা যেত। এখনতো ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ হাচিল হয়ে গেছে । এখন তপ্ত গরমে মাথার চান্দি পুড়ালেও সরকারের টনক নড়বে না। বেশী করলে আশ্বাস দিয়ে বোকা বানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। বিএনপি জামায়াত শত শত হরতাল অবরোধ দিয়েও সরকারের টনক নাড়তে পারেনি, বিরোধীদের দমাতে সরকার হত্যা ,গুম করছেন । ফ্যাসিবাদী কায়দায় প্রশাসনকে দলীয়করণ করে প্রশাসনে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি শুরু হয়ে গেছে। না’গঞ্জের সাত খুন আর একরামকে পুড়িয়ে মারা মানবতাকে হার মানিয়েছে।

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এখনো স্বীকারও করেননি প্রঁশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ । তিনি করছেন “প্রঁশ্নপত্র ফাঁসের গোজবের” পাল্টা অভিযোগ। সবই জানেন শিক্ষামন্ত্রী , তিনি তো আর পাগলও না মায়ের দুধও খান না । আসল কথা হল তার টাকু মাথায় রাজনীতির কু চাপ পড়েছে । তাই সত্য জেনেও গোপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী এমন স্পর্শকারত জাতীয় সমস্যাটি সামাধানের কোন উদ্যোগ নিলেন না । নিশ্চয় এর মধ্যেও রাজনৈতিক ফায়দা আছে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে যেভাবে দেশে রাজনীতি চলছে তাতে শিক্ষাবিদরা প্রতিনিয়ত চমকে উঠছেন। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের কারণে নিম্মস্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় দস নামিয়ে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের পরিশ্রম করার সামর্থ্য ও মনোভাব এবং মেধাকে অংকুরে বিনষ্ট করা হচ্ছে।

বিষয়: বিবিধ

১১০৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

228521
৩১ মে ২০১৪ রাত ১২:৪৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : সবই জানেন শিক্ষামন্ত্রী , তিনি তো আর পাগলও না মায়ের দুধও খান না । আসল কথা হল তার টাকু মাথায় রাজনীতির কু চাপ পড়েছে । তাই সত্য জেনেও গোপন করছেন।শত ভাগ সত্যি কথা। অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File