বান্দরবান ভ্রমণ – “স্বর্ণ মন্দির”

লিখেছেন লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০০:৫৭ রাত

বান্দরবান ভ্রমণ – “স্বর্ণ মন্দির”



২৫ জানুয়ারি রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়ি। একটি মাহেন্দ্রা গাড়ি রিজার্ভ করে নিয়ে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ি খাগড়াছড়ি ভ্রমণে। একে একে দেখে ফেলি “আলুটিলা গুহা”, “রিছাং ঝর্ণা”, “শতবর্ষী বটবৃক্ষ” আর “ঝুলন্ত সেতু”।

পরদিন ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির দিকে রওনা হই একটি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে। পথে থেমে দেখে নিই “অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”। ২৭ তারিখ দুপুরের পরে পৌছাই রাঙ্গামাটি। বিকেল আর সন্ধ্যাটা কাটে বোটে করে কাপ্তাই লেক দিয়ে “সুভলং ঝর্ণা” ঘুরে।

২৮ তারিখ সকাল থেকে একে একে দেখে এলাম ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার। দুপুরের পরে বাসে করে রওনা হয়ে যাই রাঙ্গামাটি থেকে বান্দারবানের উদ্দেশ্যে। রাতটা কাটে বান্দরবানের “হোটেল ফোরস্টারে”।

পরদিন ২৯ তারিখ সকালে একটি জিপ ভাড়া করে নিয়ে চলে যাই নীলগিরিতে। নীলগিরি থেকে ফেরার পথে দেখে নিলাম শৈলপ্রপাত। বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম নীলাচলে সূর্যাস্ত দেখে।

৩০শে জানুয়ারি সকালের নাস্তা চলে গেলাম মেঘলাতে। মেঘলা ঘুরে সেখান থেকে ফিরে দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়ে পরি স্বর্ণ মন্দির দেখতে।


বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বালাঘাটার কাছে পুলপাড়া নামক স্থানে স্বর্ণ মন্দিরের অবস্থান। স্বর্ণ মন্দির বলা হলেও এর আসল নাম মহাসুখ মন্দির। মহাসুখ মন্দির তার সোনালি রঙের জন্য "স্বর্ণ মন্দির" নামে বেশি পরিচিত। তাছাড়া একে স্বর্ণ মন্দিরের পাশাপাশি স্বর্ণ জাদি মন্দির, বুদ্ধ ধাতু চেতী ইত্যাদি নামেও ডাক হয়। মন্দির বললেও এটি আসলে বৌদ্ধদের প্যাগোডা। এটি বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান।

গৌতম বুদ্ধের সম-সাময়িক কালে নির্মিত বিশ্বের সেরা কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তির মধ্যে একটি এখানে রয়েছে। এই প্যাগোডাটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সেরা গুলোর একটি। এই মন্দিরের কাছেই রয়েছে দেবতা পুকুর নামে একটি পুকুর, যদিও এই পুকুরটি আমি দেখিনি একবারও।

স্বর্ণ মন্দিরের পথ আমাদের খুবই পরিচিত, বালাঘাটার তুলা উন্নয়ন বোডের ডাকবাংলোতে এর আগে আমরা থেকে গেছি বেশ কয়েক রাত। তাছাড়া বেশ কয়েকবার গিয়েছিও স্বর্ণ মন্দিরেও।



টিলার উপরে স্বর্ণ মন্দির



মন্দিরের আগেই ঢালু হয়ে রাস্তা নেমে গেছে ছোট্ট একটা ছড়ার উপর দিয়ে, তারপরেই বাম দিকে বাক নিয়ে উঠে গেছে মন্দিরে।



মন্দিরটি একটি মাঝারি উচ্চতার পাহারের উপরে তৈরি করা হয়েছে বলে কিছুটা চড়াই পথ বেয়ে উঠতে হয়। এর পরেই আছে অনেকগুলি সিঁড়ি, সিঁড়ি শেষেই শুরু হয়েছে মন্দিরের সীমানা।



সিঁড়ে সাইয়ারা, মনে হয় ১৮০টির মত সিঁড়ি রয়েছে এখানে।



মন্দিরের শেষ অংশের সিঁড়ি।



১০টাকা টিকেট কেটে প্রথমেই আপনার হাতের বাম দিকে পরবে এই মিউজিয়ামের মত অংশটি।

এখানে ১০ টাকার টিকেট কেটে মন্দির প্রাঙ্গণে যেতে হয়, শর্ট প্যান্ট পরে মন্দিরে ঢুকা নিষেধ, জুতা খুলে ঢুকতে হয়। মূল মন্দির চত্বরে আছে কারুকাজ করা সুন্দর তোড়ন, তার দুপাশে দুটি মূর্তি।



মূল তোড়ন



তোড়নের বাম পাশে বসা এই মহাশয়।



তোড়নের ডান পাশে বসা এই মহাশয়।

মন্দিরের বাইরের অংশে ১২টি ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠে ১২টি দেশের শৈলীতে ১২টি দন্ডায়মান বুদ্ধ মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। মন্দির দণ্ডায়মান আছে গরুড় স্তম্ব ও একটি বিশাল ঘণ্টা। মন্দিরটি পাহারের চূড়ায় হওয়ায় এর উপর থেকে চারিধারের প্রাকৃতিক মনোরম শোভা উপভোগ করা যায়।





এমন ১২টি দন্ডায়মান বুদ্ধ মূর্তি আছে।



মূল মন্দিরের সামনে সাইয়ারা।



গরুড় স্তম্ব, মূলত একটি পতাকা দন্ড।



মন্দিরের ঘন্টার সামনে সাইয়ারা।



ঘন্টা





আপনি যদি এই স্বর্ণ মন্দির দেখতে যান তাহলে অবশ্যই সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেতে ১১.৩০ মিনিটের মধ্যে যাবেন, আর যদি সকালে যেতে না চান তাহলে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনটি থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে যেতে পারেন। অন্য সময় আপনাকে মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হবে না।



মন্দির দেখা শেষে আমরা আবার ঘুর পথে (দেবতা পুকুর যেদিকে) নেমে আসি। এই পথে নামার সুবিধা হচ্ছে এটায় কোন সিঁড়ি নেই। মূলত এই পথটা ধরে গাড়িগুলি একে বারে মন্দিরের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। মন্দির থেকে নেমে আমরা এবার চললাম সাঙ্গু নদের দিকে........

পূর্বের পর্বগুলি -

খাগড়াছড়ির পথে”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – আলুটিলা গুহা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – রিছাং ঝর্ণা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শতবর্ষী বটবৃক্ষ”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার”।

বান্দরবান ভ্রমণ – নীলগিরি”।

বান্দরবান ভ্রমণ – শৈলপ্রপাত”।

বান্দরবান ভ্রমণ – নীলাচল”।

বান্দরবান ভ্রমণ – মেঘলা”।

প্রথম প্রকাশ : ঝিঁঝি পোকা



এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255298
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্ট ও ছবিগুলির জন্য ধন্যবাদ।
বাইরে থেকে দেখেছি কিন্তু ভিতরে যাওয়ার বিশেষ আকর্ষন বোধ করিনি।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৪৩
199081
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ভিতরেতো ঢুকতে দেয় না Crying
255300
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৫৮
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৪৪
199082
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ধন্যবাদ
255344
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:৪৪
বাজলবী লিখেছেন : মরুভূমির জলদস্যু ভ্রমণে গেলেন অাগে জানালে দাওয়াত খাওয়াইতাম বাড়ীর পাশেই তো সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক লীলাভূমি মেঘলা বান্দরবান। অনেক দিন যাওয়া হয় না। ছবি গুলো দেখে ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৯
199124
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : কি বলেন!!
আপনার বাড়ি বান্দরবান?
সমস্যা নাই কয়দিন পরেই আবার আসতেছি বান্দরবান, তখন দাওয়াত খাওয়ায়েন।
255371
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৫৩
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:১৯
199125
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : আপনাকেও স্বাগতম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File