প্রশ্নফাঁসঃ সর্বগ্রাসী এক ক্যান্সার
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৬:৩৩ সন্ধ্যা
১/
- পাপা ! মেয়ে ডাকল একটু অদ্ভুত গলায়।
- জি, মামনি।
- তুমি কি কালকের বিজ্ঞান প্রশ্ন পেয়েছ?
(চুপ করে আছি। ফেসবুকে কিছু প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। ইনবক্সে ২ জন পাঠিয়েছে। কি আছে, আমার জানা নাই, আগ্রহ ও নাই। আসল কি নকল প্রশ্ন তাও জানি না। ) আবার বলল,
- শুনো, তুমি পেয়ে থাকলেও আমাকে কিছু বলবা না। কোন হিন্ট ও দিবা না। তাহলে এ প্লাস পেলেও সারাজীবন আমার প্রাইডটা নষ্ট হয়ে যাবে। খুঁতখুঁত লাগবে।
আমার মাথা হতে বোঝা নামল, গর্বে বুক ফুলে গেল। যাক, এই বুঝটা যখন আছে ইনশাল্লাহ আর চিন্তা নাই।
ছাত্র ছাত্রীদের শুধু এই বোধটা থাকলেই কিন্তু আর প্রশ্ন ফাঁস হল কি হল না, কিছু আসত যেত না। ফাঁসকারীরা ঝুড়িতে প্রশ্ন নিয়ে বসে থাকত, কিন্তু কোন ক্রেতা থাকত না।
এই প্রশ্ন ফাঁস যখন ভার্সিটিতেও ভর্তির নিশ্চয়তা দেয় না, তবে শুধু ভি চিহ্ন আর মিথ্যা অহমিকা দেখাবার জন্য কেন এই ভাগ দৌড় !!
২/
১৯৯৪ - ( পরীক্ষার হল )
- এই মেয়ে, কথা বলার জন্য ১০ নম্বর কাটা হল।
- এই ছেলে, ঘাড় ঘুরানোর জন্য খাতা নিয়ে নেয়া হল, ২০ মিনিট পরে পাবে।
- অন্যের খাতা দেখে লেখার জন্য তোমার পরীক্ষা বাতিল।
- সারাবছর পড়ালেখা কর নাই? যতটুকু জান, তার উপর পরীক্ষা দাও।
২০১৪ - পরীক্ষার হল
- সবাইকে কিন্তু অবশ্যই এ+ পেতে হবে।
- এমসিকিউ তে অবশ্যই ৪০ এ ৪০ পেতে হবে। সবাই মিলিয়ে দেখে নাও।
- পরিদর্শক আসার আগেই কিন্তু সবাই সোজা হয়ে বসবে, ঠিক আছে?
- ঘণ্টার পর আরও ১০ মিনিট দিলাম, রিভিশন দিয়ে নাও, চেক করে নাও। কারো যাতে কিছু ভুল না হয়।
২০১৮ - পরীক্ষার হল
- সবাই অবশ্যই হলে বই নিয়ে আসবে।
- এই নাও, আগামিকালের পরীক্ষার প্রশ্ন।
- কিছু না পারলে টিচারকে জিজ্ঞেস করে লিখবে, কেমন?
- ১০০ তে ১০০ এর নিচে পেলে চলবে না। বিশ্বে আমরা সেরা শিক্ষিত দেশ হিসেবে পরিচিতি চাই, ঠিক আছে?
২০১৯ - শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশ্বে সর্বচ্চ এ+ পাওয়া এবং অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ এর বিশ্বের সর্বচ্চ পুরস্কার অর্জন। শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য এক মডেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে !!
৩/
গতকাল এক বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু খুব চিন্তিত,
- বুঝলি, চাচা ফোন করে বলেছে প্রশ্ন জোগাড় করে দিতে। উনার ছেলে পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
- বল যে, পাওয়া যাচ্ছে না।
- আরে না, উনি জানে। অনেকে পাচ্ছে আর ওগুলো মিলেও যাচ্ছে।
- বল, প্রশ্ন দিলে ছেলের নীতি, চরিত্র এগুলো এই বয়সেই খারাপ হয়ে যাবে। ছোটকালেই ভুলটা শিখবে আর শিখবে ২ নম্বরি করা জায়েজ।
- বলেছি। উনি বললেন, ছেলের মন খারাপ নাকি উনি সহ্য করতে পারেন না। অন্যরা এ+ পেয়ে আনন্দ ফুর্তি করবে, মিষ্টি বিলাবে আর উনার ছেলে না পেয়ে কষ্ট পাবে, এটা নাকি উনার ভাল লাগবে না।
- সারা বছর পড়ালেখা করায় নাই কেন?
- সবাই পাশ করে আর এ+ পায় দেখে উনি নাকি সিরিয়াসলি নেন নাই।
এই হল আমাদের অনেক অভিভাবকের অবস্থা। যারা স্ব উদ্যোগে প্রশ্ন জোগাড় করে ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দেন। পড়ালেখা না করিয়ে, নকল আর প্রশ্ন সাপ্লাই দিলে এই ছেলে বড় হয়ে চোর বাটপার, দুর্নীতিবাজ হবে না তো সাধু হবে?
মজার ব্যাপার দেখেছিলাম ১ম দিন পরীক্ষার সেন্টারে। সেদিন পরীক্ষা ভবনগুলোর বাইরে স্কুল কম্পাউনডে অভিভাবকরা অবস্থান করছিলেন। এদের অনেকে ঘুরে ঘুরে তাদের বাচ্চাদের পরীক্ষার হল রুমের বাইরে জানালার কাছে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিলেন। সাহায্য আর উত্তর বলে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই প্রবনতা রোধ করতে পরদিন হতে অভিভাবকদের স্কুল প্রাঙ্গনে ঢোকা / থাকা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আমরা কি আর ডাণ্ডার বাড়ি ছাড়া সোজা হবার জাতি?
ছোট্ট গল্প বলি। এক চোরকে পুলিশ তার বাবার সামনেই বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা কেঁদে কেঁদে বাপকে বলছিল,
- তুমি যদি আমাকে তোমার পকেট থেকে ৫/১০ টাকা নেবার সময়ই থামাতে আজকে আমার এই দুর্দশা হত না। তুমি তখন ছেলেমানুষি বলে উড়িয়ে দিয়েছ, উৎসাহ দিয়েছ। এখন আমি পরিনত হয়েছি বড় চোরে। তুমি কেমন বাপ, যে ছেলেকে চোর বানিয়েছ !!
আফসোস, একদিন এইসব নকল আর প্রশ্ন সাপ্লাই করা অভিভাবকদের ও এইদিন না ভবিষ্যতে দেখতে হয় !!
বিষয়: বিবিধ
১৪৯২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মেয়ে স্কুলে ৯০% এর উপরে পাচ্ছে। তাই প্রশ্নের প্রয়োজনীয়তাও অবান্তর। আর আমি ৬০% পেলেও কিছু বলব না ব্রেনে না কুলালে। সারাজীবন ওকে প্রশ্ন কে সাপ্লাই দিবে বলেন তো? নিজ পায়ে দাঁড়াবে কিভাবে? :
আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা এবং চুরি করে এ-প্লাস পাওয়ার প্রবণতা, দুটোই একদিন আমাদেরকে 'বিশ্ব জ্ঞান-বিকলাঙ্গ' জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। - ভালো বলেছেন।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড ভারত এবার আসল জায়গায় হাত দিয়েছে ।
আসলেই ভাল জায়গায় হাত দিয়েছে ভারত অনেক ধন্যবাদ
আমরা এগিয়ে যাইতেছি(অবশ্যই বিরাট গর্তের দিকে)!
প্রশ্ন ফাঁস হলে মায়েদের কত সুবিধা!! সারা দিন সিরিয়াল দেখতে পারবে। তাই তাদেরও আপত্তি নাই। আর ১০-১১ বছরের বাচ্চাকে যদি এরকম পরিক্ষা দিতে হয় তাহলে কি আর বলা!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন