মানস ভ্রমণ সুন্দরবনে
লিখেছেন লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু ১৮ মার্চ, ২০১৫, ১১:১৪:০২ রাত
মনে মনে যে ভ্রমণ তাই মানস ভ্রমণ। আসলে মানস ভ্রমণটা হচ্ছে ভ্রমণের আগেই মনে মনে বেরিয়ে আসা। মনে হতে পারে ভ্রমণ পরিকল্পনাটাই মানস ভ্রমণ, আসলে কিন্তু তা নয়। আমার মতে মানস ভ্রমণকে মোটা দাগে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম ভাগের মানস ভ্রমণে সেই সব ভ্রমণ পরিকল্পনার স্থান পাবে যেগুলি অচিরেই বাস্তবের মুখ দেখবে। অর্থাৎ আজকে যে ভ্রমণের কথা ভাবছেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে যাচ্ছে। যেমন আমি এই আগামী ১৯ তারিখে যাচ্ছি সুন্দরবন। আগামী মাসে যাবো কক্সবাজার। মাস দুয়েক পরে যাব কাশ্মীর।
দ্বিতীয় ভাগের মানস ভ্রমণে থাকবে একটু দেরিতে যে ভ্রমণ পরিকল্পনা সফল করা হবে। অর্থাৎ যাব বেরাতে অবশ্যই তবে এখনই না কিছুটা সময় লাগবে। যেমন আমার খুব যাওয়ার ইচ্ছে আন্দামান দ্বীপে। ইচ্ছে আছে আমাজন বনে বেরাতে যাওয়ার, খুব শখ পিরামিড আর চীনের প্রাচীর দেখার।
আর তৃতীয় ভাগে থাকবে সেই সব ভ্রমণের পরিকল্পনা যেগুলি কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। শুধু মনে মনেই সেই সব ভ্রমণ করা হবে, সশরীরে কখনোই সেখানে যাওয়া হবে না। যেমন এভারেস্টের চুড়ায় যাওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। দুই মেরুতে যাওয়ার ইচ্ছে। মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। চাঁদ আর মঙ্গলেও যেতে চাই। এগুলি পূরণ করতে পারবোনা স্বাস্থ্য আর আর্থিক অসামর্থ্যের কারণে।
এবারের সুন্দরবনের মানস ভ্রমণটা আমার প্রথম ভাগেই পরে। এই ২০১৫ এর ১৯শে মার্চ ১২ জনের একটা গ্রুপ যাচ্ছি সুন্দরবনে।
সেই আদি কালে একবার গিয়েছিলাম মঙ্গলা হয়ে সুন্দরবনে। সেবার শুধু করমজল আর তার আশেপাশের খাল দিয়ে কিছুটা সময় বেড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম। নামেই শুধু সুন্দরবনে গিয়েছিলাম, খায়েস মিটেনি। এরপরের বার এই গত বছর ২০১৪এর নভেম্বরে আবার গেলেম সুন্দরবনে, অসাধারণ একটা ট্যুর হয়েছিলো সেটা। ৪০ জনের বিশাল এক গ্রুপ, বড় একটা লঞ্চে করে দু রাত তিনদিন বেরিয়েছি সুন্দরবনের অনেকগুলি স্পট।
অনেকেই জানেন নিশ্চয় আমাদের সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জ আছে, এর মধ্যে তিনটি - "চাদপাই রেঞ্জ", "শরণখোলা রেঞ্জ" ও "খুলনা রেঞ্জ " যেতে হয় খুলনা বা বাগেরহাটের মংলা থেকে। চতুর্থ রেঞ্জের নাম "বুরিগোয়ালিনা রেঞ্জ " এটি পরেছে আমাদের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমের জেলা সাতক্ষিরায়। এই পথে সুন্দরবন একটু বেশী গহীন। অন্য রেঞ্জের মতো এই পথে অতটা বিস্তীর্ণ মাঠ ঘাট পাওয়া যাবে না। এই অংশে বাঘের সংখ্যা তুলনামূলক বেশী তাই অতিরিক্ত সাবধানতাও অবলম্বন করতে হয় এই রেঞ্জে ভ্রমণে গেলে।
ফেসবুকের ভ্রমণে একটি গ্রুপ "ট্রাভেলার্স অফ ঢাকা"র ১২ জনের একটা গ্রুপের সাথে যাচ্ছি সুন্দরবনের এই গহীন রূপ দেখতে।
২০১৫ সালের মার্চের ১৯ তারিখ রাতে ৯টা ১৫ মিনিটে ঈগল পরিবহনের ঢাকা টু সাতক্ষিরার বাস ছাড়বে বাড্ডা কাউন্টার থেকে। আমি একাই উঠবো এখান থেকে, বাকি ১১জন উঠবে ৯টা ৪৫ মিনিটে উত্তরা কাউন্টার থাকে। সারা রাত গাড়ি চলবে, আশাকরি সব ঠিক থাকলে ২০ তারিখ ভোরে পৌঁছে যাব সাতক্ষিরায়।
২০ তারিখ ভোরে সাতক্ষিরা থেকে লোকাল বাসে চলে যাব শ্যামনগর। সেখানে সকালের নাস্তা করে লঞ্চ ভাড়া করবো দুই দিনের জন্য। খাল আর শাখা নদী ধরে লঞ্চ এগিয়ে যাবে গহীন বনের দিকে। আশাকরি সকাল ১১টা নাগাত পৌঁছে যাব আমাদের প্রথম গন্তব্য "কলাগাছি "। কিছুটা সময় কলাগাছিতে বনের ভিতরে বেরিয়ে আবার বেরিয়ে পরবো লঞ্চ নিয়ে। লঞ্চে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে বিকাল নাগাত আরও অনেকটা পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাব "দোবেগী "। এখানেও বনে ঘুরে বেড়াবো কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে। এখান থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যেতেই সুন্দর বনে রাত নেমে আসবে। কোন একটা সুবিধাজনক স্থানে লঞ্চ নোঙ্গর করে রাতের খাবার সেরে লঞ্চেই হবে রাত্রিযাপন। প্রথম দিনের বনবিহারী এতটুকুই।
দ্বিতীয় দিন ২১শে মার্চ সকাল সকাল আবার যাত্রা শুরু হবে। সকালের নাস্তা করে নিয়ে অপেক্ষায় থাকবো আমরা "পুটনীর দ্বীপে "র জন্য। অতি সম্প্রতি এই দ্বীপটি আমাদের টুরিস্টদের নজরে এসেছে। হাতে গোনা অল্প কিছু টুরিস্টই এই দ্বীপটিতে পদচিহ্ন রাখতে পেরেছে। সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটি বন্য দ্বীপ। এইখানে হবে সমুদ্র স্নান। বন সমুদ্র আর প্রকৃতি সব মিলিয়ে অপূর্ব কিছু একটা হবে নিশ্চয়। সমুদ্র স্নান সেরে আশপাশটা ঘুরে দেখে রওনা হবো হিরণ পয়েন্ট বা "নীল কমল " এর পথে। যাত্রা পথেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে হবে। "হিরণ পয়েন্ট " পৌঁছে আবারও সুন্দরবনে রাত নেমে আসবে কালো চাদর গায় জড়িয়ে। লঞ্চের নোঙ্গর ফেলে সেখানেই রাতের খাবার সেরে রাত্রি যাপন।
২২শে মার্চ ভ্রমণের তৃতীয় দিনের শুরুতেই নেমে যাব লঞ্চ থেকে "হিরণ পয়েন্টে " হিরণ পয়েন্টের পরে সারা দিনে আরও দেখে নিবো পুষ্পকাঠি। সময়ে কুলালে মান্দারবাড়ীয়া " ঘুরে দেখে ফেরার পথ ধরবো। সন্ধ্যার পরপর ফিরে আসবো শ্যামনগর। শ্যামনগর থেকে সাতক্ষিরা হয়ে রাতের বাসেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাব। সব ঠিক থাকলে পরদিন ২৩ তারিখ ভোরে ঢাকায় পৌঁছে শেষ হবে আমার সাতক্ষিরা হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ।
এই ভ্রমণে যেই যেই স্পট গুলি দেখার ইচ্ছে -
১/ পুটনীর দ্বীপ
২/ হিরণ পয়েন্ট (নীলকমল)
৩/ পুষ্পকাঠি
৪/ দোবেগী
৫/ কলাগাছী
৬/ মান্দারবাড়ীয়া (সম্ভব হলে)
সুন্দরবেন এই ভ্রমণে আমাদের জন প্রতি চাঁদা ধরা হয়েছে ৭,৭০০ টাকা করে। এই চাঁদা দিয়ে যা যা পাচ্ছি তা হচ্ছে -
> নন এসি বাসে ঢাকা - সাতক্ষিরা - ঢাকা।
> বাসে সাতক্ষিরা - শ্যামনগর - সাতক্ষিরা।
> অন্যান্য সমস্ত যাতায়াত।
> লঞ্চে ২ রাতের কেবিন ব্যবস্থা, (শেয়ারিং)।
> লঞ্চে করে সুন্দর বনের ভিতরে ও সাগরে ভ্রমণ।
> হাইওয়েতে আসা যাওয়ার সময় নাস্তা (পরটা, সবজি)।
> সকালের নাস্তা, তিন দিন (পরটা, ডিম, সবজি / খিচুরি, ডিম)।
> দুপুর ও রাতের খাবার, তিন দিন (ভাত, মাছ বা মাংস, ভর্তা, ভাজি ও ডাল)।
> গাইড সার্বিস।
> একটি লোগো সমৃদ্ধ টি শার্ট।
> দরিদ্র তহবিলে একশত টাকা করে দান।
চললাম তাহলে.....
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আপনি সেখানে কি করবে, সে পরিকল্পনাগুলোতো মনে আছেই, পরিকল্পনা অনুযায়ী কি কি করতে পেরেছে আর কি পারেন নি, তা যদি শেয়ার না করে আশার পর তৃপ্ত মন নিয়ে বর্ণনা করতেন তাহলে খুব ভাল হত।
কেননা পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি সব করতে না প্রেন তাহলে অতৃপ্ত মনে আমাদের সাথে পরে শেয়ার করতে ভাল লাগবে না।
যাত্রা পথ শুভ হোক এই কামনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন