মহান মে দিবস ও আমাদের দেশের শ্রমিকের অধিকার হরণ

লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল রাহাত ০১ মে, ২০১৪, ০৩:৫৯:১৭ দুপুর

আজ মহান মে দিবস। বছর ঘুরে পহেলা মে মনে করিয়ে দেয় ১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে শ্রমিকের আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক স্মৃতি । এই দিনে অতীতের শ্রমিকদের শোষণের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে বর্হি:প্রকাশ ঘটে। প্রতিবাদী শ্রমিকদের দিক থেকে বোমার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ সদস্য মারা যান। শ্রমিকদের নিক্ষিপ্ত বোমা বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু খবর পুলিশের উপরস্থ অফিসারদের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী হিংস্রাত্মকভাবে নির্বিচারে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১১ জন নিরীহ প্রতিবাদী শ্রমিক।

শ্রমিকদের দাবি দাওয়া না মেনে উল্টো শ্রমিকনেতা আগস্ট স্পীজসহ মোট আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অভিযুক্তদের প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটজনের মধ্যে ছয়জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয় । লুইস লিং নামের এক শ্রমিক ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগের রাতে কারাগারের ভেতর আত্মহত্যা করেন। আরেকজন শ্রমিককে পনের বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়্ ।

ফাঁসির মঞ্চে শোষিত শ্রমিকদের নেতা আগস্ট স্পীজ অকুন্ঠচিত্তে বলে উঠলেন, “আজ আমাদের এই নি:শব্দতা তোমাদের আওয়াজ আপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে”।

বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে ১লা মে জাতীয় ছুটির দিন। অনেক দেশে এটি বেসরকারি ভাবে পালিত হয় । এই দিনটিতে শ্রমজীবি মানুষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে মিছিল-মিটিং ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে । । উল্লেখ্য যে, ঐতিহাসিক এই দিনটি আমেরিকা ও কানাডাতে সরকারীভাবে পালিত হয় না । আমেরিকা ও কানাডা অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালন করে।

১৮৮৬ সালের আগে শ্রমিকদের অলিখিত নিয়মে সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত খাটিয়ে নেওয়া হত। মুনাফালোভী মালিকেরা শ্রমিকদের প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৮ ঘন্টা খাটিয়ে নিত তারপরও তাদের ন্যায্য মজুতি দিত না ।

শ্রমিকদের শোষণ ও নিপীড়নের ইতিহাস বহুকালের। যুগে যুগে দেশে দেশে খেটে খাওয়া শ্রমিক মানুষদের উপর চলেছে শোষণ, অত্যাচার ও নিপীড়ন। মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই মেহনতি মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সাথে সাথে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে ।

আমাদের দেশে শ্রমিকের অধিকার হরণঃ

ইসলাম শ্রমিকদের মানবাধিকার ও শ্রমাধিকার দিলেও মুসলিম দেশেই শ্রম ও শ্রমিকদের খাট করে দেখা হয় বেশী। মুসলিম রাজা বাদশাহরা এখনো শ্রমিকদের দাসই মনে করে।তাই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে হর হামেশায় জুলুম-নির্যাতন ও বঞ্চনার খবর পাওয়া যায়। সেখানে মাসের পর মাস খাটিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয় না এমন ঘটনাও ঘটে। বিনা কারণে মাসের পর মাস বেতন বন্ধ রাখা হয় ।ঠুকনো অবিযোগে শ্রমিকদের নিজ্ব দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।তবে এর জন্য আদম ব্যাপারি প্রতারনা ও প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের ভূমিকা দায়ী। সরকার শ্রমিক অধিকারের বুলি আওড়ালেও কার্যকর কনো পদক্ষেপ নেয় না।

মধ্যপ্রাচ্যের মুনাফালোভী মালিকশ্রেণী কোনভাবেই আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার আইন মেনে চলছে না। অথচ জাতিসংঘ সংবিধানে শ্রম অধিকার খুব স্পষ্টভাবেই বর্ণিত আছে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এসব আইনি নীতিমালা মেনে চলারই কথা।

বাহিরের কথা না হয় থাকল , আমাদের দেশে শ্রমিকরা নিজ দেশে পরজীবি।শ্রমিকদের মানবাধিকার বলতে কিছু নেই । গত বছর ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের তাজরিন ফ্যাশনের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মানাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙ্গে নিহত হয়েছে আরো ১৪ জন শ্রমজীবী মানুষ। অনেকে আহত ও পঙ্গু হয়েছেন । ঢাকার বউ বাজার বস্তিতে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন আরো ১৫জন শ্রমিক।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে শ্রম ইতিহাসে ঘটে যাওয়া রানা প্লাজার ভয়াবহ ভবন ধসে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৫ জন গার্মেন্ট শ্রমিক। আহত হয়েছিলেন কয়েক হাজার । এখনো বহু স্বজন তাদের প্রিয়জনের হদিছ পাননি। সরকার ঘটনার দামাচাপা দিতে সাজালেন রেশমা নাটক । বানালেন মৃত্যুঞ্জয়ী কন্যা , দিলেন রাজধানীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে চাকরী। রেশমার জীবনের সংজ্ঞা পাল্টে গেল কিন্তু বাকী আহত নিহত শ্রমিকরা পড়ে আছে সীমাহীন কষ্টে, তাদের দেখার কেউ নেই । তাদের ত্রাণের শত কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেই পড়ে আছে। এই টাকা কি তারা কখনো পাবে?

এছাড়া বিভিন্ন কারখানায় দূর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের খবর হর হামেশা শুনা যায়। মুলত মালিকদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ও অবেহেলার কারণে শ্রমিকদের জীবনের এমন হতভাগ্যের ইতি ঘটছে না।

পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক বার্তা দিয়ে আর দোয়া মাহফিল দিয়ে শ্রমিকের কি হবে । তাদের দরকার নিরাপদ কর্মস্থল ও ন্যায্য মজুরি । কিন্তু কোনটি তারা পাচ্ছেন না । বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি প্রতি মাসে $৬৪ কিছুদিন আগে যা ছিল $৩৮। প্রতিবেশী ভারতে উত্তর প্রদেশে $৮৮ বিহারে $৭০ ।মালয়শিয়ায় $২৭৫, নেপালে $৯০, শ্রীলংকায় $৭৭, পাকিস্তানে $১০০।

তথ্য সূত্রঃ সংবাদপত্র, ব্লগ , ওয়িকিপিডিয়া, ইন্টারনেশনাল রিপোর্ট অন মিনিমাম ওয়েজ।

বিষয়: বিবিধ

১০৬৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

216108
০১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
ফেরারী মন লিখেছেন : সময় এসেছে শ্রমিকদের জেগে ওঠার। তাদের ন্যায্য পাওয়া তাদেরই আদায় করে নিতে হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File