কৃষ্ণচূড়া বা রক্তচূড়া বা গুলমোহর

লিখেছেন লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু ০৫ মে, ২০১৪, ০৭:২০:৫০ সন্ধ্যা

কৃষ্ণচূড়া বা রক্তচূড়া বা গুলমোহর

কৃষ্ণচূড়া গাছের যে আরেক নাম গুলমোহর একথাটা অনেক কম লোকোই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। মনে হয় ঢাকায় যে সমস্ত ফুল গাছ দেখা যায় তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়ার স্থানই সবার উপরে। কৃষ্ণচূড়াই একমাত্র ফুল যাকে ঢাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তাতেই দেখতে পাওয়া যায়।



আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময় এখই, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন। কিন্তু দুনিয়ার অন্য প্রান্তের কৃষ্ণচূড়া কিন্তু আমাদের সময়ের সাথে মিল রেখে ফুল ফোটায় না, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সয়ম কৃষ্ণচূড়াকে ফুটতে দেখা যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ফোটে জুন মাসে আবার ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে ফোটে মে থেকে সেপটেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ফুটতে দেখা যায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, কিন্তু আরব আমিরাতে ফুটতে শুরু করে সেপ্টেম্বরে। এখানে ছোট্ট করে বলে রাখা যায়, কৃষ্ণচূড়া বা রাধাচূড়া কোনোটাই কিন্তু আমাদের দেশীয় গাছ বা ফুল নয়। এদের আদি উৎস বড় কৃষ্ণচূড়ার পূর্ব আফ্রিকা আর ছোটোকৃষ্ণচূড়া বা রাধাচূড়া এসেছে ওয়েস্ট ইণ্ডিজ থেকে।

প্রকৃতির খেলা দেখুন, কিছুদিন আগে ফুটেছে রক্ত রাঙ্গা পলাশ আর মান্দর। এদের দাপট শেষ হতে না হতেই এবার সেই লাল রঙ্গের লালীমা নিয়ে হাজির হয়েছে কৃষ্ণচুড়া। অবশ্য কৃষ্ণচূড়া যে শুধু লাল রং এর হয় তা নয়, প্রধাণত লাল হলেও কমলা লাল ও হলুদ রং এর হতে দেখা যায়। অনেকে লাল আর কমলা-লাল রং এর ফুলগুলিকেই কৃষ্ণচূড়া মনে করে আরা হলুদগুলিকে ভাবে রাধাচূড়া। আসলে রাধাচূড়া হলুদ বা হলদেলাল হয় ঠিকই, কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার সাথে এর প্রধাণ পার্থক্য হচ্ছে গাছের আকারের। কৃষ্ণচূড়া হয় বড় থেকে মাঝারি আকারের গাছ, আর রাধাচূড়া যাকে অনেক সময় বলা হয় ছোটো কৃষ্ণচূড়া সেটা হয় ছোটো আকারের গাছ। কবছর আগে ঢাকার (জিয়া) বিমান বন্দরের রাস্তার পাশে প্রচুর পরিমাণে এ‌ই রাধাচূড়ার গাছ লাগানো হয়েছিল। গেলেই দেখতে পাবেন ছোট ছোটো রাধাচূড়া গাছে কৃষ্ণচূড়ারই মতো দেখতে ফুল ফুটে আছে। অনেক বছর আগে মহেশখালীতে বেড়াতে গিয়ে আদিনাথ মন্দিরের নিচে যে মন্দিরটি আছে সেখানে বেশ বড়-সড় একটি রাধাচূড়া দেখেছিলা, জানিনা এখনো আছে কিনা। রাধাচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Caesalpinia pulcherrima।



রাধাচূড়া গাছ




রাধাচূড়া ফুল


আবার কনকচূড়া নামের আরেকটি ফুল আছে যা দেখতে অনেকটাই রাধাচূড়ার মতই হলুদ রং এর। ফোটেও একই সময়ে আর গাছটিও প্রায় কৃষ্ণচূড়ার মতই দেখতে।



কনকচূড়া গাছ


অনেক লোকই এই কনকচূড়াকে রাধাচূড়া বলে ভুল করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Peltophorum roxburghii।



কনকচূড়া ফুল


কৃষ্ণচূড়া গাছে উজ্জল সবুজ ঝিরি ঝিরি পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দান করেছে।

শুধু মাত্র সৌন্দর্য নয় বরং এর নিভিড় ছায়া উষ্ণ আবহাওয়ায় অনাবিল প্রশান্তি দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। গাছ যখন একটু বড় হয় তখন ডাল-পালা চারদিকে ছড়িয়ে দেয় মাটির দিকে মুখ করে। আমাদের দেশে শীত-গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে যায় অনেকটাই। প্রায় পত্রহীন গাছে গাছে বড় বড় থোকায় থোকায় ঝাপটে আসে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল। দূর থকে দেখা যায় শুধুই লালের লীলা, অল্প যা কিছু পাতা থাকে তা লজ্জায় লাল হয়ে মিলয়ে যায় লালের সাথেই।

কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো বড় চার থেকে পাঁচটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়ি গুলো প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৭ সেন্টিমিটারের মত চওড়া হতে পারে। পাপড়িগুলি এমন ভাবে মেলে থাকে মনে হয় যেন বাঘের থাবা।



খুববেশিসম্ভব এর জন্যই কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে Delonix regia। Delonix শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ delos আর onux থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ স্পষ্ট দৃশ্যমান থাবা। regis শব্দের অর্থ royal, তাই কৃষ্ণচূড়াকে রাজকীয় গাছো বলে পারেন। কৃষ্ণচুড়ার অনেক গুলি ইংরেজী নাম রয়েছে- - royal poinciana, flamboyant tree, flame tree, peacock flower ইত্যাদি।

অনেকে মনে করেন পৃথিবীর সবচেয়ে রঙ্গীন গাছ এই কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মে লাল রংএর ফুলে প্রায় নিষ্পত্র গাছ আচ্ছন্ন হয়ে গেলেও বর্ষা পর্যন্ত গাছে ফুলের রেশ থাকে।



রবি ঠাকুর বলেছেন;

“গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী

কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী।”



কৃষ্ণচুড়া গাছ যৌগিক পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। ফল শিমের মত চ্যাপ্টা ৩০-৬০ সে.মি. লম্বা।



বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। চারাগুলি দ্রুত বাড়ে আর কয়েক বছরের মাঝেই সে গাছে ফুল আসে। কৃষ্ণচূড়া গাছ আনেকটা যায়গা নিয়ে লাগানো উচিত। আর সব চেয়ে সুন্দর হয় যদি কৃষ্ণচূড়ার কাছাকাছিই এমন গাছ লাগানো যায় যাতে হরুদ বা নীল রংএর ফুল ফোটে। যেমন কৃষ্ণচুড়া আর কনকচূড়া কিংবা জারুল ইত্যাদি।

আমি যতটুকু জানি তার ভিত্তিতেই এই লিখা। আমার জানায় যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে জানানোর অনুরোধ রইলো, সেই সাথে সকল প্রকার ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।

সূত্রঃ

Click this link, Click this link, Click this link, Click this link, ও

দ্বিজেন শর্মার ফুলগুলি যেন কথা।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৬২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217851
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:১৫
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : ওয়াও সুন্দর তথ্য। অনেক অনেকে ধন্যবাদ
০৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৩২
166015
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় রোদ ভাই।
217861
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৮:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৩৩
166016
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় কবির ভাই।
217997
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৬:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার সংগ্রহ শালায় গিয়ে সেদিন বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছিলাম৷ ধন্যবাদ৷
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৬
166697
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
218376
০৭ মে ২০১৪ সকাল ০৯:১৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : সুন্দর লেখা, সুন্দর ছবি!
বড় হয়েছি কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বসে, খুবই ভাল লাগে তিনটি প্রজাতিই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছাঃ

০৭ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৭
166699
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : এক গোছা কৃষ্ণচূড়ার শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
218758
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৯:০৫
মনটা আমার বাঁধনহারা লিখেছেন : অনেক অনেক ভালো লাগলো। যখন দেশে ছিলাম আমার ঘরের জানালার সামনে বিশাল কৃষ্ণচূড়ার গাছ ছিল। সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। অনেক শুকরিয়া। Rose Rose Rose Rose
০৭ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৮
166700
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
218828
০৮ মে ২০১৪ রাত ০১:৩৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন : কৃষ্ণচূড়া নামটি কৃত্রিম নাম। উপমহাদেশে এটি গুলমোহ র নামেই পরিচিত। হিন্দি, উর্দুতে এটি গুলমোহর নামেই পরিচিত।

কনকচুড়া ও রাধাচূড়া মধ্যে যে কনফিউশন তার কারণ মনে হয়ঃ

মীরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনেনব্বইর দশকে কনকচূড়া গাছে ট্যাগ ছিল রাধাচূড়া হিসাবে। (এখন কোন গাছেই ট্যাগ দেখা যায় না, আবার টিকিট লাগে প্রবেশ করতে)।

ঢাকা ইউনিভারসিটির বোটানিক্যাল বিভাগের ভুল। তখনকার বোটানি পাঠ্যপুস্তকে ভুল।

অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর এই পোস্টের জন্য।

০৮ মে ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
166842
মরুভূমির জলদস্যু লিখেছেন : মাটির লাঠি ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তথ্যগুলি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File