ইরানি কন্যা রেয়হানা জব্বারিঃ পশ্চিমা মিডিয়া আর ফেসবুক সেলিব্রেটিদের রংধনু রূপকথা
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:০২:১৬ সকাল
প্লট হিসেবে ঘটনাটা দুর্দান্ত। পশ্চিমা মিডিয়া আর মানবতাবাদীদের লাফিয়ে পড়ার যথেষ্ট উপকরন সমৃদ্ধ। ইরানি ২৬ বছর বয়স্কা সম্প্রতি ফাঁসি হয়ে যাওয়া রেয়হানা জব্বারির কথা বলছিলাম। হয়ত এই ঘটনার উপর একটা হলিউডের সুপারহিট ফিল্ম ও দ্রুতই তৈরি হয়ে যাবে। অস্কার ও পাবে "আরগো" ছবির মত বেশ কয়েকটা।
উপকরনগুলো দেখি,
- আমেরিকা আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে মাথানত না করা একমাত্র দেশ ইরান। এত চাপ আর অবরোধ আরোপের পর ও যারা মাথা নামায়নি।
- এক সুন্দরী অসহায় তরুণী যার অভিযোগ হল এক ইরানি ইন্টেলিজেন্স অফিসার তাকে রেপ করার চেষ্টা করায় সে আত্মরক্ষার্থে তাকে খুন করেছে। ধর্মীয় আইনের মারপ্যাঁচের ব্যাপার আছে।
- ফাঁসির আগে মাকে এক আবেগপ্রবন চিঠি লিখে গেছে, যা পড়ে সবাই আবেগে আপ্লুত। এই চিঠির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ আছে।
গত ২/৩ দিন ধরে এই ঘটনা আর চিঠি অনলাইনে ভেসে বেড়াচ্ছিল। বাংলাদেশের পত্রিকায় আসা আত্মহত্যা, খুন, দুর্নীতি সব বাদ দিয়ে ইরানের এই ঘটনা নিয়েই একের পর এক স্ট্যাটাস দেখেছি। অনলাইন পত্রিকা হতে শেয়ার হয়েছে হাজার হাজার। একটু অদ্ভুত না?
কেস এর বর্ণনা হতে জানা যাচ্ছে, রেয়হানা জব্বারি
- মৃত্যুর ২ দিন আগে ছুরি কেনার কথা স্বীকার করেছেন।
- ছুরি পিঠের মাঝখানেও মারা হয়েছিল। আত্মরক্ষার্থে কেউ পিছন হতে ছুরি মারার ঘটনা বিরল
- রেয়হানার মোবাইল হতে এক বন্ধুকে পাঠানো মেসেজ টেক্সট এ ছিল - " আমি ওকে আজ রাতে হত্যা ও করতে পারি" কথাগুলো।
- রেয়হানা খুন হওয়া লোকটার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে আরও কয়েকজনের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। সে নাকি অর্থের বিনিময়ে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছে।
- খুন হওয়া অফিসারের বাসার দরজা লক ছিল না এবং রেয়হানা সহজে পালিয়ে গিয়েছিল।
- একটা ১৯ বছরের মেয়ের পক্ষে ছুরি মেরে পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক হত। একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষকে হত্যা করা তার জন্য সহজ ছিল না, প্ল্যান না থাকলে।
- অনেক বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও রেয়হানা এই লোকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে, বাসায় ও গেছে কবার। কারন হিসেবে উঠে এসেছে ইউরোপ ট্যুর আর গাড়ী ধার দেবার প্রতিশ্রুতি না রাখার ব্যাপার।
১৩ জন ইরানিয়ান সুপ্রিম কোর্ট বিচারক বিভিন্ন সময় এই কেসের সিদ্ধান্তে জড়িত ছিলেন এবং কেউ বিরোধিতা করেননি। ইরান সরকার এই কেসকে গুরুত্ব দেয়ায় ৭ বছর ধরে বিচার চলেছে।
এই সংবাদ আমেরিকা আর ইসরাইল মিডিয়া বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে, বেশ মজার ঠিক না? ডঃ আফিয়ার ব্যাপারে এইসব হলুদ মিডিয়ার ভাষ্য কি? গুগল সার্চ দিলে দেখা যায় ধর্ষণ এর ঘটনায় আমেরিকা শীর্ষে। এসবের কয়টা ঘটনা তাদের মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে? কয়টাতে অপরাধী যথার্থ শাস্তি পায়?
মালালাকে তৈরি করা এই পশ্চিমা মিডিয়া, আমেরিকা যখন ইরাক, আফগানিস্তানে বোমা মারে আর পাকিস্তানে দ্রোণ হামলায় কয়েক লক্ষ নারী -শিশুর মৃত্যুর কারন হয় তখন চোখের পানি ফেলেনা, কিন্তু এক ইরানিয়ান মেয়ের জন্য ভীষণ মায়াকান্নায় ব্যস্ত!!
লিঙ্কঃ http://www.avoiceformen.com/.../reyhaneh-jabbari-an.../
মাকে লেখা কথিত চিঠি - http://bangla.mtnews24.com/details.php?id=26695&page=2
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৫ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মিডিয়া যে বিষয় নিয়ে বেশী উৎসাহ নিয়ে ফাল পাড়বে,সে টা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ সঠিকতার মানদন্ডে। কেননা সঠিক কোন বিষয়ে ওদের আগ্রহ কমই দেখা যায়।
তবে,'আমেরিকা আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে মাথানত না করা একমাত্র দেশ ইরান। এত চাপ আর অবরোধ আরোপের পর ও যারা মাথা নামায়নি।' কথাটির সাথে একমত নয়।
তারা আফজানিস্থানে আক্রমনের সময় আমেরিকাকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে, এরাকে আমেরিকার তাবেদারি করেছে।
তলনামূলক বলা যায় আফগানিস্থানে তালেবানরা বরং অধীকতর আপোষহীন। ছিল।
আমার ধারনা সত্য হলো। ধন্যবাদ
বুঝলাম ভাই। কিন্তু একটা প্রশ্নতো সর্বদাই মাথায় ঘুরে। ইরান যদি আসলেই ইসলামী চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে থাকে, তাহলে কেন আজ পর্যন্ত কোন নির্যাতিত মুসলিম দেশের পক্ষে দাঁড়ালো না? আমি বিচ্ছিন্ন কিছু ব্যক্তি বা সংগঠনের কথা বলছি না, আমি রাষ্ট্রের কথা বলছি। কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে ইরান লড়াই করে না? সুদান, বসনিয়া সহ বিশ্বের অন্যান্য নির্যাতিত মুসলমানদের জন্যে তাদের ভূমিকা কি? যদি উত্তর আসে, তারা আগে নিজেরা যথেষ্ঠ পরিমাণে মজবুত হতে চায়, তাহলে আবার প্রশ্ন আসবে এটা কি জায়েয? এটা কি মুসলমানদের আচরণ?
ধন্যবাদ।
ইবনে তাইমিয়ার মাজমাউ ফাতাওয়াতে পড়েছিলাম, "যখন কোন মুসলিম দেশ আক্রমণের স্বীকার হয়, তখন প্বার্শবর্তী মুসলিম দেশের উপর ঐ দেশকে সাহায্য করা ওয়াজিব হয়ে যায়।" এ ব্যাপারটা তো সবারই জানার কথা, তাই না? ইরান তো গোপনে সাহায্য করলেও করতে পারতো। উল্টো ইরাক আক্রমনের সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে গেল।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, ওরা তো আহলে সুন্নাহ বা গঈরে শিআদের মুসলমানই মনে করে না। মুখে অনেক কিছু বললেও, ভিতরকার অবস্থা তাই বলে। ওদের কিতাবেই লেখা আছে, "শেষ যামানায় ইমামুজ্জামান আল মাহদী আবির্ভূত হওয়ার পর কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। প্রত্যেক নাসিবীকে (গঈরে শিআ বা আহলে সুন্নাহ)তার সামনে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি তাদের সাথে কথা বলবেন তরবারির ভাষায়। তিনি কবর থেকে আবু বকর, উমর ও আয়িশা (রাযি.) কে বের করে আনবেন এবং তাদের বিচার করবেন। তিনি বিনা হিসাবে নাসিবীদের কতল করবেন, গর্ভবর্তী মহিলাদের পেট চিরে বাচ্চা বের করে হত্যা করবেন। প্রকৃত কুরআন আনায়ন করবেন। শরীআতে মুহাম্মাদি রহিত করে নতুন শরিআ কায়েম করবেন। তিনি আহলে দিম্মাহর (আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি-নাসার) সাথে সন্ধি করবেন। তার অনুসারীরা বেশিরভাগই হবে ইসরাইলি।" (বিহার আল আনওয়ার, খন্ড-৫২, পৃ: ৩৪৯; বিহার আল আনওয়ার, খন্ড-৫২, পৃ: ৩৭৬; বিহার আল আনওয়ার, খন্ড: ৫২, পৃ: ৩৪৮; বিহার আল আনওয়ার, খন্ড: ৫২, পৃ: ৩৩৮; বিহার আল আনওয়ার, খন্ড-৫২, পৃ: ৩৪৬;বিহার আল আনওয়ার, খন্ড: ৫২, পৃ: ৩৪৮; আল মাহদী মিনাল মাহদ্ ইলাল দুহুর, পৃ: ৩৩৩-৩৩৭; আন নাযমুস সাক্বিব, পৃ:২৯৩; আল গাঈবালিল নু’মানী, পৃ: ২০০)
এখন একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে হবে। ওরা কি ধর্মীয়ভাবে আমেরিকা ইসরাইলের বিরোধীতা করে নাকি পলিটিক্যাল ভাবে। যদি ধর্মীয় ভাবে হয়, তাহলে এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে আহলে কিতাবরা ওদের ভবিষ্যৎ বন্ধু, আর আহলে সুন্নাহ অর্থাৎ মুসলমানরা ওদের শত্রু (সঙ্গত কারণেই ওদের মাহদী মুসলমানদের উপর কতলে আম চালাবে)। আর যদি পলিটিক্যাল কারণে হয়, তাহলে এই শত্রুতা যে ভবিষ্যতে বন্ধুত্বে পরিণত হবে না, তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে?
যতটুকু আমি বুঝি, শিআদের উপর আস্থা রাখার চেয়ে খ্রিষ্টানদের উপর আস্থা রাখাটা ভালো। অন্তত ওরা শিআদের মতো বন্ধুত্বের নামে পিঠে ছুরি মারে না।
ধন্যবাদ।
অথবা, এটাকে কি আমরা পলিটিক্যাল মূভ হিসেবে দেখবো? তাহলে তো বিপদ আরো বেশি। কেননা অতীতে দেখা গেছে, অনেকেই নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধীর জন্য মুসলমানদের পক্ষে গান গেয়েছে। নিজেদের কাজ উদ্ধার হলে আবার মুসলমানদের পেছনে লাথি মারতে ভোলেনি।
সুতরাং, আমরা কিভাবে বা কোন সূত্র ধরে ইরানের উপর নির্ভরশীল হবো বা ওরা আমাদের সহযোগীতা করবে সে আশা করবো? অতীতে তো কখনো এমন হয়নি। আর যদি এ দুটোর কোনটাই না হয়, তাহলে ওদের উত্থান বা পতনে আমাদের এমন কি বা এসে যাবে?
ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি, ইরান শক্তিশালী হলে আমাদের (মুসলমানদের) ভালোর চেয়ে মন্দ হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। কেননা, ওরা একদিন ইহুদি-নাসারাদের সাথে জোট বেঁধে মুসলমানদের পিছনে লাগবে। এর পূর্বাভাস ওদের কিতাবেই দেওয়া আছে।
একজন মুসলমানের প্রকৃত বন্ধু, সাহায্যকারী, সমব্যথি ও সহযোদ্ধা হতে পারে কেবল আরেকজন মুসলমান।
শেষে আবারো ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন