পর্দা নিয়ে দুইটি সত্ত্ব ঘটনা ও দুটি প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন ভোলার পোলা ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:০০:০২ সকাল
মেয়েদের শরীরের সব চাইতে আকর্ষণীয় অঙ্গ তার বুক । একারনে মেয়েরা ওড়না দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে। মেয়েদের বুকে ওড়না দেয়া প্রসঙ্গে দুটি সত্যি ঘটনা এবং একটি প্রশ্ন ।
২০০৪ সাল । একটি সরকারি হাইস্কুলে ক্লাস এইটের বাংলা ক্লাস চলছে । হঠাৎ বাংলা স্যারের চোখ পড়লো একটি মেয়ের দিকে । তিনি লক্ষ্য করলেন, সব মেয়েরা মাথায় ওড়না দিয়ে এসেছে। সবার কামিজ ফুল হাতা । অথচ একটি মেয়ে হাফ হাতা কামিজ পরে এসেছে, মাথায় তো দূরে থাকুক বুকেও ওড়না নেই ! তিনি মেয়েটিকে সবার সামনে এনে দাড় করালেন ।
তারপর ওড়না পরা আরেকটা মেয়ে এনে তার পাশে দাড় করিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা সবাই এই দুজনের দিকে তাকাও । ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখ, একজন ভ্রু প্লাক করে, হাফ হাতা কামিজ পরে, বুকে- মাথায় ওড়না না দিয়ে সেজে গুজে এসেছে। আরেকজন মাথায় ওড়না দিয়ে ঢেকে পর্দা করে এসেছে। কোন সাজগোজ করেনি । খুব সাধারন ভাবে এসেছে ।
তোমরা সত্যি করে বলবে, কাকে বেশী ভাল লাগছে,??
ক্লাসের সব ছেলে মেয়ে জবাব দিল, স্যার ওড়না পরা, ফুল হাতা কামিজ পরা মেয়েটিকে বেশী ভাল লাগছে ।
বাংলা স্যার মেয়েটিকে খুব কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কালকে থেকে বুক খোলা রেখে ওড়না না পরে আসলে ক্লাশে ঢুকতে দেয়া হবে না!
আর যতদিন পর্যন্ত ফুল হাতা কামিজ না বানাবে ততদিন স্কুলে আসবে না!
মেয়ে তার বাসায় গিয়ে স্যারের বিরুদ্ধে নালিশ করলে পরদিন তার বাবা হেড স্যারের কাছে বাংলা স্যারের উপযুক্ত বিচার দাবি করলো ।
হেড স্যার গার্জিয়ানের নোংরা মানসিকতা দেখে তার মেয়েকে টি সি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিল!
ঘটনা -২
প্রায় ১১বছর পর...
২০১৫ সাল । অন্য একটি সরকারী হাইস্কুল । ক্লাস নাইনের একটি মেয়ে ওড়না মাথায় দিয়ে বারান্দা দিয়ে হেটে ক্লাসে যাচ্ছিল ।
হেড স্যারের নজরে পড়লো মেয়েটি ।
তিনি ডাক দিলেন মেয়েটিকে ।
মেয়ে:- আসসালামু আলাইকুম স্যার । আমাকে ডেকেছেন ?
হেড স্যার:- আজকে তোমার বিয়ে নাকি ? বিয়ের কনে সেজে আছো কেন ?
মেয়ে:- মাফ করবেন । আপনার কথাটা বুঝতে পারলাম না স্যার ।
হেড স্যার:- বিয়ের কনে দের মত ওড়না দিয়ে ঘুমটা দিয়ে আছো কেন??
এটা স্কুল ,এখানে হুজুর গিরি করে ওড়না মাথায় দেয়া যাবে না ।
ওড়না খোল । আমার স্কুলে হুজুর গিরি করা চলবে না ।
মেয়ে :- কিন্তু স্যার, আমি তো ওড়না ছাড়া কখনও বাড়ির বাইরে যাইনি!
হেড স্যার:- বাড়ির বাইরে যাও আর না যাও, তোমার যেখানে খুশি সেখানে ওড়না মাথায় দিয়ে হুজুর গিরি করো, এতে আমার সমস্যা নেই । কিন্তু আমার স্কুলে ওড়না চলবে না । ওড়না খুলে ব্যাগে রেখে দাও বেয়াদব মেয়ে ।
পরদিন , মেয়েটির গার্জিয়ান হেড স্যারের কাছে জানতে চাইলো ওড়না ব্যবহার করলে সমস্যা কোথায় ??
হেড স্যার সাফ জবাব দিয়ে দিল, তার স্কুলে ওড়না পরে হুজুর সাজা চলবে না! এটা ওপর থেকে বলে দেয়া হয়েছে !
গার্জিয়ানের সমস্যা থাকলে তিনি মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাক !
অতপর, মেয়েটিকে টিসি দিয়ে দেয়া হল!
ওপরের দুটি সত্যি ঘটনা দেখে আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগছে , ওপরের দুটি ঘটনাতেই মেয়ে গুলোকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে । একজনকে ওড়না না পরার অপরাধে, অন্য জনকে ওড়না পরার অপরাধে! এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইযে
২০০৪-২০১৫ মোট ১১ বছরে আমাদের মানসিকতার কি উন্নতি হয়েছে নাকি অবনতি হয়েছে ??
আমরা কি জানোয়ার থেকে মানুষের দিকে যাচ্ছি ? নাকি মানুষ থেকে জানোয়ার হচ্ছি???
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৬ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেশ ও সমাজ (মানে আমরাও)
এগিয়ে যাচ্ছে (জাহান্নামের দিকে)-
ভাবতে ভালো-ই লাগে
(ইবলিশ ও তার সাথীদের)
আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান নার..
রইলাম নির্বাক
কিন্তু আমি আমার দোষ স্বীকার করেই বলি, এগুলো ৪৪ বছর আগে কেন চিন্তা করিনি৷
পড়ার জন্য শুকরিয়া ভাই
ভালো লাগলো পড়ে মন্তব্য করার জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন