বান্দরবন ভ্রমণ – “শৈলপ্রপাত”

লিখেছেন লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু ০৪ জুন, ২০১৪, ০৯:৫৫:৩৮ সকাল

২৫ জানুয়ারি রওনা হয়ে ২৬ তারিখ সকালে পৌছাই খাগড়াছড়ি। একটি মাহেন্দ্রা গাড়ি রিজার্ভ করে নিয়ে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ি খাগড়াছড়ি ভ্রমণে। একে একে দেখে ফেলি “আলুটিলা গুহা”, “রিছাং ঝর্ণা”, “শতবর্ষী বটবৃক্ষ” আর “ঝুলন্ত সেতু”।

পরদিন ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির দিকে রওনা হই একটি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে। পথে থেমে দেখে নিই “অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”। ২৭ তারিখ দুপুরের পরে পৌছাই রাঙ্গামাটি। বিকেল আর সন্ধ্যাটা কাটে বোটে করে কাপ্তাই লেক দিয়ে “সুভলং ঝর্ণা” ঘুরে। ২৮ তারিখ সকাল থেকে একে একে দেখে এলাম ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার। দুপুরের পরে বাসে করে রওনা হয়ে যাই রাঙ্গামাটি থেকে বান্দারবানের উদ্দেশ্যে। রাতটা কাটে বান্দরবনের “হোটেল ফোরস্টারে”। পরদিন ২৯ তারিখ সকালে একটি জিপ ভাড়া করে নিয়ে চলে যাই নীলগিরিতে।

নীলগিরিতে অনেকটা সময় কাটিয়ে রওনা হই ফেরার পথে। ফেরার পথে সামনে পরবে চিম্বুক পাহার।

বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড় এই চিম্বুক। বান্দরবন শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের চিম্বুক পাহাড় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০০শ ফুট উঁচু। এখানে গিয়েছি আগে কয়েকবার তাই এবার আর কষ্ট করে উপরে সবাই উঠবো না ঠিক করেছি। শুধু স্বপন একা চিম্বুকের চুম্বক আকর্ষণে উপরে একটা ঢু মেরে আসে। এই ফাকে আমরা চিম্বুকের নিচে থাকা পাহাড়ি পেঁপে আর মালটা কিনে খেয়ে আবার রওনা হয়ে যাই। এবার থামবো বান্দরবন শহর থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দূরের শৈলপ্রপাতের সামনে। শৈলপ্রপাতটি একেবারেই পথের ধারে।



রাস্তার পাশেই আছে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার বা বসার ছাউনি, সেখান থেকে অনেক ধাপের সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে প্রপাতের ধারে।

বর্ষায় এই শৈলপ্রপাতের রূপ অপরূপ হয়ে ওঠে, বিশাল জলধারা ছটে চলে প্রচণ্ড গতিতে। সেই সময় এর কাছে যায়গাটা কষ্টসাধ্য ও ভয়ংকর। পুরটা দেখার সুযোগই থাকে না তখন। পাথর থাকে মারাত্মক পিচ্ছিল, একটু এদিক-ওদিক হলেই পা পিছলে আলুর দম হতে হবে তখন।



আমরা যে সময় গিয়েছি (জানুয়ারি মাসে) তখন প্রপাতে জলের ধারা ক্ষণ, অল্প জল পাথরের উপর দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ পাথরই শুকনো তাই অনায়াসেই তার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়।



প্রপাতের নিচের অংশের সমনেই একটা চওড়া ঢালু অংশ আছে, জল জমে আছে সেখানে। জলে না নামতে চাইলে এই অংশ টুকু লাফিয়ে পার হওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই (মেয়েদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব)। শীতের সময় বলে আমরা এই অংশটুকু দেখতে পেলাম, বর্ষায় এর ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। শীতকাল হওয়াতে শৈলপ্রপাতের পুরটা হেঁটে দেখে আসতে পারলাম আমরা।



প্রপাতের শেষ অংশে এসে বেশ কয়েক ফুট নিচে জল গরিয়ে গিয়ে একটি মাঝারি আকারের পুকুরের মত হয়েছে, সেখান থেকে জল চলে যাচ্ছে পাহাড়ি ছড়া বা খাল হয়ে।



এই প্রপাতের জলই আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলির একমাত্র জলের উৎস, এই জলই ওরা পান করে, আবার এই জলেই চলে অন্যান্য সমস্ত কাজ‌ও।













প্রপাতের উপরে রাস্তার পাশে পাহাড়িরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরি নানা সামগ্রীর পশরা নিয়ে বসেছে পর্যটকদের জন্য, আর আছে নিজেদের উৎপাদিত ফল আর ফসলের আসরও। চাইলেই কিনে নিতে পারেন তবে অবশ্যই দরদাম করে।



ওরা যে আনারস বলবে মধুর মত মিষ্টি সেটা আপনি মুখেরও দিতে পারবেন না, আর কে মালটা বা কমলা বলবে চিনির মত মিষ্টি সেটা খেলে আপনার মাথার উকুনগুলি মাথা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে। তবে ভালো পাকা পেঁপে আর কলা খেতে পারে নিশ্চিন্তে। আজকে এগুলি খেয়েই পেট ভরান

আগামী পর্বে দেখা হবে নীলাচলে।

পূর্বের পর্বগুলি -

খাগড়াছড়ির পথে”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – আলুটিলা গুহা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – রিছাং ঝর্ণা”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – শতবর্ষী বটবৃক্ষ”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু”।

খাগড়াছড়ি ভ্রমণ – অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার”।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ – ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার”।

বান্দরবন ভ্রমণ – নীলগিরি”।

বান্দরবন ভ্রমণ – শৈলপ্রপাত”।

প্রথম প্রকাশ : ঝিঁঝি পোকা



এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।

বিষয়: বিবিধ

১২০৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

230366
০৪ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৩৭
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : সবি ভালো ! সাথে যুবতীর ছবিও অনেক সুন্দর !!!!
০৫ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:২১
177541
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : আচ্ছা
230426
০৪ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অসাধারন হয়েছে ছবিসহ বর্ণনা । ধন্যবাদ আপনাকে Thumbs Up
০৫ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:২১
177542
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : শুভেচ্ছা রইলো
230784
০৫ জুন ২০১৪ সকাল ০৭:৫১
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : ছবিগুলি সুন্দর হয়েছে Thumbs Up
০৫ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:২২
177543
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File