হিমুভক্তের নিষেধাজ্ঞা!
লিখেছেন লিখেছেন সাকিব আযাদ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৩৬:১৮ রাত
ছেলে হয়ে জন্মানোর একটি প্রধান সুবিধা হল চলতি পথে প্রসাবের বেগ স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের ভাষায় ছোটটা চাপলে যে কোন জায়গায় দাড়িয়ে যাওয়া যায় তবে বিপত্তিটা ঘটে বড়টা চাপলে তখন আশপাশে মসজিদ বা হাসপাতাল খোজা লাগে। আমি বিগত কয়েক মিনিট ধরে একটা মসজিদ বা হাসপাতাল খুজে না পেয়ে অগত্যা গলির মাথার পাবলিক টয়লেটটাতে ঢুকে পড়লাম।কমটের সমতল অবস্থা দেখে বড়টা করার ইচ্ছা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। প্রসাবখানাতেই দাড়িয়ে গেলাম। দেয়ালে কেউ একজন লাল কালিতে লিখে রেখেছে 'বাতরুমে খারাপ কতা লিকা নিশেদ, কেউ লিকলে তার ....... কেটে দিয়া হবে!' আমার পাশে লুঙ্গি পরিহিত এক ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে, সে মাথা খানিকটা উঁচু করে হেলতে দুলতে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
-বাইজানের নাম কী?
-বাবু, আপনার?
-মারুফ, কী করেন?
-প্রসাব করি!
-কী যে কইন না, আমি জিগাইছি আফনে এমনিতে কি করেন?
-রাতের ঢাকা শহরে খালি পায়ে হাটি তবে আজকের দিনটা নিপাতনে সিদ্ধ, আজকে দিনেই বেরিয়েছি।
-ঢাকা শহরে নতুন? এক কাম হরেন আমার নাম্বারখান রাহেন, ঢাকা শহরে কুনো সমস্যা হইলে খলি একটা কল দিবাইন।
আমি নাম্বারটা সেভ করতে করতে পাবলিক টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলাম।
ম্যাসের দরজায় ধুপধাপ শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম সবগুলা কাটাই তিনের ঘরে তার মানে সোয়া ৩ টা বাজে। সাধারণত সকাল এগারোটাতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় তবে যেদিন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে সেদিন সারাদিনই ১১ টা! আমি ঘুম ঘুম চোখে কাথাটা কোমরে জড়িয়ে দরজা খুলতেই দেখি মুরাদ বিদ্ধস্থ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে! ঠিকানা কী করে পেল ঠিক বোঝা যাচ্ছে না তবে চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তার জীবনে বিশাল একটা ঘটনা ঘটে গেছে। মুরাদ হুড়মুড় করে আমার গায়ে পড়ে গেল। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে উঠল, 'বাবু বাই এই ঢাকা শহরে আফনে ছাড়া আমার কেউ নাই! আমার সাবিনারে বাচান!' আমি একটূ রিস্কি অবস্থায় পড়ে গেলাম কারণ কোমরে কাথার গিটটা শক্ত করে দেয়া হয় নাই আমি আস্তে করে আমার গার ওপর থেকে সরিয়ে খাটে বসিয়ে দিয়ে বললাম,
-আমি কীভাবে বাঁচাব, আমি তো উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম লীগের সভাপতি না! তার আগে ঘটনা খুইলা বল।
-বাই, আমার সাবিনারে মিউজিক ভিডিওর নায়িকা বানানোর কথা কইয়া ডিরেক্টর কাম নায়ক লিয়াকত খানে আমার সাবিনার সর্বনাশ কইরা দিছে। মোবাইলে রেকর্ড করা হেই ভিডিও নাকি টিউবলাইটে ছাইড়া দিব। ভিডিওডা ছাইড়া দিলে আমার আর আমার সাবিনার আত্নহত্যা করন ছাড়া আর কোন পথ থাকবো না।
-সর্বনাশ করে দেয়া ব্যাপারটা বোঝা গেল কিন্তু টিউবলাইট বিষয়টা কী?
-ওইযে ইন্টারনেট দিয়া যেই টিউবলাইট চালায়!
-ও, ইউটিউব!
আমি এখন ডিরেক্টর কাম নায়ক লিয়াকত খানের অফিসের নিচের চায়ের দোকানে একটা টুলে বসে 'ও বেবি ডোলাম সোনেদি' শুনছি আর লিয়াকত খানের জন্যে অপেক্ষা করছি। আমাকে এখানেই বসতে বলা হয়েছে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে পিছের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সপ্নে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথের সাথে দেখা, আমি বিচলিত ভঙ্গিতে কবিগুরুকে বলে উঠলাম,
-গুরু আপনার গান নিয়ে তো এখন মিউজিক ভিডিও হচ্ছে, সখি ভালবাসা কারে কয়!
-মিউজিক ভিডিও? সেটা আবার কী জিনিষ?
-এটাকে একধরনের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি বলতে পারেন এতে মোট ৪ টা ক্যারেক্টার থাকে, নায়ক-নায়িকা ও গায়ক-গায়িকা। এটির প্রথমাংশে নায়ক-নায়িকার কঠিন প্রেম তথা ফুচকা, ডাবের পানি বা আইসক্রিম খাওয়া দেখানো হবে এবং মধ্যমাংশে নায়িকার ক্যান্সার ধরা পড়বে এবং শেষাংশে ভালবাসার প্রমাণস্বরুপ নায়িকা মরার আগেই নায়ক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যাবে!
কবিগুরুর কাঁচাপাকা ভুরুজোড়া কুঁচকে উঠল। তিনি চিন্তাযুক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
-নায়িকার চেহারাটি নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর?
-গুরু এইতো ভূল করে ফেললেন, এখন তো চেহারা দেখিয়া সৌন্দর্য্য নির্ধারিত হয় না, ফিগার দেখিয়া হয়। ওই যে, আপনার একটি কবিতা আছে না? 'মুখের পানে চাহিনু অনিমেষে, বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা।' ওটার একটু কারেকশন দরকার!
-কী রকম?
-ফিগারের পানে চাহিনু অনিমেষে, বাজিল বুকে সুখের মত ব্যাথা!
সজোরে কাধ ঝাঁকানোতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, কবিগুরুও ফুট মারলেন। সাদা লুঙ্গি পরিহিত মাঝবয়েসী একজন আমার দিকে ঝুকে আছেন, ইনিই সম্ভবত লিয়াকত খান। তিনি বলে উঠলেন,
-আপনার সাথেই তো ফোনে কথা হয়েছিল, মিষ্টার বাবু?
-জ্বী।
-সমস্যা নেই, আপনাকে দিয়েই হবে।
-আমাকে দিয়ে ক্যামনে হবে? আমি কি মেয়ে নাকি? ইউটিউবে গেলে তো আমার আগে আপনিই আত্নহত্যা করবেন!
লিয়াকত খান সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলেন, কঠিন গলায় বলে উঠলেন, 'হু আর ইউ? কি মতলবে এসেছেন? আপনি জানেন, হু এম আই?' আমি সরু গলায় বলে উঠলাম, 'আপনার গ্যালারির লকটা খুলে এখনই মোবাইলটা আমার হাতে দিবেন নয়তো ভরা লোকের মাঝে লুঙ্গিটা টান দিয়ে খুলে নেব! প্রটেকশান আছে?' ডিরেক্টর সাহেব দরদর করে ঘামছেন। কাঁপা হাতে মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। অতি বিখ্যাত লোকদের এই এক সসমস্যা, তারা খুন-খারাবির হুমকিতে ভয় পান না কিন্তু অতি ছোটখাটো হুমকিতে বিচলিত হয়ে পড়েন। আমি নিজ দেহে বহু অপকর্ম ধারণকারী মোবাইলটিতে ফরম্যাট দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম।
আমাকে আমার ম্যাচ বাসা থেকে উঠিয়ে আনা হয়েছে। উঠিয়ে আনার কাজটি করেছে মারুফ ও সাবিনা। টানা ২ দিন যাবৎ মারুফ-সাবিনার দেড় রুমের ছোট্ট এই ভাড়া বাসায় আমি আটকে আছি। আমাকে এখান থেকে যেতে দেয়া হবে না! সারাজীবন এদের সাথেই কাটাতে হবে, ম্যাচের খাবার খেয়ে খেয়ে নাকি আমার শরীর খারাপ হয়ে গেছে! রান্নাঘরে সাবিনা খাসির মাংস রান্নায় ব্যস্ত, মারুফ গেছে কোল্ড ড্রিংকস আনতে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার চোখ ভিজে উঠছে। আমি কি মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি? আমি কাউকে না বলেই ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। হাটা ধরলাম পরিচিত রাস্তায় অপরিচিত গন্তব্যে।
মায়া বড়ই খারাপ জিনিষ। হিমুভক্তদের মায়ায় জড়ানো কঠিনভাবে নিষেধ।
বিষয়: বিবিধ
১১৪২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন