পতিতাদের আসর
লিখেছেন লিখেছেন বাশার ০৬ জুন, ২০১৪, ০৩:৪৬:২১ দুপুর
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের আঙিনায় পতিতাদের হাঁট !
আহসান হাবীব (দিনার)
রেজা সাহেবের(ছদ্মনাম) এক ছেলে এক মেয়ে । বড় মেয়ে জিনিয়া আর ছোট ছেলে জীবন । জিনিয়া এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । তার মতে বড় হয়ে গেছে সে কিন্তু দুর্ভাগ্য যে নিজের জেলা শহর বাদে অন্য কোন শহরেই তার যাওয়া হয়নি তাই পরীক্ষা শেষে রাজধানী ঢাকা শহর দেখার ব্যাপারে এবার সে নাছোড়বান্দা ।
রেজা সাহেব ঢাকায় একটি প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত । সুযোগ পেলেই গ্রামে ছুটে যান স্ত্রী সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর জন্য । এবারও গ্রামে গিয়েছেন কিন্তু কর্মস্থল ঢাকা ফেরার সময়ই বেঁধে গেল বিপত্তি । মেয়ে জিনিয়া এবার কোন মতেই তাকে ছাড়ছে না, সে এবার ঢাকা যাবেই । স্ত্রীও সমর্থন করছে, তাই মেয়েকে নিয়েই ঢাকার পথে যাত্রা ।
সারাদিনের অফিস শেষ করে রেজা সাহেব মেয়ে জিনিয়াকে নিয়ে সন্ধ্যায় বেড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন দেখাবেন বলে। জিনিয়া অবাক হয়ে দেখছে পৃথিবীর এই অন্যতম স্থাপনা যেখানে বাংলাদেশের পবিত্র আইন রচিত হয় । ছোট থেকে শুধু বইয়ের পাতায় আর টেলিভিশনে যা দেখে এসেছে তা সামনে থেকে দেখতে পেয়ে তার আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এমন জায়গায় কি আর নাচা যায়!
সংসদ ভবনের পাশের ফুটপাত দিয়ে খামার বাড়ির মোড় থেকে মানিক মিয়া এভিনিউের দিকে হাঁটছিলেন বাবা মেয়ে । একটু সামনে যেতেই রেজা সাহেবের মুঠোফোন বেজে ওঠে, অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কল । কথা বলছেন তিনি এই সুযোগে জিনিয়া ফুটপাত থেকে নেমে সংসদ ভবনের রেলিং এর পাশে গিয়ে বাবার দিকে পিছন ফিরে দাড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখছে জাতীয় সংসদ ভবন ।
রেজা সাহেব কথা বলা শেষ করেছেন মাত্র এমন সময় আধুনিক পোশাক সজ্জিত এক তরুণী কামুক সুরে বলে উঠলেন, মাল লাগবো? ফোনে কার খোঁজ লাগাইছো? আমাগরে কি ভাল্লাগে না...আজ কাস্টমার কম টাকায় বাজবো না চলো... । শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন রেজা সাহেব । হাতে মেয়ে জিনিয়ার স্পর্শ পেয়ে যেন চমকে উঠলেন । তরুণীটি বলেই যাচ্ছে... ও...ও...ও এই পুচকি ছেমড়িরে নিছ আইজ! এই মাল তো দেহি নতুন... ওই কবে আইলি এই লাইনে...। অসহ্য যন্ত্রণায় যেন কাতরে উঠলেন রেজা সাহেব, শক্ত করে জিনিয়ার হাত ধরে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলেন। পেছন থেকে ভেসে আসছে তরুণীর কণ্ঠ... আসল মাল চিনলিনা হুদাই...।
রেজা সাহেব প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে তার এই অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছিলেন । পরবর্তী ঘটনার কথা বলতে বলতে তার চোখে পানি চলে আসে। তাকে থামিয়ে দেই... থাক আর না ।
এমন বিব্রতকর ঘটনার সম্মুখীন হয়তো অনেকেই হয়েছেন। কেউ আসলে চিন্তাই করতে পারেননা যে এমন জায়গায়ও এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। পাশেই এমপি হোস্টেল আর পুরো সংসদ ভবন এলাকা জুড়েই কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও কিভাবে এমন অসামাজিক কাজ এখানে এভাবে প্রকাশ্যে হচ্ছে তাই ভাবার বিষয়।
অনুসন্ধানে জানা গেল এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এভাবেই পতিতাদের হাঁট বসে থাকে। সাধারন কোন মানুষের পক্ষে এই ফুটপাত ধরে হাটাও কষ্টকর। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে ঘুরতে আসা মানুষজন। এসব পতিতারা ডিউটিরত পুলিশকে নানা ভাবে খুশি রাখে বলে জানায় ফুতপাতের দোকানিরা।
জানতে ইচ্ছা করলো উচ্চপদস্থ কোন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি জানে কিনা । নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানালেন, তারা বিষয়টি জানেন কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ করতে পাড়ছেন না তবে চেষ্টার কোন ত্রুটি করছেন না বলে জানালেন । আমি জানিনা কেমন সেই চেষ্টা আর কাকে বলে চেষ্টার ত্রুটি!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংসদ সদস্য বললেন, এখানে যে এমন হয় তা তো সবাই জানে । শুনে হতবাক, বলে কি !
বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এই জাতীয় সংসদ ভবন । আর এখানেই যদি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা হয় তবে সারা দেশের অবস্থা কেমন! দায়িত্বশীলদের বলতে চাই সাধারন মানুষের সাচ্ছন্দে পথ চলার অধিকার টুকু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না তাইলে দেখবেন একদিন হিতে বিপরীত হয়ে গেছে.
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন