বান্দরবান ভ্রমণ – “শেষ পর্ব”

লিখেছেন লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৫০:১০ সকাল

বান্দরবান ভ্রমণ – “শেষ পর্ব”



২৫ জানুয়ারি রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়ি। একটি মাহেন্দ্রা গাড়ি রিজার্ভ করে নিয়ে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ি খাগড়াছড়ি ভ্রমণে। একে একে দেখে ফেলি “আলুটিলা গুহা”, “রিছাং ঝর্ণা”, “শতবর্ষী বটবৃক্ষ” আর “ঝুলন্ত সেতু”।

পরদিন ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির দিকে রওনা হই একটি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে। পথে থেমে দেখে নিই “অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”। ২৭ তারিখ দুপুরের পরে পৌছাই রাঙ্গামাটি। বিকেল আর সন্ধ্যাটা কাটে বোটে করে কাপ্তাই লেক দিয়ে “সুভলং ঝর্ণা” ঘুরে।

২৮ তারিখ সকাল থেকে একে একে দেখে এলাম ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার। দুপুরের পরে বাসে করে রওনা হয়ে যাই রাঙ্গামাটি থেকে বান্দারবানের উদ্দেশ্যে। রাতটা কাটে বান্দরবানের “হোটেল ফোরস্টারে”।

পরদিন ২৯ তারিখ সকালে একটি জিপ ভাড়া করে নিয়ে চলে যাই নীলগিরিতে। নীলগিরি থেকে ফেরার পথে দেখে নিলাম শৈলপ্রপাত। বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম নীলাচলে সূর্যাস্ত দেখে।

৩০শে জানুয়ারি সকালের নাস্তা সেরে চলে গেলাম মেঘলাতে। মেঘলা ঘুরে সেখান থেকে ফিরে দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়ে পরি স্বর্ণ মন্দির দেখতে। স্বর্ণ মন্দির দেখা শেষে আমরা মন্দির থেকে নেমে চললাম সাঙ্গু নদের দিকে........


নদী বা নদ ভ্রমণ মানেই অথই জল আর নৌভ্রমণের ছবি, কিন্তু না.... আমাদের এবারের সাঙ্গু নদ ভ্রমণে জল আর নৌকোর কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে ভাবছেন আমরা সাঙ্গু নদে সাঁতার[ কাটবো? নাহ, এবার আমরা পায়ে হেঁটে বেড়াবো সাঙ্গু নদের বুকে, ঠিকই পড়েছেন হেঁটে বেড়াব।



জানুয়ারির সময়ে পাহাড়ি সাঙ্গুর কোন স্রোত থাকে না, জল চলে যায় তলানিতে। জল এতটাই কমে যায় যে কোথাও কোথাও হাঁটুর নিচে নেমে যায়। সমস্ত প্রকার নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।



নদের বুকে জেগে উঠে কাদা-বালুময় তলদেশ। সেখানে বিকেলে খেলা চলে ফুটবল আর আর নানান গ্রাম্য খেলা, চড়ে বেড়ায় গৃহপালিত পশুরা।



স্বর্ণ মন্দির থেকে ফেরার পথে আমরা বাজারের কাছের ঘাট দিয়ে নিচে নদে নেমে আসি। নৌভ্রমণের কোন সুযোগ নেই বলে পায়ে হেঁটে বিকেলটা কাটাবো নদের বুকে। হেঁটে হেঁটে আমরা অনেকটা পথে এগিয়ে যাই।











বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। আমরা নদের তলদেশ ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসি আদিবাসীদের পাড়াগুলিতে। সেখান থেকে ফিরে আসি বান্দরবানের বার্মিজ মার্কেটে।



আজ রাতেই ফিরবো আমরা ঢাকার পথে, তাই শেষ সময়টাতে শপিং করতে ব্যস্ত হয়ে পরে মেয়েরা। আমি একা একা হাঁটেতে হাঁটতে চলে যাই বাজারের অনেকটা ভেতরে।



বান্দরবানের মুন্ডির নাম শুনেছেন হয়ত, আমি সেটা চেখে দেখেছি, সুপ টাইপ নুডলস বা নুডলস টাইপ সুপ। খেতে ভালো হতে হতে খারাপ বা খারাপ হতে হতে ভালো। পরে আমার দেখা দেখি ইস্রাফীলও মুন্ডি চেখে দেখেছে। রেস্টুরেন্টে দেখলাম চমৎকার একটা প্রাইজ লিস্ট লেখা আছে, আইটেমগুলি সত্যি অসাধারণ।



মুন্ডি পর্ব শেষ করে আমরা গেলাম শুটকি বাজারে, কিনতে না দেখতে। নানা ধরনের শুটকি রয়েছে এখানে। আপনারাও দেখেন আমাদের সাথে, আর শুটকি দেখতে দেখতে বিদায় বান্দরবানের এবারের ভ্রমণ থেকে।





{ছুড়ি শুটকি}



{শাপলাপাতা শুটকি}



{বাঁশ পাতা শুটকি}



{হাঙ্গর ছানার শুটকি}



{অক্টপাশের শুটকি}



{চিংড়ি গুরা শুটকি}



{এইটা কি? কেচকি না মলা-ঢেলা?}

ওহ হো শেষ কথাটা বলি শুধু – আমাদের টিকি কাটা ছিল রাতের এসি বাসের। দুপুরে খাওয়ার সময় রি-সং সং রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার (মহিলা ম্যানেজারের জন্য কি আলাদা কোন কিছু আছে) এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে আমরা কবে ঢাকা ফিরবো। আমি জানাই আজ রাতের টিকেট কেটেছি। তখন সে যানতে চায় আজ রাতের খাবার আমরা কোথায় খাবো। আমি জানাই ওদের রেস্টুরেন্টেই খাবো সন্ধ্যার পরে। আমরা যে কবারই বান্দরবান যাই সব সময় ওদের রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করি বলে আমাদের মুখটা হয়তো ওদের চেনা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পরে যখন খাবার খেতে এসেছি তখনও বেশী রাত হয়নি বলে সবাই ঠিক করলো আজ ভাত খাবে না। সুপ, নুডলস, চিকেন ফ্রাই দিয়ে খাওয়া শেষ করবে। অর্ডার শেষে যখর খাবার এলো তখন দেখলাম চিকেন আর ভ্যাজিটেবল মিলিয়ে একটা অন্যরকম ডিস এসেছে, যেটা আমরা অর্ডার দেই নি। তখন ম্যানেজার এসে জানলো রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকে এই ডিসটা আমাদের জন্য বিশেষ ভাবে পরিবেশন করা হয়েছে সম্মান দেখানোর জন্য।

এমন অভাবনীয় সমাদরে আমরা অবাক!!!

পূর্বের পর্বগুলি -

খাগড়াছড়ির পথে”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – আলুটিলা গুহা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – রিছাং ঝর্ণা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শতবর্ষী বটবৃক্ষ”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার”।

বান্দরবান ভ্রমণ – নীলগিরি”।

বান্দরবান ভ্রমণ – শৈলপ্রপাত”।

বান্দরবান ভ্রমণ – নীলাচল”।

বান্দরবান ভ্রমণ – মেঘলা”।

বান্দরবান ভ্রমণ – স্বর্ণ মন্দির”।

প্রথম প্রকাশ : ঝিঁঝি পোকা



এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

বিষয়: বিবিধ

১৩০৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

259939
৩১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:১৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Wonderful experience and lovely pictures Jajakallahu khair.
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮
203752
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
260014
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫২
নোমান২৯ লিখেছেন : Awesome .
৩১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:২৮
203958
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ধন্যবাদ
260040
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৫৯
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
৩১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:২৮
203959
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : স্বাগতম আপনাকে।
260046
৩১ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্ট আর ছবিগুলির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মেন্যুর তিন নং আইটেম টা চেখে দেখেছিলেন কি????
৩১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:২৯
203960
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ইয়ে মানে করা হয় নাই টেস্ট, শুধু মুন্ডিটাই খেয়েছিলাম। Tongue

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File