দরবারী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক!

লিখেছেন লিখেছেন ইয়াফি ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:৩৪:১৫ সন্ধ্যা



আইনমন্ত্রী আনিস সাহেব যখন যেটা তার সরকারের পক্ষে যায়, সেটাকে ন্যায়সংগত, আইনসংগত বলে। প্রধানবিচারপতি সম্প্রতি অবসরে যাওয়া বিচারপতিদের রায় লেখাকে অসংবিধানিক বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সরকারের পক্ষে যায়নি বলে আইনমন্ত্রী আনিস সাহেব প্রধানবিচারপতির মন্তব্যকে সরাসরি নাকচ করে বলেছেন অবসরে গিয়ে বিচারপতিরা রায় লেখলে তা অসাংবিধানিক বা বেআইনি নয়! একটি দেশের বিচারবিভাগের বর্তমান কার্যরত নির্বাহীপ্রধান যদি বেআইনি কথা বলছে বলে সরকারের আইনমন্ত্রী তার কথাকে ছুড়ে ফেলেন, তাহলে সেদেশের সাধারণ মানুষ বিচারবিভাগের প্রতি কি ধারণা পোষণ করতে পারে? আইনমন্ত্রী আনিস সাহেব তার সরকারকে বাঁচার লক্ষ্যে আরেকটা কুযুক্তি বার করছে যে, বিচারপতিদের বিচারের রায় কতদিনে লিখতে হবে এরকম কোন নির্দেশনা আইনে নেই। আইনমন্ত্রী আনিস সাহেবের যুক্তির সুত্র ধরে বলতে হয় যে, বিচারপতি সাহেবরা অবসরে গিযে রায় লিখবেন এরকম নির্দেশনাও তো আইনে নেই। তাহলে সুবিবেচনা, ন্যায্যতা কি বলে? বিচারপতি বিচারকার্যক্রম শেষ করে অবসরে গেলেন আর রাজনৈতিক কাঁদা ছুড়াছুড়িতে লিপ্ত হলেন, কারো বাড়ি ঘেরাও করতে গেলেন, এভাবে 3-4 বছর কেটে মস্তিস্ক থেকে পূর্বের কর্মজীবনের অমীমাংসিত মামলাসমূহের সিদ্ধান্তের চেতনা, সব কুটিনাটি উধাও করে যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলপ্রবণ মস্তিস্ক নিয়ে রায় লেখেন, তাহলে রায়ের নির্ভূলতা, নিরপেক্ষতা, সামঞ্জস্যতা রক্ষিত হবে কিনা? বাংলাদেশে নিকট অতীতে অবসরে যাওয়া আরেকজন প্রধানবিচারপতি খায়রুল সাহেব অবসরে গিয়ে রায় লেখা যে কত বিপদজনক হতে পারে তা দেখিয়ে গেছেন। উঁনি তাঁর কমজীবনের শেষান্তে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী(তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান) মামলার সংক্ষিপ্তাদেশে বলে গেলেন প্রয়োজনে আরো দুই টার্ম তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। অথচ অবসরে যাওয়ার 17 মাস পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি খায়রুল সাহেব তার পূর্বেকার সংক্ষিপ্তাদেশ থেকে গতিমুখ বদলে বললেন তত্বাবধায়ক সরকার শুধুমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। বিচারপতি খায়রুল সাহেবের এহেন অসততার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে এযাবতকালের সম্ভবত সবচেয়ে নিন্দিত প্রধানবিচারপতি হয়ে চিহ্নিত থাকবেন। আইনমন্ত্রী আনিস সাহেব একজন পেশাদার আইনজীবি হিসেবে এটা নিশ্চয় বুঝবেন অবসরে গিয়ে লেখা রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকেনা। কারণ এতে বিচারপতিদের শফতের বাধ্যবাধকতা থাকেনা। আবার বিলম্বতা সেই নীতিরও প্রতিধ্বনি করে Justice delayed, Justice denied. কিন্ত আইনমন্ত্রী আনিস সাহেব নিজের সরকার প্রধানকে তুষ্ট করতে গিয়ে হঠকারিতার আশ্রয় নিলেন। যে আইনমন্ত্রী সরকার প্রধান রুষ্ট হবেন দেখে আইনের ন্যায্যতাকে ধামাচাপা দেয়, সে আইনমন্ত্রীকে দরবারী আইনমন্ত্রী বলা হয়। এধরণের দরবারী আইনমন্ত্রী নিয়ে সরকার প্রধান কোন না কোন এক সময় বিপদে পড়ে যাবেন। তখন এই দরবারী আইনমন্ত্রীকে অর্ধচন্দ্র দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা।

বিষয়: রাজনীতি

১৯৬০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358288
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
হতভাগা লিখেছেন : আইনের এইসব মাইরপ্যাচই আইনজীবীদের আয় রোজগারের কৌশল
358290
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৪
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : সব জায়গায় তেলবাজে ভরে গেছে।
358291
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : বে আইনই যেখানে আইন আর তা যদি অযোগ্য লোকদের বহণ করতে দেওয়া হয় তবে সেখানে আর কিইবা আশাকরা যাবে৷
358297
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৫৬
তট রেখা লিখেছেন : কোনো ব্যাক্তি বিশেষের ইচ্ছা বা কথাই বাংলাদেশের আইন, এখানে ন্যায্যতার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত।
358299
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আইন বা নিতির চিন্তা করে কে!! সব তাদের ইচ্ছা্! এভাবে করতে করতে এতদিন সমুদ্রকে শাসন করতে চাইবে তারা আর এটাই হবে তাদের শেষ পরিনিতি।
361477
০৫ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৩৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : ব্লগে নিয়মিত হওয়ার অনুরোধ রইল

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File