জুনিয়র মাস্টার শেফ (ছবি সহ মেয়ের রান্নাবান্নার কাহিনী) ২য় এবং শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন আতিক খান ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:২৩:১৪ রাত
তন্দুরি চমকঃ
এর বীজ রোপণ হয়েছিল অবশ্য বেশ কদিন আগে। জুনিয়র মাস্টার শেফ ১ম পর্ব লেখার পর হতে মেয়ে জুমানার রান্নাবান্না এমনিতে বন্ধ। বার্ষিক পরীক্ষা কাছে আসছে। লেখাটা ফেসবুকে আমার শালি পড়ছিল, ল্যাপটপ খোলা রেখে ও অন্যরুমে যেতেই পিচ্চি লেখাটা ও কমেন্টগুলো কোন এক ফাঁকে পড়ে ফেলল। সব উৎসাহব্যঞ্জক পরামর্শ আর কথাবার্তা দেখে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
- তোমার বন্ধুরা সব বলছে আমাকে রান্না করতে দিতে।
- হুম, কিন্তু মাম্মির সহকারি হিসেবে।
- কিন্তু আমার তো মাম্মির সাহায্য দরকার নেই!
- মানে! চোখ কপালে তুলে ফেললাম। বরফ গলল না। ‘ ১২ বছর হলে অল্প অল্প করে করতে দেব, ঠিক আছে? আর ২/৩ বছর অপেক্ষা করো’।
কদিন আগের ঘটনা। শেষ বারের মত ক্লাস টেস্ট চলছে। ২০ এ প্রতিটা বিষয়ের উপর পরীক্ষা। নম্বর ২০ বা এর আশেপাশেই থাকে। খারাপ হলে সাড়ে ১৮ বা ১৯ পায়। মার্কস এর উপর প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে। মা যেহেতু পড়ায়, প্রতিক্রিয়া সাথে সাথেই। ২০ - আইসক্রিম / চিপস (ওর অনুরোধ অনুযায়ী), ১৯ - বকা, ১৭/১৮ তীব্র বকা, ১৫/১৬ – ছোটখাটো ঝড়। ১৫ এর নিচে – সিডর, ক্যাটেরিনা ( অনুমান করছি)। অংক পরীক্ষা শেষে ঘরে ফিরতেই দেখলাম আসন্ন ঝড়ের আশঙ্কায় চোখমুখ অন্ধকার। বুঝে নিলাম।
- কয়টা ভুল হয়েছে? খাতা করে দিবে?
- টিচার করায়নি এমন অংক দিয়েছে, প্রায় সবাই ভুল করেছে।
- সবার কথা বাদ দাও, তোমার কথা বল।
- ম্লান মুখে বলল – মনে হয় ২ টা, ৪ নম্বর করে। এবারের মত বাঁচাতে পারবে না?
- ২০ এ ১২! আতঙ্কিত গলায় বললাম, মনে হয় না মামনি এই ঝড় থেকে শেল্টার দিতে পারব।
পরদিন হতে দেখলাম ওর চোখেমুখে দুষ্টবুদ্ধি। একবার কাছে এসে কানেকানে ফিসফিস করে বলল – এমন কিছু করা যায় না যাতে মাম্মি খুশি হয়ে এবারের মত ছেড়ে দেয়?
অন্যমনস্ক হয়ে বললাম, কি করতে চাও। বলল – সিক্রেট।
সন্ধ্যার পর আমি খেলা দেখা আর ফেবু নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। স্ত্রী দৈনিক আজাদির জন্য গল্প লিখছে। আম্মার মনোযোগ পত্রিকা আর টিভিতে। কিচেনটা আমাদের বাসার পুরো উলটো দিকে, লিভিং রুমের সাথে। ওদিকে কি হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। সাড়ে সাত টার দিকে মিনি ডাইনিং (এটা বেডরুমগুলোর সাথে, মেইন ডাইনিং কিচেন সংলগ্ন) এর পাশ দিয়ে গেলাম, সাজানো টেবিল দেখে খুশি হলাম। বাহ! আজ ভাল মেনু আছে মনে হয়। আটটার দিকে জুমানা ডাকল, মিনি ডাইনিং দেখে আমি পুরাই হতভম্ব।
আমাকে বলল – খেয়ে খুশি হলে এবারের মত ছেড়ে দেবে না?
আমি অবশ্য বেশি চমকে গেছি ওর টেবিল পরিবেশন দেখে।
মেনুতে আছে – ১। ফ্রাইড রাইস ২। তন্দুরি চিকেন ৩। প্রন কারি ৪। থাই সুপ ৫। সালাদ ৬। কোক
তন্দুরি চিকেনটা গ্যাস বারনারে করা। আম্মা বললেন – সারা জীবন ওভেনে করে এসেছি, ওর সাহস দেখেছ সোজা গ্যাসের চুলায় বানিয়ে ফেলল। বলাই বাহুল্য খাবারে প্রীত হয়ে মাম্মি উল্টা আদর করে দিল।
মর্নিং শোজ দা ডে - বিশ্বাস করলে মনে হচ্ছে এই মেয়ে নিচের ৩ টার একটা হবে,
১। রেস্টুরেন্টের মালিক / মালিকের বউ হয়ে ওটা চালানো।
২। মিডিয়াতে রান্নাবান্নার শো পরিচালনা
৩। রান্না বান্না জাতীয় ফোরামের এডমিন হওয়া...........
বললাম মামনি আমাকে রেসিপি দাও, কেউ চাইলে দিতে হবে –
উত্তর এল – রেসিপি দেখে রান্না আমার নীতিবিরুদ্ধ, এগুলো আমার রেসিপি ।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৪ বার পঠিত, ৬১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
@ হারিকেন মনি ...
@ আফরা মনি ....
@রাইয়ানমণি.... আপনিও কি বেইজ্জতী করলেন?
অফটপিকঃ ২০ এ ২০ না পেলেই বকাবকি করা ঠিক নয়। রেজাল্ট নয় দেখুন বিষয়টি সে সত্যিই আত্মস্থ করতে পেরেছে না মুখস্ত করে সর্বোচ্চ নাম্বার পাচ্ছে। রান্নাটা যেমন না শিখালেও শিখেনিয়েছে ভালই।
মন্তব্যটি করার সময় আমারও খুব হাসি এসেছিলো।
@সূর্যের পাশে হারিকেন ভাইয়া, মোমবাতিটা কে?
আর মোমবাতি, হারিকেনের আরাধ্য প্রেমিকা
@আতিক ভাইয়া........ আপনার পরের মন্তব্যে'র জন্য এই নেন
@বেশিক্ষনের যাত্রী ভাইয়া ......... হারিকেনের জীবন চলার পথের সাথী হয়ে কেউ আসলে ওর নাম হবে 'মোমবাতি' ট্যাইটেলটা কিন্তু আতিক ভাইয়ারই দেয়া... তাই আতিক ভাইয়াকে হাতুড়ি পেটা করার সাথে সাথে বুকে জড়িয়ে নিই
দ্বিতীয়ত , আপনার মেয়েটি চৌকস , মাশা আল্লাহ ! রাঁধা এবং চুল বাঁধা ( রূপক অর্থে ) দুটোতেই সে সমান পারদর্শী হয়ে উঠবে , কারণ .. মর্নিং শোজ দ্য ডে ....
তৃতীয়ত , আপনার অনবদ্য লেখার প্রশংসা আজ আর না ই বা করলুম .... !
এতো আয়োজন খাবারের.........!
আমাদের কে এক দিন দাওয়াত করলে হয় না!!
ওর জন্য
তবে এতটা স্বাধীনতা দিবেন না প্লীজ! একা যেন কিচেনে না যায়। ভাবীকে বলবেন উৎসাহ দিতে এবং বুঝাতে যে মাকে ছাড়া কিচেনে যাওয়া ঠিক নয়। প্রয়োজনে আপনিও বুঝাবেন।
বকা দিলে আবারও একা যাবে। আর মা যদি সাথে থেকে উৎসাহ দেয় তবে সে মাকে ছাড়া কিচেনে যাবেইনা। তবে এখানে একটা শর্ত আছে; তা হল মা কোন কিছুই বলবেনা। নিরব দর্শক হয়ে থাকতে হবে। তবেই সে ভরসা পাবে।
জুমানা মামণিটাকে আমার পক্ষ থেকে অনেক আদর জানিয়ে দেবেন।
আপনার লেখালেখি শ’ থেকে হাজারে ছাড়িয়ে যাক। শততম পোস্টে অভিনন্দন ভাইয়া আপনাকে।
(সবচে বড় উদাহরন, খালেদা / হাসিনার ২৪ বছরে দেশের উন্নতির ব্যাপারে একমত হতে না পারা : )
মন্তব্য করতে লগইন করুন