কথোপকথন
লিখেছেন লিখেছেন দৃষ্টিহীনের অন্তর্দৃষ্টি ০১ মে, ২০১৪, ০১:১৪:৫৯ দুপুর
- তুই এত মন খারাপ করে থাকছিস কেন?
-হুম!!
-কি হুম?
-কিছুই করার নেই।
-কিছু করার থাকবে না কেন? কথা বল।
-কথা বলার কিছু নেই।
-কেন?
-ও আমাকে ঘৃণা করে! যে ঘৃণা করে তার সাথে কথা বলি কিভাবে?
-ও তো রাগের মাথায় বলেছে। রাগ হইছে, তাছাড়া তুই যে কাজ করেছিস তাতে যে কারো রাগ হবেই। আর তোরা কেও কাওকে দেখসিনি, মানে সামনা সামনি দেখা হয়নি। আর তুই এভাবে আজে বাজে কথা বলেছিস। শুরু না হতেই সব শেষ করে দিলি।
-আমার খুব রাগ হইছিল।
-তোর রাগ আগা গোঁড়াই বেশি। এক্তু কন্ট্রোল করতে পারিস না? হুটহাট রেগে যাস। ওয়েট কর। ওর রাগ কমলে তোকে নক করবে।
-হাহহ!! কখনই করবে না।
-কেন?
-কারন সব কিছুই এক তরফা ছিল।
-এক তরফা মানে? সে কি তোকে পছন্দ করত না?
-পছন্দ করত, পছন্দ না করলে এত কথা বলত না।
-তাহলে?
-তাহলে আর কি? আমার ফিলিংস টা এক তরফা ছিল। তাছাড়া, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড, আমার বর্তমান পজিশন, আমার অতীত, কোন কিছুই ওর সাথে যায় না। আর ও খুব চুজি মেয়ে, নিজের জন্য বেস্ট জিনিসটাই ও বেছে নিতে পারে। আর আমার এত খুঁত। বেস্ট ত দুরের কথা নরমালভাবে যে আমার সাথে এতদিন কথা বলেছে এটাই তো অনেক।
-হুম... কি করবি তাহলে?
-করার কিছুই নেই। আমিও তোর মতই মনে করেছিলাম। রাগ কমে গেলে হয়তো। নক করবে। কিন্তু প্রায় আটচল্লিশ ঘন্টা পেরোনোর পরও যখন আর করল না। আর করবেও না কোনদিন।
-কিভাবে বুঝলি?
-আগে আমি বা সে রাগ করলে কয়েক ঘণ্টা পরই মেসেজ পাঠাতো "এক মিনিটের জন্য হলেও যেন কল করি, বা কথা বলি বা মেসেজে আসি"। কিন্তু এখন এত ঘন্টা পার হোল কিন্তু আসল না। আর আসবেও না কোনদিন।
-এতদিন তাহলে তুই, মরিচিকার পিছনে ছুটেছিস?
-হুম।। আমি খুব তৃষ্ণার্ত ছিলাম...
-তো? এখন?
-সব কিছু পালটে ফেলব।
-সব কিছু কি পালটাবি?
-সব!! এফবি, মোবাইল সব।।
-কেন পালটাবি, ও তো আর তোর সাথে যোগাযোগ করবে না। এসব পালটিয়ে লাভ কি?
-সব কিছুতেই ও মিশে আছে!! অল্পদিনে অনেক স্মৃতি।
-হা হা হা!! সব পালটিয়ে ফেল, মনটাকেও!!
-হুম...
-ভুলে যা সব কিছু!
-হাহ, সত্যি যদি পারি, খুব ভাল হবে।
-হুম।। প্রবলেম ।
-যার লাইফ জন্ম থেকেই প্রবলেমে তার প্রবলেম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যাবেনা।
-জন্ম থেকে বলতে?
-হা হা হা!! জানিস না? জন্মের সময় আমার পা বের হইছিল আগে, এক পা। তার পর বহু কষ্টে নাকি বের হইছিলাম। জন্মের পর আমাকে সবাই মৃত ভাবছিল। কান্দি নাই যে। মৃত ভেবে আমাকে শুয়াইয়া সবাই কান্তেছিল। আমি নাকি অনেক পরে কাইন্দা উঠছিলাম।
-হুম।। জানতাম কিন্তু?
-কিন্তু কি? তারপর লাইফে কি কি ঘটছে জানিস না তুই? আমার ইচ্ছায় কি কিছু হইছে আজ পর্যন্ত? সবই তো মানুষের ইচ্ছায়। মানুষের ইচ্ছায় গৃহ হারা দুমাসে, মানুষের ইচ্ছায় বেরে ওঠা। মানুষের ইচ্ছায় ভালবাসা, মানুষের ইচ্ছায় বিয়ে করা, মানুষের ইচ্ছা হয়েছে ছেড়ে চলেও গেছে। মানুষের ইচ্ছা হয়েছে দাবি দাওয়া পেশ করেছে, মানুষের ইচ্ছা হয়েছে কাছে এসেছে আবার মানুষের ইচ্ছায় দূরে সরে গেছে। এখনো দেখ, আমার ইচ্ছায় কিছুই হোল না। ... হা হা হা... নাইস না? বৈচিত্রের অভাব নাই। আর কত বৈচিত্রের দেখা মিলবে।
-কিন্তু তোর কোন চাওয়া কি অপূর্ণ রেখেছে তোর বাবা-মা?
-আমি তো কিছুই চাই নাই কোনদিন। আমার কোন ডিমান্ড ছিলনা। ভাল জামা কাপড়ের, কোন শখের কোন কিছুই না। আমার প্রথম শখ একটা ওয়াকম্যান আমি কিনেছিলাম আমার স্টাইপেন্ড এর টাকা দিয়ে। কম্পিউটারও আমি চাই নাই। আব্বা কিনে দিছিল। মনে করছিল হয়তো পরে যদি কিছু বলি আপন হলে দিতা। আসলে এরকম কিছুই আমার মনে আসে নাই। আপন হলে কি পেতাম আর না হলে কি পাচ্ছি না। আমি এসব চিন্তার বাইরে চলে গেছিলাম।
-কিন্তু আব্বা-আম্মা তো তোকে অনেক ভালবাসে?
-সে বেপারে আমার কোন সন্দেহ নাই।
-হুম।। কি করবি তাইলে?
-কি করব? জীবন যেভাবে চলছে চলুক। জীবনের অনেকটা পথ তো পার করে এসেছি। আর অল্প একটু পথ। এর পরেই অন্ধকার গহীন জগত। পচে গলে যাব। কেও মনে রাখবে না। বাস্তবতা খুব কঠিন। যে চলে যায় তার কথা ভেবে কেও বসে থাকে না। হাসি আনন্দ, খাওয়া, ঘুম পাড়া, দুঃখ পাওয়া কোন কিছুই চলে যাওয়া মানুষের জন্য আটকে থাকে না।
-অনেক ভাবের কথা বললি!!
-নারে ভাবের কোন কথা না। আবেগের কথা বলতে পারিস কিন্তু আবেগটাও না পুরোপুরি। আমি বাস্তবতার কথা বললাম, বলতে চেষ্টা করলাম খুব সহজ ভাষায়।
-হুম... ঘুমা এখন অনেক রাত হইছে।
-হুম... ঘুমাব। খুব টাইয়ার্ড। অনেক কিছুই কাল করতে হবে। অনেক ডিসিশন নিতে হবে। একটু শান্তিতে ঘুমাবার চেষ্টা করি।
(নিজের সাথে কথোপকথন)
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন