প্রেক্ষিত আইনের শাসনঃ দুইটি ঘটনার মূল্যায়ন!
লিখেছেন লিখেছেন ইয়াফি ১১ জুন, ২০১৫, ০৬:২১:০১ সন্ধ্যা
কাকতালীয়ভাবে ঘটনা দুইটি তাদের স্হান, কাল, পাত্রের অচিন্তীয় বৈসাদৃশ্যতা থাকলেও দুটো জায়গায় তাদের সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়, এক – ঘটনা দুইটির রকম-ধরণ এবং দুই – পত্র-পত্রিকায় প্রকাশের সময়কাল। তথাপি ঘটনা দুইটি অন্ততঃ আরো একটি জায়গায় মিলানো যেতে পারে আমাদের বাংলাদেশের আইনের শাসনের নমুনা!
ঘটনা- 1
গত পরশু 9ই জুন, 2015 তারিখে আরব আমিরাতের একটি বিনামূল্যে বিতরিত পত্রিকার বিবরণে জানা যায় গত 4 মে, 2015 দুবাই এর আল কোসাইস নামক স্হানে 34 বছর বয়স্ক একজন বাংলাদেশী মোটরসাইকেল আরোহী যিনি রেস্তোরার ডেলিভারীম্যান হিসেবে কাজ করেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্হানীয় একজন গাড়ীচালককে (যিনি 21 বছর বয়স্ক একজন ছাত্র) ওভারটেক করে। এতে ঐ গাড়ীচালকের গতি বাঁধাপ্রাস্ত হলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বাংলাদেশী মোটরসাইকেল আরোহীকে ধরে উপুর্যপুরি ঘুষি মারে এবং ধাক্কা দিয়ে তার মোটরসাইকেল ফেলে দেয়। আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশী মোটরসাইকেল আরোহী পালিয়ে অদূরবর্তী স্হানের আড়ালে গিয়ে দেখে ক্ষুব্ধ গাড়ীচালক মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাংক খুলে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাউদাউ আগুন জ্বলতে দেখে লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এবং পুলিশ ঘটনাস্হল থেকে ক্ষুব্ধ গাড়ীচালককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং আহত মোটরসাইকেল আরোহীকে চিকিত্সার্থে স্হানীয় রাশেদ হাসপাতালে ভতি করিয়ে দেয়। আদালতে উভয়পক্ষের জবানবন্দী নেয় এবং ক্ষুব্ধ গাড়ীচালক তার দোষ স্বীকার করে নেয়। আদালত চলমান মাসের শেষের দিকে মামলার পরবর্তী শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষুব্ধ গাড়ীচালক কৃত অপরাধের জন্য 7 বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
ঘটনা- 2
গতকাল 10ই জুন, 2015 বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত প্রায় দুইমাস আগে 14ই এপ্রিল, 2015 রাত পৌনে 2টার দিকে রাজধানী ঢাকার বাংলামটরে যানযটে বিরক্ত হয়ে দামী প্রাডো গাড়ীতে অবস্হানরত 42 বছর বয়স্ক এক যুবক গাড়ীর জানালা খুলে পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এতে নিরীহ রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী নিহত হন। ঘটনার প্রায় দুইমাস অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ মাত্র 9 দিন আগে তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে চিহ্নিত করে ঐ ঘটনাস্হলের পিস্তলধারী অজ্ঞাত খুনী ও তার ড্রাইভারকে সনাক্ত করে এবং আটক করে। আটকের পর পুলিশ জানতে পারে 42 বছর বয়স্ক ঐ খুনীর নাম বখতিয়ার আলম রনি ও তার মা পিনু খান শাসকদল আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ও অঙ্গসংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক! ক্ষমতাশালী মহিলা এমপির ছেলে বলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। উল্টো দাবী করতে থাকে ঘটনার সময় সে নেশাগ্রস্ত ছিল। এদিকে আদালত অনেক কষ্টে 10 দিন রিমান্ডে আবেদনের প্রেক্ষিতে 4 দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বখতিয়ার আলম রনিকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর 1 জুন সন্ধ্যায় সে বুকে ব্যথার কথা বললে প্রথমে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে এবং সেদিনই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 3 জুন পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশেষে 6 জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কোন অসুখ নেই বলে ছাড়পত্র দেয়।
খুনী বখতিয়ারের গর্বিত মা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাশালী মহিলা এমপি পিনু খান
খুনী বখতিয়ার দাবী করছে ঘটনার সময় সে নেশাগ্রস্হ ছিল। আর তার যোগ্য মা ক্ষমতাশালী মহিলা এমপি পিনু খান দাবী করছে ঘটনার সময় তার ছেলে পরিবারের সাথে অন্যত্র ছিল। হয়তো পুলিশও একদিন বলবে ঘটনার সাথে ক্ষমতাশালী মহিলা এমপি ও আওয়ামী লীগের নেত্রী পিনু খানের পুত্রধন 42 বছর বয়স্ক বখতিয়ারের কোন সম্পর্ক নেই
হায়! আজ ভিনদেশে প্রবাসী বাংলাদেশী ন্যায়বিচার পেলেও নিজদেশে ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার দাপটের অসহিষ্ণুনতা নিরীহ আবদুল হাকিমদের মা-বাবার শুধুই আহাজারী!
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অবিচার - আমার কাছে চুড়ান্ত রকমের নিষ্ঠুরতার প্রকাশ বই অন্য কিছু নয়।
দূর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে 'অবিচার' করা এখন রাস্ট্রীয় স্ট্যান্ডার্ড এ পরিনত হয়েছে।
ধন্যবাদ সুন্দর করে উদাহরন সহযোগে বিচারের স্নাপশর্ট শেয়ার করার জন্য। যদি আমাদের মধ্যে তারপরও হুশ হয়।
"হায়! আজ ভিনদেশে প্রবাসী বাংলাদেশী ন্যায়বিচার পেলেও নিজদেশে ক্ষমতাবানদের ক্ষমতার দাপটের অসহিষ্ণুনতা নিরীহ আবদুল হাকিমদের মা-বাবার শুধুই আহাজারী!"
যেমন জাতি, তেমনি তাদের নেতা, তেমনি তাদের বিচারকরা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন