মেডিক্যাল রিপোর্ট নাকি মৃত্যুফাঁদ !!
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:২৩:৩২ সকাল
স্বামী - স্ত্রী দুজনেই স্তব্ধ হয়ে মুখোমুখি বসা। দুজনেরই চোখে জল। এতদিনের সাজানো গোছানো সংসার। ২ টা ফুটফুটে ছেলে আর ১ টা পরীর মত মেয়ে, এখনো স্কুলে যাচ্ছে। মা ছাড়া টিকবে কিভাবে এই সংসার?
চাকুরি করে বাবার পক্ষে সম্ভব না এই ৩ বাচ্চাকে মানুষ করা। নতুন মা এসে এই বাচ্চাগুলোর দেখাশুনা করবে, এটা ভাবাও আকাশ কুসুম কল্পনা। গতকাল মেডিকেল রিপোর্ট পাবার পর থেকেই দুজনের চোখে ঘুম নেই। হাসান আজকে অফিস ও যাননি। সকাল হতে শিলা পুরানো এ্যালবাম নিয়ে বসেছেন। নিজের আর বাচ্চাদের পুরানো ছবি দেখছেন, হাত বুলাচ্ছেন আর চোখের জলে ভেসেছেন। কাকে দোষ দেবেন? নিজের ভাগ্যকে নাকি ভাগ্যনিয়ন্তাকে?
বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে কোন কূল পাচ্ছেন না। নানী - দাদী ও নেই যে মরার আগে বাচ্চাদের উনাদের হাতে তুলে দিবেন। অবিবাহিত ছোট বোন ও নেই। এ পর্যন্ত সঞ্চয় যা করেছেন তা বাচ্চাদের উচ্চশিক্ষা বা মেয়ের বিয়ের জন্য ও যথেষ্ট না। গতকাল হতে বাচ্চাদের দিকে তাকাতে ও পারছেন না। আর কতদিন সময় আছে হাতে? ডাক্তার দিন দুয়েকের মধ্যেই অপারেশন করে ফেলতে বলেছেন। এরপর শুরু হবে কেমোথেরাপির সব কষ্টকর অধ্যায়। তখন ও কে দেখবে বাচ্চাগুলোকে? খুব কাছের আত্মীয় স্বজন ছাড়া কেউ জানে না এই ঘটনা। ওদের কেউ কেউ বাসায় এসে ঘুরে যাচ্ছে, সান্ত্বনা আর সাহস দিয়ে যাচ্ছে। শিলা জানেন এসব সান্তনার আসলে কোন মূল্য নেই। একটা কাগজ উনার ভাগ্য বলে দিয়েছে, শিলার ব্রেষ্ট ক্যান্সার। ডাক্তার সার্জারি করে রিমুভ করবেন বলেছেন, তারপর কেমো শুরু হবে।
পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। অপারেশনের ১ দিন আগে একজনের মুখে এই ঘটনা জেনে ভদ্রলোককে ফোন দিলাম। উনি আমার পরিচিত। উনি ফোনে কাঁদছিলেন। মেডিকেলের পশ্চিম গেটের একটা ল্যাব রিপোর্ট দিয়েছে ক্যান্সারের এবং ডাক্তার ও সহমত জানিয়ে অপারেশন টেবিলে উঠতে বলেছেন।
এরকম কিছু ঘটনা আগে থেকে শুনা থাকায় উনাকে খুব জোর করে অনুরোধ করলাম আর বুঝালাম অবিলম্বে ঢাকা এপোলো বা স্কয়ার হাসপাতালে আবার পরীক্ষা করতে, তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। আরও ২/১ জন একই পরামর্শ দিলেন। উনি রাতারাতি মত বদলে এপোলো চলে গেলেন।
যারা উপরের ঘটনা শুনে টেনশনে পড়েছেন, সুখবর হল টেস্টে নিরীহ ছোট একটা টিউমার ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। অপারেশন করে সেই টিউমার সরানো হয়েছে এবং গত ২/৩ মাস উনি ভাল আছেন।
গত কয় মাসে এরকম ৩/৪ টা ঘটনা আমার পরিচিত সার্কেলে ঘটেছে। ৩ জন উন্নত চিকিতসার অভাবে মারা গেছেন বা ভুল রিপোর্টে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন।
আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে হয়ত অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। চট্টগ্রামে আমরা আরও উন্নত চিকিৎসা সেবার অভাব বোধ করি। এবং এটাও মনে হয় সাধারন অসুখ বিসুখ ছাড়া জটিল কিছু হলে আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকলে সময় থাকতেই অন্তত ঢাকায় ও টেস্ট / চিকিৎসা করিয়ে কনফার্ম করে দেখা উচিত। সিস্টেমের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে মারা যাবার চাইতে চেষ্টা করে মৃত্যুবরন করা ভাল। এতে অন্তত জীবনে আফসোসটা থাকবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মৃত্য আসবে একদিন তা চির সত্য! তাই বলে রোগ শোকে হাত-পা ঘুটিয়ে বসে থাকার অবকাশও নেই!
সাধ্যমত সর্বাধিক চেষ্টা করেই যেতে হবে!
বাংলাদেশের প্রতিটা সেক্টরেই দূর্নীতি আর অব্যবস্হাপনা ছড়িয়ে আছে! স হজে এ থেকে মুক্তি মিলবে না মনে হয়!
কিন্তু সেখানে এপোলো বা স্কয়ার বা ইউনাইটেড বা সিকদার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বা ল্যাব এইডের মানের একটা হাসপাতালও নেই , এমন কি বিশ্বাসযোগ্য এনজিওগ্রাম করার ব্যবস্থাও নেই ! কিছু হলেই লটবহর সহ ঢাকায় চলে আসা - কি করে বড় লোকেরা বা সাধারন মানুষেরা ?
আর এসব বড় বড় হাসপাতাল কি ঢাকা ছাড়া নড়তেই চায় না ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন